বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, শুধুমাত্র আইন দিয়ে দুর্নীতি দমন করা যায় না। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে থাকা দুর্নীতি দূর করতে শিক্ষা ব্যবস্থায় সিলেবাস পরিবর্তন করতে হবে।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম আয়োজিত ‘দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ও নেতৃত্বের সাফল্য’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি একথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, শুধু আইন দিয়ে দুর্নীতি দমন করা যায় না। দুর্নীতি করলে আইন দিয়ে শাস্তি দেয়া যায়। তার মানে এই দাঁড়ায় দুর্নীতি আগে করতে হবে তারপর আইনের প্রয়োগ।
তিনি আরও বলেন, আদর্শলিপিতে ‘সদা সত্য কথা বলিবা’ আমরা ছোট বেলায় শিখেছি, এটা কিন্তু আমাদের মাইন্ড সেট পরিবর্তন করে দেয়। আমাদের শিশুদের যদি এইসব ভ্যালুস সম্পর্কে পড়ানো হয়, তাহলে তারা বড় হয়ে দুর্নীতি গ্রহণ করবে না। পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে এসব সিলেবাস অন্তর্ভুক্ত করতে শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করব। আমি চেষ্টা করব নার্সারি থেকে আমাদের পাঠ্যবইয়ে যেন এই রকম আদর্শের কথা লেখা হয়। যেখানে এই রকম আদর্শের সাফল্য কোথায় এবং আদর্শ না মানলে তার পরিণাম কী হয়, সে সম্পর্কে বলা থাকবে।
আনিসুল হক বলেন, ‘অনেকে বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হচ্ছে, পাচার হয়েছে। সেসব বাদ দিয়ে আড়াই কোটি টাকার দুর্নীতির সাজা কেন? আমি তাদের প্রতি প্রশ্ন রাখতে চাই, ওই দুর্নীতি কে করেছেন? সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রী করেছেন। আর ওই আড়াই কোটি টাকা ছিল এতিমের। এতিমের সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সেই এতিমের টাকা চুরির সাজা ১০ বছর কী বেশি হল? বরং এটার মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দুর্নীতির ডালপালা মেলতে থাকে। যা পরে খন্দকারর মোস্তাক, মেজর মিয়া ও এরশাদ আমলে দুর্নীতি বিস্তার ঘটে। দুই দশক দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছে। বিএনপি-জামায়াত আমলে বাংলাদেশ ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয়। দেশের ভাবমূর্তি বিদেশে ক্ষুণ্ন হয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতি দমনে কার্যক্রম শুরু করে। আওয়ামী লীগের দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রম আজ প্রশংসনীয় আন্তর্জাতিক মহলে।
‘আমরা সব দুর্নীতির মূলে হাত দিয়েছি। যে কারণে স্বঘোষিত কিছু নেতা যাদের জনগণের কাছে যাওয়ার সুযোগ নাই, ভোটে জামানত হারাবেন। তারাই কিনা বলেন, এই সরকারের অধীনে দুর্নীতি দমন সম্ভব না। সত্যি বলতে তারাই দুর্নীতির মধ্যে ডুবে আছেন।’
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, আমাদের খাওয়ার অভ্যাসটা বেশিই। আত্মসাৎ করা, ঘুষ খাওয়া, সরকারি সম্পত্তি বেচে খাওয়া।
দীর্ঘ মেয়াদে দুর্নীতি বিরোধী শুদ্ধাচার শুরু করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে আসতে হবে অত্যন্ত খারাপভাবে। দুর্নীতিকে আমরা যেন ঘৃণা করতে পারি, দুর্নীতিবাজদের মেয়ে ছেলের সঙ্গে প্রেম না করি, বিয়ে না করি। সম্পর্ক না রাখি।
কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, রাজনীতি যদি ঠিক না হয়, তাহলে দুর্নীতি ঠিক করা যাবে না। টেন্ডারবাজি কিন্তু বলা যায় বন্ধ হয়েছে, কিন্তু তদবিরবাজি কী বন্ধ হয়েছে, ক্ষমতাবানরাই তদবির করেন, সুযোগ আছে বলেই করে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ফয়সাল আহসান, কলামিস্ট ড. মিল্টন বিশ্বাস।
বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাকি চৌধুরী নবাব।