শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > আন্তর্জাতিক > দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে হঠাৎ রাশ টানলেন সৌদি যুবরাজ

দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে হঠাৎ রাশ টানলেন সৌদি যুবরাজ

শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সৌদি সিংহাসনের উত্তরসূরি মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় অভিযানের ইতি টেনেছে সৌদি আরব।

দেশটি বলছে, কয়েক ডজন সিনিয়র প্রিন্স, মন্ত্রী ও শীর্ষ ধনকুবেরের সঙ্গে সমঝোতায় আসার মাধ্যমে এক হাজার ৬০০ কোটি ডলার আদায় করা হয়েছে।

রাজকীয় আদালতের বিবৃতির বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ২০১৭ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া অভিযানে ৩৮১ জনকে তলব করেছে সরকার। তাদের কয়েকজনকে অবশ্য সাক্ষী হিসেবে সমন দেয়া হয়েছিল। তবে তলব করা ব্যক্তিদের কারও নাম এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি।

রাজকীয় আদালত জানান, ৮৭ ব্যক্তি অপরাধের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা সরকারের সঙ্গে গোপন সমঝোতায় পৌঁছান। এতে তাদের আবাসন ব্যবসা, কোম্পানি, নগদ অর্থসহ অন্যান্য সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

সৌদিতে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান যেমন হঠাৎ করে শুরু হয়েছিল, বন্ধও হয়েছে তেমনি আকস্মিক। যদিও স্থানীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছিল- এই বুঝি নতুন করে আটক অভিযান শুরু হচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ থাকায় ৫৬ জনের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে সৌদি সরকারি কৌঁসুলি।

আটজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে না চাইলে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। অভিযুক্ত হননি এমন আটকদের ছেড়ে দেয়া হয়নি বলেও জানানো হয়েছে।

দুর্নীতিবিরোধী আটক অভিযানের প্রথম তিনি মাসে রিয়াদের বিলাসবহুল রিটস-কার্লটন হোটেলে সৌদি আরবের ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক অভিজাতদের আটক রাখা হয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও সে অভিযোগ অস্বীকার করছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।

সমালোচকদের দাবি, যুবরাজ মোহাম্মদ ক্ষমতাকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতেই এমন আয়োজন করেছেন। এতে বেশ কিছু বিদেশি বিনিয়োগকারীকেও অস্থিতিশীল করে তুলেছেন তিনি। যদিও যুবরাজ তেল সম্পদ থেকে বেরিয়ে দেশের অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করার কথা বলে আসছেন।

গত ২ অক্টোবর ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটে আততায়ীরা সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এতে পশ্চিমা দেশগুলোতে সৌদি যুবরাজের খ্যাতি নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে।

এ ছাড়া ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের ভূমিকা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা দেশটিকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ফেলে দেয়।

পাশ্চাত্যে এমবিএস নামে পরিচিত সৌদি যুবরাজ নিজের এ অভিযানকে ‘শক থেরাপি’ কিংবা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আকস্মিক আঘাত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সৌদি অর্থনীতিতে নতুন করে সংস্কার করার দাবি করেছেন তিনি।

ওয়াশিংটনে আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের আবাসিক স্কলার কারেন ইয়ং বলেন, সৌদি আরবের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সফল হয়েছে কিনা, তা বলা মুশকিল। এর মধ্যে ভালো খবর হচ্ছে- সরকার আভাস দিয়েছে যে তারা এগিয়ে যেতে চায়।

তিনি বলেন, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রনীতি ও ঘরোয়া রাজনীতি, বিশেষভাবে নাগরিক অ্যাকটিভিস্টদের ওপর যে আচরণ করা হচ্ছে, তা নিয়ে পাশ্চাত্যে ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে।

সৌদি নীতিকে নিয়মিত সমর্থন করে যাওয়া ওয়াশিংটনে অ্যারাবিয়া ফাউন্ডেশনের প্রধান আলী শিহাবি বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতা মেনে চলা হচ্ছে না বলে যে অভিযোগ পাশ্চাত্যের দেশগুলো করে আসছে, তা নিরসন চেষ্টার সরকারি প্রতিফলন হচ্ছে সৌদি আরবের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান বন্ধ করা।

তিনি বলেন, সমালোচকরা এখন আটক ও মামলার ঘটনাগুলোতে নাম প্রকাশ না করায় হতাশা ব্যক্ত করবেন। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আটক ব্যক্তিরাই তাদের নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না।

অভিযানে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের চাচতো ভাই বিনিয়োগকারী ধনকুবের প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালাল, ন্যাশনাল গার্ড মন্ত্রী প্রিন্স মিতেব বিন আব্দুল্লাহ ও রিয়াদের সাবেক গভর্নর প্রিন্স তুর্কি বিন আব্দুল্লাহকেও দুর্নীতির ফাঁদে ফেলা হয়েছে।

নিজেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্তি পেতে ১০০ কোটি ডলার দিতে রাজি হওয়ায় মিতেবকে আটকের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হয়।

মাস দুয়েক পর আলওয়ালিদও একটি ফয়সালায় পৌঁছান। তিনি বলেন, সরকার ও আমার মধ্যে একটি সমঝোতা নিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু তুর্কির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি।