রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > রাজনীতি > নিজেদের মধ্যে কোন্দল মেটাতেই অস্থির আওয়ামী লীগ

নিজেদের মধ্যে কোন্দল মেটাতেই অস্থির আওয়ামী লীগ

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত। এমনকি দলীয় কর্মসূচিও পৃথকভাবে পালন করা হয়। আধিপত্য বিস্তার ও নিজ নিজ বলয়ের শক্তি প্রদর্শন করতে প্রায়ই সংঘর্ষে জড়ান নেতা-কর্মীরা। বিষয়টি বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে দলের সিনিয়র নেতাদের দৃষ্টিতে আনেন সাংগঠনিক সম্পাদক ও মাদারীপুর-৩ আসনের এমপি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। সিনিয়র নেতারা বিষয়টিতে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার দেওয়ার পরামর্শ দেন। দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের এমন ‘নালিশ’ ও সিনিয়র নেতাদের দলীয় প্রধানের কাছে ‘বিচার’ দেওয়ার পরামর্শই প্রমাণ করে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের অবস্থা এখন কতটা করুণ। শুধু মাদারীপুরই নয়, এমন অবস্থা প্রায় সারা দেশেই। কেন্দ্রের কঠোর হুঁশিয়ারির পরও থামছেই না তৃণমূল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। দলের সিনিয়র নেতারা নিরসন করতে পারছেন না অনেক জেলার কোন্দল। শেষ পর্যন্ত দলের সভানেত্রীর কাছেই যাচ্ছে নালিশ। স্বার্থ আর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থেকে বের হতে পারছেন না দলটির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতা-কর্মী। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছাড়াও খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়েছেন তারা। আধিপত্য বিস্তারের লড়াই অন্তর্দলীয় কোন্দলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শত্রু এখন আওয়ামী লীগই। অন্তঃকোন্দলের কারণে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষও। এমনকি সাংবাদিককেও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গত ছয় মাসে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রায় ২০ নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।

সূত্রমতে, বিরোধী দল সক্রিয় না থাকায় অনুপ্রবেশকারীসহ সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা ব্যক্তিগত নানা সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিতে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং দলীয় পদ-পদবির লোভে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে নিজ দলের নেতা-কর্মীকেও খুন করছেন। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও দ্বন্দ্ব সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে। অনুপ্রবেশকারীদের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে গত সাড়ে আট বছরের চাপা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে কোন্দল এখন প্রতিদিনই প্রকাশ্য রূপ নিচ্ছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম বিভিন্ন সংগঠনের ওপর যেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে দলটি। দলের শুভাকাঙ্ক্ষীরা একে দলের চেন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার উপক্রম হিসেবে দেখছেন। রাশ টেনে ধরতে হিমশিম খাচ্ছেন নেতারা। ছাত্রলীগ একের পর এক অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়ছে। এমনকি পেয়ারা নিয়েও নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে তারা।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে চলতি মাসে এ পর্যন্ত কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। আর গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ২০ নেতা-কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গত আট বছরে সাড়ে ৩ শতাধিক নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এ কারণে তৃণমূলের সাংগঠনিক রাজনীতি অনেকটাই নাজুক হয়ে পড়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় নিশ্চিত করতে তৃণমূলের এসব দ্বন্দ্ব, কোন্দল, বিবাদ-বিরোধ দ্রুত সময়ের মধ্যে দূর করা না হলে আওয়ামী লীগকে মাশুল দিতে হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

মঙ্গলবার রাতে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সজীব দত্তের ছুরির আঘাতে খুন হয়েছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের অর্থ সম্পাদক আবদুল মান্নান (২৭)। বুধবার রাতে নওগাঁর বদলগাছীতে প্রতিপক্ষে সামিউল আলম লিটন নামের সাবেক ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা নিহত হন। বুধবার মাদারীপুরে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। দুই প্রভাবশালী নেতার অনুসারীরা এ সংঘর্ষে জড়ান।

৪ জুন সাভারে সি এম বাদশা ফয়সল নামে এক যুবলীগ নেতা নিহত হয়েছেন। ১০ জুন মুন্সীগঞ্জ সদরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মো. মাসুদ (২২) নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া এ ঘটনায় আরও তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। চরকেওয়ার ইউনিয়নের দক্ষিণ চর মশুরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ১৮ জুন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা বাজারে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে শাহাবুদ্দিন শাহিন (২৮) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হন। বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটের এম সি কলেজে ছাত্রলীগ অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে। এতে ব্যাপক ভাঙচুর চালান কিছু উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মী। ১৮ এপ্রিল রাতে কুমিল্লার মুরাদনগরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য আলী আশরাফ এবং আলাউদ্দিন আনিস গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আওয়ামী লীগ কর্মী ফারুক ও সাইদুর নিহত হন। একই দিনে ফরিদপুরের সালথায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। ১৬ এপ্রিল শরীয়তপুরের নড়িয়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হন। এ ছাড়া ১০টি ঘরবাড়ি ও ৫টি দোকান ভাঙচুর হয়। এর আগে গত বছর ২০ জুলাই শরীয়তপুরের নড়িয়ার জবসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান শওকত আলীর সমর্থকরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেন হাওলাদারকে কুপিয়ে হত্যা করেন। গত ১৭ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় একটি জলমহাল দখলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হন। ১০ জানুয়ারি আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজ সিকদার এবং সাবেক চেয়ারম্যান শফিউদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে হোসেন খাঁ নিহত হন।

সূত্র : বিডি প্রতিদিন