শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > নতুন নেতৃত্বে কে আসছেন ?

নতুন নেতৃত্বে কে আসছেন ?

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজনীতির ময়দানে সম্প্রতি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শোচনীয় পরাজয়ের পর নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ আর হতাশা। তাই সার্বিক পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে নানা ধরনের কৌশল প্রণয়ন করেছে নীতি নির্ধারণী মহল। এজন্য দলটি প্রথমেই উপজেলা নির্বাচনকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তারপর দল গুছিয়ে অচিরেই আন্দোলনে সক্রিয় হবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯ দলীয় জোট, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা ইতোমধ্যে এ ঘোষণা দিয়েছেন।

বেগম জিয়ার এমন ঘোষণার পর কাউন্সিল নিয়েই যতো ভাবনা বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাদের। ঘোষণা না এলেও জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে হিসেবও কষছেন নেতাকর্মীরা। আসছে কাউন্সিলে দলে গতিশীল নেতৃত্ব তৈরি হবে এটাই প্রত্যাশা সবার। আবার দলের নেতৃত্বে কে আসছেন তা নিয়েও অনেকের মাঝে প্রশ্ন।

সম্প্রতি আন্দোলন কৌশল নিয়ে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে কিছুটা দ্বিমত লক্ষ্য করা গেছে। তাই আগামী কাউন্সিলে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে পরির্তন আসবে এমনটা মনে করছেন অনেকে। এদিকে নতুন প্রজন্ম দলের নেতৃত্বেও পরিবর্তন চায়। তাদের দাবি দলকে শক্তিশালী করতে তরুণ নেতা তারেক রহমানকেই নেতৃত্বে আসা প্রয়োজন। আবার জ্যেষ্ঠ নেতাদের অভিমত দলকে সুসংগঠিত রাখতে এখনো খালেদা জিয়াকেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে।

অবশ্য গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘জীবন সায়াহ্নে এসে খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য শেষবারের মতো লড়াই করতে চান।’ খালেদা জিয়ার চতুর্থ কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল।

তারেক রহমানের ৪৯তম জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনে গত ১১ নভেম্বর ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প এবং বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণের আয়োজন করা হয়। বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর ওই অনুষ্ঠানে এসে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সুস্থ হয়ে শিগগিরই দেশে ফিরে দলের নেতৃত্ব দেবেন।’

গত ২৪ মে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু। তারেক রহমানকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করায় আওয়ামী লীগ নেতা এবং বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে হুঁশিয়ারী দিয়ে দুদু বলেছিলেন, ‘আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, সরকার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা বয়ান ও নাটক সাজাচ্ছে। তিনি আমাদের মাথার তাজ হয়ে আছেন। অচিরেই তিনি দেশে আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দেবেন।’

২৯ মে অনুষ্ঠিত অপর একটি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দেশে ফিরে দলের দায়িত্ব নিলে বেগম খালেদা জিয়া কী অবসর নেবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে দুদু বলেন, ‘আমাদের মহাসচিব যেমন মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। আমি মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। তারেক রহমানও তার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করবেন।’

এদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কী ভারমুক্ত হচ্ছেন? এটা নিয়েও দলের সর্বস্তরে চিন্তা রয়েছে।

জানা গেছে, মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপযুক্ত না হলেও তার বিকল্প পাওয়া যাচ্ছে না।

অবশ্য স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহাসচিব হিসেবে উপযুক্ত না হলেও দলের প্রধান মুখপাত্র হিসেবে তার বিকল্প নেই।’

তিনি মনে করেন, ‘জুনিয়রদের মধ্যে রুহুল কবির রিজভী আহমেদ দলের মহাসচিব হিসেবে উপযুক্ত। সে লেখা-পড়া জানে, তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে।’

আবার কেউ কেউ মনে করেন, ‘রাজনৈতিক পরিপক্কতায় রিজভী আহমেদ অনেক পিছিয়ে রয়েছেন।’

সূত্র জানায়, আগামীর মহাসচিব হিসেবে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল্লাহ আল নোমানসহ কয়েকজনের নাম দলের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনায় আছে। অবশ্য স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান এবং উপদেষ্টা পরিষদের পদ থেকে কয়েকজন বাদ পড়বেন। বার্ধক্যজনিত কারণে তারা অনেক আগে থেকেই দলে নিস্ক্রিয় রয়েছেন। আবার কারো কারো বিরুদ্ধে আঁতাত রাজনীতির অভিযোগ রয়েছে। কারো নামের আগে-পরে রয়েছে সুবিধাবাদী তকমাও।

সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব হিসেবে এবার নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। এই তালিকায় রয়েছেন, রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এবং আমান উল্লাহ আমান।

এছাড়াও দলের বেশ কয়েকজন নেতার প্রমোশন হতে পারে। যার মধ্যে বরকত উল্লাহ বুলু, জয়নুল আবদীন ফারুক ভাইস চেয়ারম্যানের কাতারে যেতে পারেন।

সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বেশ কয়েকজন বহাল থাকতে পারেন। আবার নতুন কয়েকজনের নামও শোনা যাচ্ছে। রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে সৈয়দা আসফিয়া আশরাফি পাপিয়া, রুহুল কুদ্দুস তালকুদার দুলু এবং সিলেটে ডা. সাখাওয়াত হোসেন রিপন, এম এ নাসের রহমান বাবু।

রিজভী আহমেদকে যদি দপ্তর থেকে সরানো হয় সেক্ষেত্রে এখানেও নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক মহিউদ্দিন খান মোহন বা সহ দপ্তরের দায়িত্বে রয়েছেন এমন কেউ এই পদে আসতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, এবার কাউন্সিলে বিএনপি ফ্রেশ অ্যানার্জি পাবে। দলের সুবিধাবাদী নেতা হিসেবে পরিচিতরা বাদ পড়বেন। ত্যাগীরা জায়গা পাবেন। বিশেষ করে আন্দোলন কর্মসূচিতে যারা সব সময় সক্রিয় থেকেছেন তাদের জন্য এবারের কাউন্সিলে সুখবর রয়েছে।

কাউন্সিল নিয়ে প্রত্যাশা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ নোমান বলেন, ‘কাউন্সিল সম্পর্কে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নেই। কাউন্সিলের মাধ্যমে দল আরো গতিশীল হবে।’

দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ‘কাউন্সিল নিয়ে এখনো দলের মধ্যে কোনো আলোচনা শুনিনি।’

প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, ‘প্রহসনের নির্বাচনের কারণে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমনের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সংসদের বাইরে থাকলেও কাউন্সিলের মাধ্যমে এই দল আরো শক্তিশালী হবে।’

কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক সিকদার বলেন, ‘এখনো কাউন্সিলের ব্যাপারে দল থেকে কোনো ঘোষণা আসেনি। যখনই কাউন্সিল হবে, আমরা চাই পরিচ্ছন্ন নেতাকর্মীদের দিয়ে দল আরো গতিশীল হবে।