শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ রোল মডেল

নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ রোল মডেল

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর তিনটি সরকারের আমলে দেশে নারী জাগরণে বিপ্লব ঘটেছে। বর্তমানে সংসদের চারটি শীর্ষ পদেই নারী রয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব স্তরে নারীর ক্ষমতায়ন বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে রোল মডেলের খ্যাতি এনে দিয়েছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর বেইলি রোডে বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নবনির্মিত ভবন উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. চৌধুরী মোহাম্মদ বাবুল হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেন। সমিতির সভাপতি সিতারা আহসান উল্লাহ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদিকা তানিয়া বখত প্রধানমন্ত্রীকে মহিলা সমিতির পক্ষে ক্রেস্ট উপহার দেন এবং অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা, সংসদ সদস্যরা, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা, কূটনৈতিক মিশনের সদস্যরা এবং উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জাতির পিতার সাড়ে তিন বছরের শাসনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে শেখ হাসিনার পরিচালিত তিনটি সরকারের সময়ে দেশে নারী জাগরণে বিপ্লব ঘটেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জাতীয় সংসদ, স্কুল-কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিমান বাহিনীর পাইলট থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, তথ্য-প্রযুক্তি, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গণমাধ্যম, ক্রীড়াজগৎ কিংবা এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণসহ সব চ্যালেঞ্জিং কাজে দেশের নারীদের পেশাদারিত্ব প্রশংসনীয়। তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর আমার সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে সংরক্ষিত আসনে নারী কাউন্সিলর এবং পরবর্তীকালে উপজেলা পর্যায়ে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখন ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি। নারী শিক্ষকের সংখ্যাও বেশি।’ দেশে নারী অগ্রগতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার একজন নারী এবং তিনি কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। জাতীয় সংসদ নেতা, উপনেতা ও বিরোধীদলীয় নেতাও একজন নারী। সংসদের মূল চারটি পদেই নারী নেতৃত্ব বর্তমান। জানি না এমন অবস্থা আর কোথাও কোনো দিন হবে কি না।’

শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের নারী নীতিমালা প্রণয়ন, নারী উন্নয়ন, নারীর কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারণ, দরিদ্র, অবহেলিত নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসা এবং সর্বোপরি তৃণমূলের প্রান্তিক জনপদ থেকে শুরু করে সব নারীর ক্ষমতায়ন বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে ‘রোল মডেল’-এর খ্যাতি এনে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘পুলিশের এসপি পর্যায়ে ’৯৬-পরবর্তী সময়ে যখন একজন নারীকে পদায়ন করা হয় তখন ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। পরে ওই পুলিশ কর্মকর্তা এক ডাকাত সর্দারসহ বড় একটি গ্যাংকে গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হয়েছিলেন।’ প্রধানমন্ত্রী মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ স্ববেতনে চার থেকে ছয় মাস এবং জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যের আসন সংখ্যা বাড়ানো এবং নারী উদ্যোক্তাদের ৫ থেকে ৬ শতাংশ কম সুদে ঋণ দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ মহিলা সমিতিকে বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের পুরোধা উল্লেখ করে এ সংগঠনের শীর্ষ দুই নেত্রী প্রয়াত ড. নীলিমা ইব্রাহিম এবং প্রয়াত আইভী রহমানের সঙ্গে কাটানো কিছু সময়ের খণ্ড স্মৃতি রোমন্থন করেন। তিনি বলেন, ‘এই নির্মাণকাজটি নিয়ে আমি অপেক্ষায় ছিলাম কবে শেষ হয়। আজ আমাকে উদ্বোধনের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’ তিনি বলেন, “আজ গর্বের সঙ্গে বলতে পারছি, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নিয়ে অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। আজ তাঁরাই আমাদের মাতৃভূমিকে বিশ্ব ফোরামে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার ‘রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকার করছেন। বিশেষ করে নারীর অগ্রগতিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।”

প্রধানমন্ত্রী দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে নারী-পুরুষর সমান সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিকাশের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। নাট্য অন্দোলনের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশে বিশ্বমানের একটি অত্যাধুনিক ডিজিটাল থিয়েটার নির্মাণের উদ্যোগ নেবে। তিনি দেশের সব গণ-আন্দোলনে নাট্য আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।

থিয়েটারের প্রতি আগ্রহ আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগে আমি প্রায়ই থিয়েটারে নাটক দেখতাম। এখনো দেশের বাইরে গেলে থিয়েটারে নাটক দেখি।’ তিনি স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘আগে কমবেশি সব সময়ই লুকিয়ে হলেও নাটক দেখতে আসতাম। বেইলি রোডে থাকতে বেশি আসা হতো।’ তিনি বলেন, ‘আমি তো শুধু নাটকই দেখতাম না, গ্রিন রুমে গিয়ে শিল্পীদের সঙ্গে কথা হতো। কাজেই নাট্যাঙ্গনের সুবিধা-অসুবিধার সবই আমার জানা আছে।’ সূত্র : বাসস।