শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > নিত্যপণ্যের বাজার বেসামাল

নিত্যপণ্যের বাজার বেসামাল

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হরতাল, রাজনৈতিক কর্মসূচি, অস্থিরতায় বেসামাল নিত্যপণ্যের বাজার। পণ্যের দামে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। নানা ছুতোয় প্রতিদিনই বাড়ছে কোন না কোন পণ্যের দাম। রাজনৈতিক ডামাডোলে বাজারে দৃষ্টি নেই কারও। পিয়াজের দামে সেঞ্চুরি হয়েছে আরও আগেই। রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে অত্যাবশ্যকীয় এ পণ্যটি। চাল, ডালের দামও বেড়েছে। হরতালের কারণে অনেকটা বেসামাল কাঁচা পণ্যের বাজার। মাছ-মাংসের দামেও উল্লম্ফন। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে দাম বাড়ার এ চিত্র।

ভারত আরও এক দফা দাম বাড়ানোয় পিয়াজের দাম সহসা নিয়ন্ত্রণে আসার সম্ভাবনা দেখছেন না ব্যবসায়ীরা। তারা জানিয়েছেন, প্রতিটন পিয়াজ ৯০০ ডলারে এলসি করার পর হঠাৎ করেই টনপ্রতি মূল্য ১১৫০ ডলার নির্ধারণ করে ভারত সরকার। এতে ভারতীয় পিয়াজ রপ্তানিকারকরা আগের এলসি বাতিল করে দেন।

বাংলাদেশের আমদানিকারকরা অনেকটা বাধ্য হয়েই নতুন ঋণপত্র (এলসি) খুলে পিয়াজ আমদানি শুরু করছেন। তবে বর্ধিত এ অংশ বর্তাবে সাধারণ ক্রেতাদের ওপর। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী নেতা হেলাল উদ্দিন জানান, ভারতের এ সিদ্ধান্তে পিয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে। গতকাল রাজধানীর বাজারে প্রতিকেজি পিয়াজ বিক্রি হয়েছে (বাজারভেদে) ৯০ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত। গত শনিবার থেকে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) প্রতি কেজি পিয়াজ ৬৫ টাকায় বিক্রি শুরু করে। কিন্তু এর কোন ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি বাজারে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে টিসিবির পিয়াজ কিনতে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। তবে প্রয়োজনের তুলনায় টিসিবির পিয়াজ পর্যাপ্ত ছিল না বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত সরকারের বেঁধে দেয়া সাড়ে ১১০০ ডলার মূল্যেই পিয়াজ আমদানি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা।

হিলি স্থলবন্দরের কাঁচামাল আমদানিকারক গ্রুপের আহ্বায়ক হারুন-উর-রশিদ হারুন বলেন, ভারত সরকার পিয়াজ রপ্তানিতে লাগামহীনভাবে মূল্যবৃদ্ধি করায় আমাদের দুই শতাধিক পিয়াজ বোঝাই ট্রাক ভারতে আটকা ছিল। তবে দেশে পিয়াজের সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে ১১৫০ ডলার মূল্যেই আবার পিয়াজ আমদানি করেছি। ভারত থেকে আমাদের বেশি দামে পিয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে, এতে দেশের বাজারে পিয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে। ভারত সরকারের বাংলাদেশে পিয়াজ রপ্তানিতে দফায় দফায় মূল্য বৃদ্ধি করায় পিয়াজের আমদানি মূল্য বেড়ে গেছে। এর ফলে হিলি স্থলবন্দরের পিয়াজের আড়তগুলোতে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

প্রায় অভিন্ন চিত্র চাল, ডাল ও অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও। গত কয়েক দিনে চালের দামও বেড়েছে।

নিম্নমানের মোটা ইরি চালের দামও এখন ৪০ টাকার কাছাকাছি। একটু ভাল মানের নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৬০ টাকায়। মিনিকেট চালের দাম ৪৫ থেকে ৫২ টাকা কেজি।

এক সপ্তাহ আগে যে মোটা চাল ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় পাওয়া যাচ্ছিল, গতকাল সে চাল ৩৬ থেকে থেকে ৩৮ টাকায় বিক্রি হয়। এ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যায় ব্যবসায়ী বাবুল জানান, চালের উদ্বৃত্ত জেলা দিনাজপুর, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, বগুড়া থেকে চাল এখন কম আসছে। সরবরাহ কম থাকায় পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যদিও খুচরা বিক্রেতারা কেজিতে বাড়িয়ে দিয়েছেন ৬ থেকে ১০ টাকা। ঈদ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামনে আমন ধান কাটার মওসুম। তার আগে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর প্রায় তিন কোটি টন চালের প্রয়োজন হয়। সরকারি হিসাবে এবার উৎপাদন হয়েছে চাহিদার তুলনায় ২০ লাখ টন বেশি। ফলে বিদেশ থেকে কোন চাল আমদানি করা হয়নি। কিন্তু ব্যবসায়ীদের দাবি, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ এখন অনেক কম। এর কারণ হিসেবে আদমশুমারির ভুলের কথা উল্লেখ করেন তারা। গবেষকদের মতে, দেশের প্রকৃত জনসংখ্যা সরকারি হিসাবের তুলনায় অন্তত দুই কোটি বেশি। ফলে তিন কোটি টনের বিপরীতে তিন কোটি ২০ লাখ টন চাল উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও সরবরাহ সন্তোষজনক হচ্ছে না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে বলেও জানান তারা।

রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে চলতি সপ্তাহে সব ধরনের ডালের দাম আরেক দফা বেড়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, পরিবহন সঙ্কটে সরবরাহ কমায় দামে প্রভাব পড়েছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মুগ-মসুরের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা। খুচরা ডাল ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের পর সব ধরনের ডালের দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল খুচরায় প্রতি কেজি দেশী মসুর ডাল ১২০ থেকে ১২৫, নেপালি ১১০ থেকে ১১২, বোল্ডার মসুর ৭৮ থেকে ৮২ ও মুগডাল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পুরান ঢাকার পাইকারি ডাল ব্যবসায়ীরা জানান, দুই সপ্তাহ আগে নেপাল থেকে আমদানিকৃত প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ছিল ৯৮ থেকে ১০০ টাকা। গতকাল তা ১০৮ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়। আর দেশী মসুর ডালের দাম ছিল ৮৮ থেকে ৯০ টাকা, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০২ টাকায়। একইভাবে ৬৫ টাকার বোল্ডার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭২ টাকা, ১০১ থেকে ১০৩ টাকার মুগডাল ১১৮, ৩২ টাকার খেসারি ৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে হরতালকে ঘিরে গত দুই সপ্তাহ ধরে কাঁচা পণ্যের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। অনেক পণ্যে দাম বেড়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করা হচ্ছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতিকেজি বেগুন ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, শসা ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা, লাল শিম ৮৫, সবুজ শিম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, ঝিঙ্গা ৭০ টাকা, মুলা ৪০ থেকে ৫৫ টাকা, আলু ১৮ থেকে ২২ টাকা, গাঁজর ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫৫ টাকা, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, টমেটো ১১০ থেকে ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। অথচ হরতালের আগের দিন এ সব পণ্যের দাম প্রকারভেদে ২০ থেকে ৪০ টাকা কম ছিল। কাঁচামাল ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন জানান, পণ্য সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে। এছাড়া হরতালের কারণে ক্রেতার অভাবে বেশ কিছু সবজি জাতীয় পণ্য পচে যাওয়ায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে অবশিষ্ট পণ্য। এছাড়া মাছের দামে বিশাল উল্লম্ফন দেখা গেছে।