বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: আর দু’দিন পরেই ঈদ-উল-আযহা। আজ বুধবার সরকারি অফিস শেষ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে ঈদের ছুটি। অনেকে অফিসে হাজিরা দিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে ঘরমুখো হবেন। আবার অনেকে আগাম ছুটি নিয়ে এখনই ফিরছেন ঘরে।
ফলে সব মিলিয়ে আজ বুধবার সকাল থেকে মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল সদরঘাট, সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালী বাস টার্মিনাল ও কমলাপুর রেলস্টেশনে। মানুষের ভোগান্তি শুরু হয়েছে এখান থেকেই। ঘাটে ও টার্মিনালে পৌঁছতে যাত্রীদের অতিক্রম করতে হয়েছে তীব্র যানজট, কাদা পানি ও খানা-খন্দের রাস্তা। তার ওপর মহাসড়কের বাঁকে বাঁকেও পশুর হাট, গর্ত, যানজট, ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাইসহ নানা ভোগান্তিতো উঁৎ পেতে রয়েছেই। ফলে এই ঈদেও নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরার আর হচ্ছে না ঘরমুখো মানুষের। তারপরও সব ভোগান্তি মেনে নিয়ে নাড়ীর টানে ঘরে ফিরছে মানুষ।
জানা গেছে, বর্ষার কারণে এবার সারাদেশে ৩ হাজার ১০০ কিলোমিটার সড়ক খানা খন্দে ভরে গেছে। প্রতিদিনই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কেরও যানজটের খবর বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশ হচ্ছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে ভেঙেচুরে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে সড়কটি। চালকরা অত্যন্ত ধীর গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন এই রুটে।
তবে সড়ক-মহাসড়কে খানাখন্দ রাস্তার জন্য বৃষ্টিকে দায়ী করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, টানা তিন মাস বৃষ্টির কারণে মহাসড়ক সম্পূর্ণ যান চলাচল উপযোগী করা যায়নি। এ কারণে সড়কপথে সম্পূর্ণ যানজটমুক্ত করা যাবে না। আবার তিনি এটাও জোর দিয়ে বলেছেন, সড়ক মহাসড়কের কারণে দুর্ভোগ হবে না।
বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী অস্বীকার করলেও যাত্রীদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ভিন্ন তথ্য। কেউ কেউ বলেছেন, দাম নয় টিকিট পেতেই এখন মহা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার মন্ত্রী মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে গেলে তার উপস্থিতিতে ক্ষোভের কথা বলার সুযোগ না পেলেও টার্মিনাল ছাড়তেই শোনা গেল বিভিন্ন অভিযোগ। আব্দুল আলীম নামের জামালপুরের এক যাত্রী বলেন, মন্ত্রী এলে সবই ঠিকঠাক, গেলেই ভিন্ন চিত্র। তিনি বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। অনেক কষ্টে বেশি দাম দিয়ে টিকিটগুলো সংগ্রহ করতে হয়েছে। একজনও নেই ন্যায্য দামে টিকিট কিনতে পেরেছে।’
এদিকে নৌ-পরিবহন ও রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে, কোনোভাবেই বাস, ট্রেন ও লঞ্চে ছাদে যাত্রী বহন করতে দেয়া হবে না। কেউ নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অথচ সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআরটিসি বাসের ভাড়া ১২০ টাকা পরিবর্তে ২০০ টাকা রাখা হচ্ছে। গুলিস্তান থেকে পাটুরিয়া ঘাটের বিআরটিসি বাসের ভাড়া যেখানে ১০০ টাকা সেখানে রাখা হচ্ছে ২০০ টাকা।এমনটিই জানিয়েছেন পাটুরিয়াগামী মো. সিরাজ মিয়া।
তিনি ভাড়া বেশি নেয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে কাউন্টারের লোকজন সিরাজ মিয়ার প্রতি মারমুখি হয়ে উঠেন বলে জানান তিনি।
এদিকে দু’ একটি রেলের সিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তবে বড় কোনো বিপর্যয়ের খবর এখনও পাওয়া যায়নি। গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ট্রেনের স্পেশাল সার্ভিস শুরু হয়েছে। তবে সিডিউিল বিপর্যয় হতে পারে বলেও অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
অপরদিকে যাত্রার শুরুতেই মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। লঞ্চের চিত্রও একই। সব মিলিয়ে পদে পদে দুর্ভোগ মোকাবেলা করেই ঘুরমুখো মানুষের বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
সরকারের ঢিলেঢালা প্রস্তুতি এবং সারাদেশে সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে আসন্ন ঈদুল উল আজহা উপলক্ষে তীব্র যানবাহন সংকট ইতোমধ্যে দেখা দিয়েছে। আর সে কারণেই ভোগান্তি কোনো যাত্রীই বাড়ী পৌঁছতে পারছেন না।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ট্রেনের কোচ ড্যামেজ ও ইঞ্জিন বিকল আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এতে ঈদে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। মেকানিক্যাল বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে গত তিন মাসে রেলের ৫০টির মত ইঞ্জিন বিকল হবার খবর পাওয়া গেছে।
একই সময়ে ২৭টি রানিং বগিও ক্ষতি হয়েছে। চলতি মাসেই ২৫টিরও বেশি ইঞ্জিন বিকল হয়ে রেল লাইন ডিসকানেক্ট হয়েছে বলে রেলসূত্র নিশ্চিত করেছে। অভিযোগ রয়েছে, পূর্বাঞ্চলের চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের (সিএমই) অসহযোগিতা ও শ্রমিক-কর্মচারীদের অসন্তোষের কারণে এমন ঘটনা ঘটছে।
তবে রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেছেন, ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ের কোনো সমস্যা নেই। ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিন মেরামত করে রাখা আছে। দৈনিক ১৯৯টি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) দিয়ে এবারের ঈদ সার্ভিস পরিচালনা করা হবে। এছাড়া ২৫টি ইঞ্জিন অতিরিক্ত হিসেবে রাখা আছে। এবারের ঈদে সিডিউল বিপর্যয় হবে না বলে দাবি করেন মন্ত্রী।
বাস মালিক কর্তৃপক্ষ বলেছেন, রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে সব কোম্পানিই নির্ধারিত ট্রিপের চেয়ে কম ট্রিপের টিকিট ছেড়েছে। ঈদের আগে রাস্তাঘাটের অবস্থা কিছু ভালো হলে ট্রিপের সংখ্যা বাড়ানোও হতে পারে। তবে এ সম্ভাবনা খুবই কম।
এদিকে লঞ্চের অগ্রিম টিকিট বিক্রির শুরুর আগেই শেষ হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির টিকিট পাওয়া যেন সোনার হরিণ হাতে পাওয়া। বাসের টিকিটের জন্যও এক কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টারে ছুটাছুটি করছে সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন পরিবহন মালিকরা বলেছেন, সারাদেশে বেহাল সড়ক ব্যবস্থার কারণে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ বাস দেয়া হবে না। ফলে এবারের ঈদে যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা ঘরমুখো মানুষের।
সদরঘাট নৌ টার্মিনালের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদিন জানান, গত মঙ্গলবার থেকে যাত্রীসেবায় বরিশাল রুটে পাঁচটি লঞ্চসহ বিভিন্ন রুটে চাহিদামতো স্পেশাল লঞ্চ সার্ভিস শুরু করেছে বিভিন্ন লঞ্চ মালিকরা। তবে এ ঈদে লঞ্চের ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে কি না সে দিকে আমরা বিশেষ নজরদারি করছি।
এদিকে গাবতলী টার্মিনাল সূত্র জানায়, অনেক পরিবহন এখন আর টিকিট বিক্রি করছে না। বিশেষ করে ছোট পরিবহন কোম্পানিগুলো টিকিট ছাড়ছে না। তবে রাস্তার অবস্থা দেখে ঈদের দুদিন আগে উপস্থিত যাত্রীদের (রানিং) মাঝে টিকিট বিক্রি করছে।
টিকিট সংকটের ব্যাপারে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কামাল হোসেন নামে এক কর্মকর্তা জানান, এবার টিকিট সংকটের আশঙ্কা আগে থেকেই করা হয়েছে। রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে সব কোম্পানিই নির্ধারিত ট্রিপের চেয়ে কম ট্রিপের টিকিট ছেড়েছে। ঈদের আগে রাস্তাঘাটের অবস্থা কিছু ভালো হলে ট্রিপের সংখ্যা বাড়ানোও হতে পারে। তবে এ সম্ভাবনা খুবই কম।
নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাহাজান খান জানিয়েছেন, যে কোনো দুর্ঘটনা রোধে এ বছর সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। তিনি জানান, কোনোভাবেই লঞ্চে ছাদে যাত্রী বহন করতে দেয়া হবে না। কেউ নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। মন্ত্রী সাধারণ যাত্রীদের অতিরিক্ত যাত্রী না হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, এ বছরই আমরা টিকিটিং-এর ব্যবস্থা করেছি। সদরঘাটের নতুন ভবনে ২২ টি কাউন্টার করে দিয়েছি, যাতে যাত্রীরা টিকিট সংগ্রহ করে লঞ্চে উঠতে পারে। টিকিট ছাড়া কোনো যাত্রীকে লঞ্চে উঠতে দেয়া হবে না বলেও জানান মন্ত্রী। বাংলামেইল২৪ডটকম