শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > নানা চাপে ইলিশ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হচ্ছে

নানা চাপে ইলিশ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হচ্ছে

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নানা চাপে ইলিশ রপ্তানি থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে সরকার। প্রতিবেশী একটি দেশের জন্যই মূলত এমন একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে নানা যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। যদিও তারা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে সায় দেয়নি। এমন অবস্থার মধ্যেও আগামী সপ্তাহেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের ১২ই জানুয়ারি এফবিসিসিআই এক পত্রে ইলিশ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানায়। ওই চিঠিতে তারা জানায়, বর্তমানে বাজারে সব রকম মাছের সরবরাহ বেড়েছে। দামও স্থিতিশীল রয়েছে। এ কারণে ইলিশ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা যৌক্তিক। এফবিসিসিআই’র পাশাপাশি গত ১০ই সেপ্টেম্বর রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এক চিঠিতে ইলিশ রপ্তানির মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন অব্যাহত রাখা এবং প্রতিষ্ঠিত রপ্তানি বাজার বাংলাদেশের দখলে রাখার জন্য ইলিশ রপ্তানি থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানায়। ইপিবি জানায়, বিগত অর্থবছরে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ রপ্তানি বন্ধ থাকার কারণে রপ্তানি আয় ৫৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমেছে। চলতি অর্থবছরের তিন মাসে মাছ রপ্তানির আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম। ইপিবি আরও জানায়, প্রায় ৩৫টি দেশে চিংড়ি ছাড়া অন্যান্য মাছ রপ্তানি করে বাংলাদেশ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় এসব মাছ রপ্তানি হয়। এর মধ্যে ইলিশের অবদান ২৫ শতাংশ। ওদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইলিশ রপ্তানির যৌক্তিকতা সম্পর্কে একটি ধারণাপত্র তৈরি করেছে। ওই ধারণাপত্রে তারা বলেছে, ইলিশের প্রধান ভোক্তা প্রবাসী বাংলাদেশীরাই। বিষয়টি স্পর্শকাতর ও আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। মৎস্য বিভাগের গভীর নজরদারির ফলে দেশে ইলিশ আহরণ অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে। আগামীতেও ইলিশ আহরণ অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছে সরকার। চলতি বছর আনুমানিক চার লাখ টন ইলিশ আহরণ হবে। এছাড়া, এ বছর বাজারে ইলিশের সঙ্কট ছিল না। রপ্তানি নিষিদ্ধ থাকায় বিপুল পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়লেও একটি বড় অংশ চোরাচালানের মাধ্যমে সীমান্তের ওপারে পাচার হয়েছে। এরপরও বাজারে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ইলিশ পাওয়া গেছে। মৎস্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সাময়িক সময়ের জন্য ইলিশ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছিল। তারপর কেটে গেছে দেড় বছর। এ দীর্ঘ সময় ইলিশ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন ইলিশ আহরণ করা হলেও রপ্তানি হয় মাত্র আট হাজার টন। যা দেশজ ভোগের তুলনায় খুবই কম। ইলিশ রপ্তানি বন্ধ থাকায় দীর্ঘ সমুদ্রসীমা দিয়ে ইলিশ পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠেছে। এছাড়া, ইলিশ রপ্তানি বন্ধের কারণে দীর্ঘদিনে গড়ে ওঠা এদেশের মাছের বাজার সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। বাজার দখলে চলে যাচ্ছে অন্যদের। দেশের ছোট, মাঝারি হিমায়িত মাছ প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলো ও বেশ কিছু বাণিজ্যিক রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়ে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ রপ্তানি করে থাকে। গত দেড় বছর ইলিশ রপ্তানি বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ব্যাংক ঋণের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে। রপ্তানি বন্ধের আগে রপ্তানিকারীদের আগাম সতর্কতা বা মতামত গ্রহণ করলে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। সার্বিক বিবেচনায় ইলিশ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা উচিত বলে মনে করছে সরকার। এভাবেই সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যদিও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এ নিয়ে তীব্র আপত্তি রয়েছে।