স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিক্ষিপ্ত মিছিল-পিকেটিং ও বিস্ফোরণ-অগ্নিসংযোগের মধ্য দিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা পঞ্চম দিনের হরতাল চলছে। এর আগে রোববার থেকে ৭২ ঘন্টার তিনদিনের হরতাল পালনের ঘোষণা দেয় বিএনপি জোট। বুধবার ভোর ৬টায় তা শেষ হওয়ার আগেই মঙ্গলবার আরো ৪৮ ঘন্টার হরতালের ডাক দেয়া হয়। ঘোষিত এ হরতাল শেষ হবে শুক্রবার ভোর ৬টায়। ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া লাগাতার অবরোধের মধ্যেই দফায় দফায় হরতাল পালন করছে বিএনপি জোট।
হরতাল-অবরোধকে ঘিরে রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মোতায়েন রয়েছে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের যৌথ টহল টিম নামানো হয়েছে। দেশের অন্যান্য নগর মহানগর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। হরতাল-অবরোধের সমর্থনে মিছিল-পিকেটিং ঠেকাতে সর্বত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক তৎপরতা চোখে পড়ার মতো।
হরতালের কারণে আজ বৃহস্পতিবারের পূর্ব নির্ধারিত এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া অবরোধ-হরতালে যেকোন সহিংসতা মোকাবেলায় পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি সারা দেশে ২৩৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সকালে হরতালে রাজধানীতে সীমিত সংখ্যক গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে প্রশাসনের সাথে বৈঠকে ঢাকা পরিবহণ মালিক সমিতির গাড়ি চালানোর আগের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বেলা বাড়ার সাথে সাথে যানবাহন চলাচল কিছুটা বাড়লেও পরিবহনলোতে যাত্রী সংখ্যা ছিল খুবই কম। এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলও কম দেখা যায়।
ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও যাত্রী কম থাকায় নির্ধারিত সময়ের পর সেগুলো ছাড়ছে। তবে গাবতলি, সায়েদাবাদ ও মহাখালী থেকে দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি। একইভাবে দূরপাল্লার কোন যান ঢাকায় প্রবেশ করেনি।
এদিকে দেশের বিভিন্ন জেলায়ও চলছে শান্তিপূর্ণ হরতাল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক প্রহরার মধ্যেও হরতাল-অবরোধের সমর্থনে বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত মিছিল-পিকেটিং করছে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ঘটেছে ককটেল বিস্ফোরণ। অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে জেলা সদর, নগর-মহানগরগুলোর আন্তঃমহাসড়কগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রহরায় কিছু হালকা যানবাহন চলাচল করার খবর পাওয়া গেছে।
হরতালের কারণে রাজধানীসহ সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই কম দেখা যায়।
দেশব্যাপী ক্রসফায়ারের মাধ্যমে অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা, গুলি করে অসংখ্য নেতাকর্মীকে পঙ্গু ও আহত করা এবং বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীসহ নিরীহ জনগণকে গণগ্রেফতারের প্রতিবাদ, জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ ও কুক্ষিগতকরণ, সাংবাদিক নির্যাতন ও সংবাদমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এ হরতালের ডাক দেয়া হয়।
শুক্রবার ও মঙ্গলবার দুই দফায় পৃথক বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ জোটের সব নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে শান্তিপূর্ণভাবে এ কর্মসূচি পালনের জন্য খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে আহ্বান জানান।