বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের সাংবিধানিক নিশ্চয়তার কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু নারীরা পুরুষশাসিত সমাজে জীবনের সব পরিমণ্ডলেই বৈষম্যের শিকার হয় আজ।
নারীরা পুরুষের সমান কাজ করলেও বেতনের দিক থেকে বৈষম্যের শিকার হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা পুরুষের সমান কাজ করলেও বেতন পান পুরুষদের অর্ধেক।
সম্প্রতি, ব্রিটেনভিত্তিক আন্তর্জাতিক এনজিও অক্সফামের একটি প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
অক্সফামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিগত এক দশকে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের লক্ষ্যে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ বাড়তি শ্রম যুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৫০ লাখই নারী শ্রমিক।
২০০৫-০৬ অর্থবছরে শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে নারী শ্রমিকের সংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ; যাদের মধ্যে প্রায় ৭৭ শতাংশ গ্রামীণ নারী।
আর তারা কৃষি, পশুপালন, হাঁস-মুরগিপালন, মাছচাষ ইত্যাদি কৃষিকাজে নিয়োজিত থাকেন।
১৯৯৯-২০০০ থেকে ২০০৯-১০ পর্যন্ত কৃষি, বন ও মৎস্য খামারে নারী শ্রমিকের সংখ্যা ৩৭ লাখ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৮০ লাখে উন্নীত হয়েছে।
শ্রমশক্তিতে নারীদের বর্ধিত অংশগ্রহণের পরেও পুরুষের তুলনায় তারা কম মজুরি পাচ্ছেন।
নারী কৃষকেরা কর্মক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন। ১৯৭১ সাল থেকে এ পর্যন্ত নারী উন্নয়ন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় নারীরা পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য এবং জাতির জন্য ভূমিকা পালন করতে গিয়ে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন।
দারিদ্র্য ও ক্ষুধার বিরুদ্ধে সংগ্রামে নারীর অবদানের স্বীকৃতি পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তেমন উল্লেখযোগ্য মাত্রায় উচ্চারিত হয়নি। কৃষিতে নারীদের অবদান অবৈতনিক পারিবারিক শ্রম হিসেবে গণনা করা হয়; যদিও নারীরা খামার এবং পরিবারের উৎপাদনের জন্য দ্বিমুখী চাপ সহ্য করেন।
কৃষিতে নারীর অবদান, ব্যক্তিগত ও জনজীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে অবদানের মতোই চূড়ান্তভাবে অবমূল্যায়িত হয়। বর্তমানে নারীর কৃষি-মজুরি পুরুষদের তুলনায় ৪১ শতাংশ কম।
সমান অধিকারের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা সত্ত্বেও এ দেশে পুরুষ ৯৬ শতাংশ জমির মালিক। অন্যদিকে, নারীরা মাত্র ৪ শতাংশ জমির মালিক।
পুরুষ রাজমিস্ত্রির সহযোগিতা করেন শুরবানু বেগম।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, কাজ তো পুরুষ মানুষের মতোই করি। তবে হেরা টাকা বেশি পায়, আমাগো দ্যায় কম।
কম টাকা নিয়ে কাজ করেন কেন? এমন প্রশ্নে একটু রেগে গিয়ে তিনি বলেন, কাজ না করলে তাহলে চলবো ক্যামনে! পেটের খাবারের জন্যই তো ঢাকায় এসে মাথায় করে পুরুষের মতোই ইট টানছি।
রাজধানীর বারিধারার নতুনবাজার এলাকায় নারী-পুরুষের শ্রম বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষের সঙ্গে কাজের উদ্দেশ্যে এসেছেন বিভিন্ন বয়সী নারী।
এ সময় কথা হয়, লায়লা বিবির (৩৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, ৫/৬ বছর ধরে ঢাকায় এসেছি। স্বামীর সঙ্গে আমিও কাজ করি। তয় হের সমান ট্যাহা দেয় না। স্বামীর ট্যাহায় ঢাকায় চলে না। তাই, আমিও প্রতিদিন কাজে যাই। পুরুষের মতো ট্যাহা পেলে আমাদের কোনো কষ্ট থাকতো না।
লিপি আক্তার (২০) বলেন, পুরুষের সমাজে আমাগো হগলতি ঠগায় (সবাই ঠকায়)। বিয়ের পরে বাবা যৌতুক দিতে পারে নাই। তাই, এক ছেলে রেখে স্বামী তালাক দেয়। গরিব বাবার ঘরে কয় দিন থাহুন যায়! হের লাইগা ঢাকায় আইছি কাজ করতে।
তিনি আরো বলেন, কাজ করি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। কিন্তু, বেতন পাই পুরুষের চেয়ে অনেক কম।
অক্সফামের পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি বিভাগের ম্যানেজার মনীষা বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, নারীরা কাজে পিছিয়ে নেই। তবে মূল্যায়নের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। নারীরা শ্রমের মূল্য থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে অবমূল্যায়ন, হয়রানি ও বৈষম্যের শিকার হন।
তিনি আরো বলেন, জাতীয় ও পরিবার পর্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তায় নারী কৃষকদের অবদানের ওপর জনসচেতনতা সৃষ্টি করা, স্বীকৃতি প্রদান এবং নারী কৃষকদের অধিকার রক্ষা ও প্রচারের ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নীতি নির্ধারক প্রভাবিত করার লক্ষ্যে অক্সফামের উদ্যোগে সারা বাংলাদেশে ১৯টি সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে ৭ জন নারী কৃষক নির্বাচন করা হবে।
মনীষা বলেন, জাতীয় পর্যায়ে তাদের স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নারী কৃষকরা তাদের এলাকায় নারী কৃষকদের উৎসাহিত করবেন। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম