শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > নজর থাকবে নেইমারের উপর

নজর থাকবে নেইমারের উপর

শেয়ার করুন

স্পোর্টস ডেস্ক ॥ বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় ব্যাপারটা কি? কেন এটি অন্য কোন টুর্নামেন্ট থেকে আলাদা? কেনই বা এটাকে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ বলা হয়? কেবল একটি বাক্যে আমি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারি। বিশ্বকাপই পৃথিবীর একমাত্র টুর্নামেন্ট যেটা কিনা আচমকা নিতান্ত সাধারণ একজন খেলোয়াড়কে অমরত্ব দিতে পারে, চিরস্থায়ী জায়গা দিতে পারে ইতিহাসের পাতায়। আমি নিশ্চিত রোমারিওর সারা জীবনের অর্জনকে ছাপিয়ে যাবে শুধু ‘৯৪ বিশ্বকাপে তার পারফরম্যান্স, রবার্তো ব্যাজিওকে তার ক্লাব বা জাতীয় দলের পারফরম্যান্সের চাইতেও মানুষ বেশি মনে রাখবে ঐ একই বিশ্বকাপের ফাইনালে তার টাইব্রেকার শট মিসের কারণে।
এই কথাগুলো বলার কারণ হচ্ছে, অনেক বছর ধরেই আমি দেখে আসছি প্রায় প্রতিটি বিশ্বকাপই একজন সুপারস্টার উপহার দেয়। আমি ভাবছি এবার সেটা কে হতে পারেন। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, নেইমারদের পাশাপাশি শোনা গিয়েছে অনেকের নামই। প্রথম ম্যাচেই গোল করে নেইমার, মেসি দুজনেই ইঙ্গিত দিয়েছেন কেবল এই যুগের নয়, সর্বকালের অন্যতম সেরা হবার ক্ষমতা আছে তাদের। হয়তো গতকাল রাতেই নিজের পারফরম্যান্সের ঝলক দেখিয়েছেন রোনালদোও।
আজ মেক্সিকোর বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামছেন নেইমার, ব্রাজিলের জন্যও যেটা কিনা দ্বিতীয় ম্যাচ। শক্তিমত্তা, ফুটবল ঐতিহ্য কিংবা তারকাদ্যুতি ব্রাজিলিয়ানদের সাথে কোন তুলনা না চললেও মেক্সিকোও কিন্তু ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে জয় দিয়েই শুরু করেছে বিশ্বকাপ। অর্থাত্ সম্ভাব্য সর্বোচ্চ আত্মবিশ্বাসী হয়েই খেলতে নামবে তারা। তবে নেইমার যদি তার সেরা ফর্মে থাকেন এসবের কোনকিছুই কাজে আসবে না। মেক্সিকোর প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, নিতান্ত ভাগ্যবান না হলে আজ রাতে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে তাদের সুযোগ খুব কমই দেখছি আমি। তবে ব্রাজিলের জয়ের ব্যবধানটা কেমন হবে সেটা নির্ভর করছে নেইমারের পারফরম্যান্সের উপর।
লুইস ফেলিপে স্কলারির খেলার ধরনটাই এমন যে, কোন নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের উপর নির্ভরশীল নয় দল। সেই ২০০২ বিশ্বকাপেও তেমনটাই দেখেছি আমরা। রিভালদো, রোনালদিনহো, জে রবার্তোর বা রোনালদোর মতো খেলোয়াড় দলে থাকলেও নির্দিষ্টভাবে কাউকে কেন্দ্র করে খেলেনি ব্রাজিল। যদিও বিশ্বকাপের পরে এক সাক্ষাত্কারে স্কলারি স্বীকার করেছিলেন, কৌশলগত দিক থেকে রিভালদোই ঐ বিশ্বকাপে ছিলেন তার মূল খেলোয়াড়।
একই কথা প্রযোজ্য এবারের বিশ্বকাপেও। ব্রাজিলের খেলা নেইমার কেন্দ্রিক না হলেও, এই মাপের একজন খেলোয়াড়কে আপনি কখনোই উপেক্ষা করতে পারবেন না। অর্থাত্ আপনার পরিকল্পনায় একটা বিশেষ জায়গা দখল করেই থাকবেন তারা। সুতরাং, স্কলারি নেইমারকে কেন্দ্র করে দল না সাজালেও ব্রাজিলের আক্রমণ রচনায় মূল ভূমিকা থাকবে এই বার্সেলোনা তারকারই।
নেইমার যদি ছন্দে থাকেন তাহলে সেটা বাড়তি সুযোগ দেবে অস্কার-ফ্রেডদেরও। কারণ, মেসি-রোনালদো-নেইমারদের কখনো কেবল একজন ডিফেন্ডার দিয়ে আটকানো সম্ভব নয়। আর প্রতিপক্ষ কোচেরা কখনও সেই চেষ্টাও করতে যাবেন না। তারা জানেন, নেইমারকে আটকাতে পারলেই তাদের কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। আজও নিশ্চয়ই সেই চেষ্টা করবেন মেক্সিকো কোচ।
প্রথম ম্যাচে ৩-১ গোলের জয়ের পরও ব্রাজিল দলের বড় একটা দুর্বলতা চোখে পড়েছে আমার। লেফট উইংয়ে একেবারেই অকার্যকর ছিলেন হাল্ক। বহু বছর ধরেই ব্রাজিলিয়ানদের কাউন্টার অ্যাটাকগুলো দুই উইং থেকেই হয়ে আসতে দেখছি আমরা। এবারও আছেন মার্সেলো, ড্যানিয়েল আলভেজের মতো বিশ্বসেরা দুই লেফটব্যাক-রাইটব্যাক। তবে, লেফট উইংয়ের একেবারে শীর্ষে হাল্কের নিষ্ক্রিয়তায় এই প্রান্ত থেকে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে বলার মতো কোন আক্রমণই করতে পারেনি তারা। আক্রমণে গতি বাড়াতে হাল্কের কার্যকর ভূমিকা রাখার বিকল্প নেই।
এদিকে, রাতের প্রথম ম্যাচে বেলজিয়াম খেলবে আলজেরিয়ার বিরুদ্ধে। কে কি ভাবছে জানি না, তবে আমার দৃষ্টিতে এই বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট দল বেলজিয়াম। তারা সেমিফাইনালে খেললেও মোটেই অবাক হব না আমি। দলে একঝাঁক তারকা খেলোয়াড় আছেন, ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোর সেরা দলগুলোয় খেলেন তারা। অধিনায়ক ভিনসেন্ট কোম্পানি, টমাস ভারমালেন, এডিন জেকো, রোমেলো লুকাকুরা আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। আলজেরিয়ার বিরুদ্ধে তাদের জয় পেতে তেমন বেগ পাওয়ার কথা নয়।
আর রাতের শেষ ম্যাচে রাশিয়া খেলবে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে। এশিয়ান হিসাবে এই ম্যাচে আমার সমর্থন অবশ্যই কোরিয়ার পক্ষে।