স্টাফ রিপোর্টার ॥
ধনী-দরিদ্র্যের বৈষম্য কমাতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ওপর ব্যাপকভাবে জোর দিয়েছে সরকার। কিন্তু এই কর্মসূচিগুলো থেকে নগরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের খানাগুলো (পরিবার) ব্যাপকভাবে বাদ পড়ে যাচ্ছে বা বঞ্চিত হচ্ছে। এখানকার খানাগুলোর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপবৃত্তি পায় মাত্র ৩ শতাংশ, অর্থাৎ ৯৭ শতাংশই এর বাইরে। আর বয়স্কভাতা পায় মাত্র ২ শতাংশ, অর্থাৎ ৯৮ শতাংশই এর বাইরে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সম্প্রতি প্রকাশ করা নগর আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিরূপণ জরিপ ২০১৯-এ এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
শহরাঞ্চলের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির কার্যকরী সুবিধাভোগী নির্বাচনের পদ্ধতি প্রণয়নের লক্ষ্যে খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি ও আর্থ-সামাজিক বৈশিষ্ট্য নিরূপণের তথ্য সংগ্রহ করতে পরিচালনা করা হয় নগর আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিরূপণ জরিপ ২০১৯।
২০১৯ সালের ৮ থেকে ২৬ ডিসেম্বর সময়ে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। জরিপে ঢাকা-চট্টগাম নগর এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম ছাড়া অন্য নগরকে দুটি প্রতিবেদনাধীন এলাকা ধরে নিম্ন আয়ের অংশকে প্রাধিকার দিয়ে তিনটি স্তরের (উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন আয়ের) ভিত্তিতে নির্বাচিত মোট ৮৬টি প্রাথমিক নমুনা এলাকা থেকে ২ হাজার ১৫০টি নগরাঞ্চলের খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। জরিপ এলাকায় খানাপ্রতি গড় সদস্য চারজন।
জরিপ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নগরাঞ্চলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী বয়সের ৯৩ শতাংশ শিশু এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী ৬৮ শতাংশ শিশু স্কুলে যায়। দেখা যাচ্ছে, প্রাথমিক পর্যায় থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষায় উত্তরণের পথে এটি একটি ব্যাপক অবনমন।
প্রায় ৬১ শতাংশ খানা অন্য খানার সঙ্গে টয়লেট ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে থাকে। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ খানার (৩১ শতাংশ) নিজস্ব টেলিভিশন নেই এবং এক-চতুর্থাংশ খানার (২৬ শতাংশ) পৃথক রান্নাঘর নেই। ৬৭ শতাশং খানার কোনো সঞ্চয় নেই বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
নমুনা এলাকায় অবস্থিত নাগরিক খানাগুলোর মধ্যে ৫৫ শতাংশ সরবরাহ লাইন থেকে খানার মধ্যেই খাবার পানি পেয়ে থাকে। ঢাকা-চট্টগ্রাম নগরে এ হার অন্যান্য এলাকার চেয়ে তিনগুণ বেশি (৬৪ শতাংশ বনাম ২৩ শতাংশ)। টয়লেট সুবিধার কাছাকাছি যদিও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা (৮৬ শতাংশ) এবং হাত ধোয়ার স্থানে পানির প্রাপ্যতা (৯০ শতাংশ) তুলনামূলক অনেক বেশি। তবে হাত ধোয়ার স্থানে সাবান বা অন্যান্য পরিষ্কারকের উপস্থিতি ৬৭ শতাংশ, যা আরও বাড়ানোর ক্ষেত্রে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন বলে সুপারিশ করেছে প্রতিবেদনটি।
জরিপে আরও দেখা গেছে, সিটি করপোরেশন নমুনা এলাকার খানাগুলোর খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ খুব বেশি। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ২১ শতাংশ খানা বিগত মাসে তাদের পর্যাপ্ত খাবার না থাকার বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। যদিও খুব কম সংখ্যক খানা উচ্চ খাদ্য নিরাপত্তাহীন হিসেবে শ্রেণিভুক্ত হয়েছে। ৮ শতাংশ খানা লঘু খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে। খাদ্য সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে স্বল্প আয়ের খানার মধ্যে একটি সাধারণ অনুসৃত কৌশল হলো- ভোগ করা খাবারের গুণগতমান এবং পরিমাণ কমানো, যা পুষ্টি পরিস্থিতির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে থাকে।