বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: রাজনৈতিক ক্যারিয়ার টেকানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে খুব শিগগিরই নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের গুঞ্জন শোনা গেলেও বিষয়টি নিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বিএনপির সংস্কারপন্থি নেতারা।
একাংশের নেতারা আরেকটু অপেক্ষা করে বিএনপির মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চাচ্ছেন। অপর অংশটি চাচ্ছেন, খুব শিগগিরই নতুন দল গঠন করে সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরতে। এ ব্যাপারে দুই পক্ষেরই রয়েছে জোরালো কিছু যুক্তি।
সম্প্রতি গুঞ্জন ওঠে, বিএনপির সংস্কারপন্থি নেতারা দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে তৎপর হয়ে উঠেছেন। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নতুন দল গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। নতুন বছরের (২০১৬) প্রথম দিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে দল গঠনের কার্যক্রম শুরু করবেন। এরই মধ্যে দলের খসড়া গঠনতন্ত্র তৈরির কাজেও হাত দিয়েছেন সংস্কারপন্থিরা। নতুন দলে বিএনপির সংস্কারপন্থি অর্ধশতাধিক সাবেক সংসদ সদস্যসহ শতাধিক নেতা থাকছেন।
রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে খবর ছড়িয়ে পড়ে, নতুন দল গঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংস্কারপন্থি নেতা বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক হুইপ আশরাফ হোসেন এবং বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক হুইপ শহীদুল হক জামাল। এই দুই নেতার সঙ্গে বেশ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য ও দলে কোণঠাসা হয়ে পড়া নেতা রয়েছেন।
পরে বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তৎকালীন বিএনপির মহাসচিব প্রয়াত আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে দল থেকে ছিটকেপড়া বিএনপির শতাধিক সাবেক সংসদ সদস্য ও নেতা নতুন দল গঠন ইস্যুতে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেন এবং তার অনুসারীরা চাচ্ছেন খুব শিগগিরই নতুন একটি দল গঠন করে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে। অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) জেড এ খান এবং বিএনপির সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জহিরউদ্দিন স্বপন ও তাদের অনুসারীরা চাচ্ছেন আরেকটু অপেক্ষা করতে।
নতুন দল গঠনের পক্ষে অবস্থান নেওয়া সংস্কারপন্থি নেতারা মনে করছেন, ওয়ান ইলেভেনের পরিবর্তিত পরিস্থতিতে বিএনপির অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চা, ‘পরিবারতন্ত্র’ থেকে দলকে মুক্ত করা ও জাতীয় রাজনীতিতে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুতসহ মৌলিক কিছু সংস্কারের কথা বলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরাগভাজন হয়েছেন তারা।
সুতরাং খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের হাতে বিএনপির কর্তৃত্ব থাকা অবস্থায় সংস্কারপন্থিদের পক্ষে আর কোনো দিন বিএনপিতে ফেরা সম্ভব হবে না। তাই রাজনীতিতে থাকতে হলে নতুন দল গঠন করেই থাকতে হবে। বিকল্প কোনো পথ তাদের সামনে খোলা নেই।
অপরদিকে সংস্কারপন্থিদের আরেকটি অংশ মনে করছেন, নিকট অতীতে বিএনপি থেকে বের হয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে কেউ কিছু করতে পারেননি। উদাহরণ হিসেবে বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীরবিক্রমকে দেখাচ্ছেন তারা।
সংস্কারপন্থিদের এ অংশটি মনে করছেন, আজ হোক, কাল হোক বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের প্রয়োজনে আবার তাদেরকে ডাকবেন এবং তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাবেন।
সংস্কারপন্থি নেতা বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেন রোববার (১৫ নভেম্বর) বাংলানিউজকে বলেন, দল গঠনের উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। সবাইকে আহ্বান জানিয়েছি আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে। এ আহ্বানে কেউ সাড়া দেবেন, কেউ দেবেন না- এটাই স্বাভাবিক। যারা আসবেন তাদেরকে স্বাগত জানাবো। যারা আসবেন না, তাদেরকে জোর করবো না।
অপরদিকে বিএনপির সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জহিরউদ্দিন স্বপন বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপিতে থেকেই রাজনীতি করতে চাই। এখনো বিশ্বাস করি, দলের প্রয়োজনে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) আমাদের ডাকবেন, আমাদের দিয়ে কাজ করাবেন। শেষ পর্যন্ত যদি সেটি না হয়, তাহলে অন্য কিছু ভাববো। এখন আপাতত কোনো উদ্যোগের সঙ্গে আমি নেই।
সংস্কারপন্থি আরেক নেতা ও সাবেক হুইপ শহীদুল হক জামাল বাংলানিউজকে বলেন, কোনো উদ্যোগের সঙ্গে আমি নেই। দল গঠন নিয়ে নতুন কোনো খবর আপনাকে দিতে পারবো না।
ওয়ান ইলেভেনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়ে বিএনপি থেকে ছিটকে পড়েন সে সময়ের যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) জেড এ খান, মোফাজ্জল করিম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহ মো. আবুল হোসাইন, কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জহিরউদ্দিন স্বপন, দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেন, বগুড়ার সাবেক সংসদ সদস্য ডা. জিয়াউল হক মোল্লা, জিএম সিরাজ, কাজী রফিকুল ইসলাম, কক্সবাজারের সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শহিদুজ্জামান, ময়মনসিংহের সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন দুলু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন, চাঁদপুর জেলার সাবেক সভাপতি এসএ সুলতান টিটু, বরগুনা জেলার সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম মনি, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম কায়সার লিঙ্কন, সাবেক সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন মঙ্গু, বরগুনা জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ইলেন ভুট্টো, মিরসরাইয়ের সাবেক সংসদ সদস্য এমএ জিন্নাহ, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আখতার বুলু, শাম্মী শের প্রমুখ।
সংস্কারের প্রস্তাব দিয়ে দল থেকে ছিটকে পড়া এসব নেতারা নতুন দল গঠন ইস্যুতে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে জাতীয় রাজনীতিতে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান রাজনীতি বিশ্লেষকরা। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম