শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > দেশে ফিরলেই গ্রেফতার

দেশে ফিরলেই গ্রেফতার

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: দুর্নীতির ‘মহারাজা’ হিসেবে পরিচিত সদ্য মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারানো আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এদিকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে দায়ের করা মামলায় ইতিমধ্যে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ কারণে তিনি দেশে প্রবেশ করলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হবেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী থাকাবস্থায় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এবং অনিয়মের মাধ্যমে লতিফ সিদ্দিকী যেসব জমি পানির দরে বিক্রি করেছেন, ইজারা দিয়েছেন কিংবা হস্তান্তর করেছেন সেগুলোও উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেছে। প্রথমেই বাতিল হচ্ছে চট্টগ্রাম সমিতির নামে দেওয়া মতিঝিলের জমিটি। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে আইনি পদক্ষেপও নিতে শুরু করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এজন্য আইন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মতামত ও ব্যাখ্যা চেয়ে সামারি পাঠিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে থাকাবস্থায় অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে ও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সরকারি সম্পদ বিক্রি, ইজারা ও হস্তান্তর করার অভিযোগে তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের মুখোমুখি হতে হবে বলে সরকারের উচ্চপর্যায় সূত্রে জানা গেছে। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান এম বদিউজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এখনো এ ব্যাপারে কোনো কিছু আসেনি’।
বিগত মহাজোট সরকারের মেয়াদে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী থাকাকালে দুর্নীতির মাধ্যমে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দফতর ও অধিদফতরের মূল্যবান সম্পদ দেদার পানির দরে বিক্রি করেছিলেন, ইজারা দিয়েছিলেন এবং হস্তান্তর করেছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। এতে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তিনি নিজে বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন। তার এ দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়ে তদন্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই কমিটির তদন্তে লতিফ সিদ্দিকীর সব দুর্নীতি ও অপকর্মের প্রায় অর্ধশত তথ্য-প্রমাণ বেরিয়ে আসে। সম্প্রতি কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদনটি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে জমা দিলে তার আলোকেই মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ের হস্তগত হওয়ার পর থেকে ওই প্রতিবেদনের আলোকে সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। সূত্র জানায়, মতিঝিলে যে জমিটি চট্টগ্রাম সমিতিতে নামমাত্র মূল্যে ইজারা দেওয়া হয়েছিল সে ইজারার আদেশ বাতিল করছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। আজই এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারি হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার যুগ্ম-সচিব শামসুল কিবরিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইজারার আদেশ বাতিলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। আজই আদেশ জারি হবে। সমিতি ইজারা মূল্য হিসেবে যে পে-অর্ডার দিয়েছিল তা-ও ফেরত দেওয়া হবে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী থাকাকালে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী রাজধানীর ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন মতিঝিল মৌজার হোল্ডিং নম্বর ১৭৬, আরএস দাগ নম্বর ২৪৫৮, ঢাকা সিটি জরিপের দাগ নম্বর ৩৩৩৯-এর অন্তর্ভুক্ত ১১ কাঠা ১৩ ছটাক জমি নামমাত্র মূল্যে (১ কোটি ১ লাখ ১ হাজার ১০০ টাকা) দিয়েছেন চট্টগ্রাম সমিতিকে। তার স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী হলেন চট্টগ্রাম সমিতির সভাপতি। ওই জমি দেওয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রী নোটশিটে লিখেছেন- ‘ব্যক্তিগত জীবনে আমি চট্টলা কন্যার পাণি গ্রহণ করেছি। মানবতার সেবায় তাদের সহযোগিতা করার নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে এটা করছি’। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রণালয়ের অধীন বিটিএমসি, তাঁত বোর্ড, বিলুপ্ত জুট করপোরেশন (বিজেসি) ও বিজেএমসিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যে ৪৮টি সম্পদ বিক্রি, ইজারা ও হস্তান্তর করেছিলেন সেগুলোও উদ্ধারে ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সূত্র ধরে এখন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এসব বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে সারসংক্ষেপ পাঠাচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। আবার কোনো কোনোটার ক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেরও মতামত ও ব্যাখ্যা চাওয়া হচ্ছে।
কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী কুমিল্লার দৌলতপুরের চিশতী টেঙ্টাইল মিলস বিনা টেন্ডারে ও কম মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতও ইতিমধ্যে পেয়ে গেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এখন শুধু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অপেক্ষা। এ ছাড়া গাজীপুরের বিখ্যাত মসলিন কটন মিল ও কুষ্টিয়ার মোহিনী মিলের বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে আইন মন্ত্রণালয়ে মতামত চেয়ে সারসংক্ষেপ তৈরি করছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। একইভাবে অন্যসব বিষয়েও মতামত চাওয়া হচ্ছে আইন মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিগত মহাজোট সরকারের আমলে মন্ত্রী থাকা অবস্থায় আবদুল লতিফ সিদ্দিকী যেসব সম্পত্তি বিক্রি করেছিলেন, ইজারা দিয়েছিলেন ও হস্তান্তর করেছিলেন সেগুলো উদ্ধারের পাশাপাশি সাবেক এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপও নিতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়। এজন্য সব বিষয় ভালো করে খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, মন্ত্রী থাকা অবস্থায় নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি ব্যবহার করে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে লতিফ সিদ্দিকী সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূতভাবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন অন্তত ৪৮টি বেসরকারি সম্পত্তি বিক্রি, ইজারা ও হস্তান্তর করেছেন। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে লতিফ সিদ্দিকীর নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বর্ণনা দিয়ে ৪৮টি সম্পত্তির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছে। কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূতভাবে, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ও বিনা মূল্যে বা কম মূল্যে যেসব সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয়েছে, সেগুলো আবার সরকারের অনুকূলে ফেরত নেওয়ার বিষয়টি যাচাই করে দেখতে হবে। এ ছাড়া কমিটি রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বিনামূল্যে বিক্রি, হস্তান্তর ও ইজারা দেওয়ার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মহাজোট সরকারের পাঁচ বছরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন বিটিএমসি, তাঁত বোর্ড, বিলুপ্ত জুট করপোরেশন (বিজেসি) ও বিজেএমসির মোট ৪৮টি প্রতিষ্ঠান বেসরকারিকরণ ও হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে বিনা টেন্ডারে দেওয়া হয়েছে ১২টি। ৪৮টির মধ্যে ৩০টি প্রতিষ্ঠান পূর্ণাঙ্গ হস্তান্তর করা হয়েছে। ১৭টি হস্তান্তরের প্রক্রিয়াধীন।
দেশে ফিরলেই গ্রেফতার : নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতির একটি অনুষ্ঠানে পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে কটূক্তি করে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে ইতিমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ডজনের ওপর মামলা হয়েছে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে। এসব মামলার একাধিকটিতে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছেন আদালত। কোনো কোনোটিতে সশরীরে হাজির হওয়ারও আদেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এসব মামলার কারণে দেশে পা রাখলেই গ্রেফতার করা হবে তাকে। কারণ সরকার তাকে নিয়ে কোনোরকম ঝুঁকিতে যেতে চায় না। (বিডি-প্রতিদিন)