রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > দেহে ১৮শ স্পিন্টার নিয়ে বেঁচে আছি

দেহে ১৮শ স্পিন্টার নিয়ে বেঁচে আছি

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ দেহে ১৮শ’ স্পিন্টার নিয়ে এখনও বেঁচে আছেন সাভারের মাহবুবা পারভীন। ঢাকায় আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার পর তার শরীরে এসব স্প্লিন্টার পাওয়া যায়। ওই দিন গ্রেনেড হামলায় ২২ জনের মৃত্যু হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান সাভারের মাহবুবা পারভীন। এরপর থেকে অদ্যাবধি তিনি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। সেদিন টিভিতে গ্রেনেড হামলার চিত্র দেখে সবাই ভেবেছিলেন পারভীন আর বেঁচে নেই। হাসপাতালে নেয়ার পরও পারভীন হাসপাতালের মেঝেতে পড়েছিলেন দীর্ঘ সময়। মাহবুবা পারভীন ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক।

ঢাকায় দলীয় কর্মসূচিতে প্রায়ই তিনি অংশ নিতেন।
২০০৪ সালের ২১শে আগস্টের সমাবেশে দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মাহবুবা পারভীন সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু কে জানতো তিনিও গ্রেনেড হামলার শিকার হবেন। সমাবেশস্থলে সেদিন ২২ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন অশংখ্য নেতাকর্মী। ঘটনার সময় তিনি মঞ্চ থেকে নিচে নেমে আসছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তেই বিকট শব্দে গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। এর কিছুক্ষণ পরই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে পিজি হাসপাতাল এবং এর ৫/৬ দিন পর বাংলাদেশ মেডিকেলে চিকিৎসা দেয়া হয়।
অবস্থার উন্নতি না হলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে। সেখানে ২৫ দিন চিকিৎসা দেয়ার পর চিকিৎসকরা আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্যাংকককে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার ভাই তসলিম উদ্দিন ওসমানীকে পরামর্শ দেন। কারণ, তার শরীরে রয়েছে ১৮শ’ স্প্লিন্টার। যা ভয়ানক যন্ত্রণাদায়ক।
সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনি মহল্লার বাড়িতে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় মাহবুবা পারভীনের। তিনি জানান, শরীরে থাকা স্প্লিন্টারের ব্যথার যন্ত্রণা অসহ্য। একবার একটি স্প্লিন্টার নিজেই ব্লেড দিয়ে কাটতে চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ফলে ওই স্থানে পচন ধরেছিল এবং বেশ কয়েকদিন হাসপাতালেও কাটাতে হয়েছিল তাকে। তিনি আরও বলেন, আমার অবস্থা একজন ক্যান্সার রোগীর চেয়েও মারাত্মক।
মস্তিস্কে দুটি স্প্লিন্টার থাকায় মাথায় সামান্য চোট লাগলেই সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলি। মাহবুবা পারভীনের ২ ছেলে আসিফ পারভেজ ও রুশাদ জোবায়ের। স্বামী বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ফ্লাইট সার্জেন্ট এমএ মাসুদ। গ্রেনেড হামলায় আহত হওয়ার পর কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করেছিলেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়া দুই ছেলের লেখাপড়ার জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে মাসে ১ হাজার টাকা দেয়া হতো। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই টাকা দেয়াও বন্ধ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবারও সেই এক হাজার করে টাকা পাচ্ছি বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে একবার সাভার এনাম মেডিকেলে ভর্তি হয়ে অপারেশন করে বাম পায়ের তালু থেকে দুটি ও ডান পা থেকে একটি স্প্লিন্টার বের করা হয়। এছাড়া তিনি পিজি হাসপাতালে গিয়ে মাঝে মধ্যে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলেও জানান। চিকিৎসার খরচ বাবদ প্রতিমাসে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে ৫ হাজার করে টাকা পাচ্ছেন তিনি।
ভবিষ্যতে শেখ হাসিনার দয়ায় তিনি ব্যাংককের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, সেদিনের কথা মনে উঠলে এখনও গা শিউরে উঠে। সেদিন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আশিষ কুমার মজুমদার ভাই আমাকে হাসপাতালে না নিলে অন্যান্য নেতাকর্মীর মতো আমাকেও লাশ হয়ে পড়ে থাকতে হতো ওই স্থানে। তার পরিবারের পক্ষে উন্নত চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয় বলেও তিনি জানান।