শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > দুর্ঘটনাকবলিত ২টি লঞ্চই ত্রুটিপূর্ণ ছিল: তদন্ত কর্মকর্তা

দুর্ঘটনাকবলিত ২টি লঞ্চই ত্রুটিপূর্ণ ছিল: তদন্ত কর্মকর্তা

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ সম্প্রতি দুর্ঘটনাকবলিত এমভি মিরাজ-৪ এবং এমভি শাথিল-১ নামের যাত্রীবাহী দুটি লঞ্চেরই অবকাঠামোগতভাবে ত্রুটি ছিল।
অনুমোদিত নকশা ও নৌযান দুটির প্রকৃত অবস্থার সঙ্গে ব্যাপক অমিল রয়েছে। দুটি নৌযানেরই মাস্টার (চালক) ছিলেন অদক্ষ। এ ছাড়া মিরাজ লঞ্চটি চালাচ্ছিলেন অননুমোদিত একজন মাস্টার।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি নিশ্চিত হয়েছে, কালবৈশাখীর কবলে পড়ে লঞ্চডুবির কথা বলা হলেও প্রকৃত অর্থে নৌযান দুটি ছিল খুবই ত্রুটিপূর্ণ। চলাচলের অনুপযোগিতা সত্ত্বেও সেগুলোকে উপযোগীর সনদ দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ারের পত্রে এবং তার দেওয়া ফিটনেস সনদে এমভি শাথিল-১ এর তলদেশের গভীরতা দেখানো হয়েছে এক দশমিক ৬৮ মিটার। কিন্তু বাস্তবে পাওয়া গেছে মাত্র শূন্য দশমিক ৯ মিটার। আয়তনের তুলনায় তলদেশের গভীরতা অনেক কম হওয়ায় সামান্য ঝড়েই ভারসাম্য হারিয়ে লঞ্চটি ডুবে যায় বলে তদন্ত কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন।

লঞ্চডুবি ও প্রাণহানির ঘটনায় ইতিমধ্যে এমভি শাথিলের ফিটনেস প্রদানকারী কর্মকর্তা সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের বরিশাল অফিসের প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক মো. মুঈনউদ্দিন জুলফিকারকে কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করে ঢাকায় প্রধান কার্যালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। তবে এমভি মিরাজ-৪ এর ফিটনসে প্রদানকারী ঢাকা অফিসের প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারকের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বার্ষিক সার্ভে (ফিটনেস) এবং চালকদের মাস্টারশিপ সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দায়িত্বশীল ও সতর্ক হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি অনেকাংশেই এড়ানো সম্ভব।

পরিবেশ ও নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠনগুলোর অভিযোগ, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ত্রুটিপূর্ণ নৌযানের ফিটনেস এবং অদক্ষ ব্যক্তিদের মাস্টারশিপ সনদ দেওয়ার কারণেই নৌপথে দুর্ঘটনায় প্রাণ ও সম্পদহানি ঘটছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. আব্দুর রহিম বলেন, ‘দুর্ঘটনার অন্যতম দুটি প্রধান কারণ হচ্ছে- নৌযানের অবকাঠামোগত ত্রুটি এবং পরিচালনায় অদক্ষতা। দুর্ঘটনা এড়াতে নৌযানের ফিটনেস প্রদানের আগে অনুমোদিত নকশা ও সংশ্লিষ্ট বিধিবিধানগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ এবং দক্ষ মাস্টার নিয়োগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ।’

গত ১৫ মে দুপুরে ঢাকার সদরঘাট থেকে তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে শরীয়তপুরের সুরেশ্বরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীতে ডুবে যায় এমভি মিরাজ-৪।

দুর্ঘটনার সময় পেছনে থাকা অপর একটি লঞ্চ থেকে নদীতে ফেলা বয়া ও লাইফ জ্যাকেটের সহায়তায় ৪৫-৫০ জন যাত্রী জীবিত অবস্থায় তীরে ওঠেন। আর তিন দিনে উদ্ধার করা হয় মোট ৫৬টি লাশ। বাকি দুই শতাধিক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁদের স্বজনেরা দাবি করেছেন।

এই ঘটনার ১১ দিন আগে ৩ মে পটুয়াখালীর গলাচিপায় রামদাবাদ নদীতে ডুবে যায় এমভি শাথিল-১। এ দুর্ঘটনায় ২০ জনের লাশ উদ্ধার হলেও ওই লঞ্চযাত্রীদের স্বজনেরা দাবি করেছেন, অন্তত ১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

জল পরিবেশ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ত্রুটিপূর্ণ নৌযানের ফিটনেস এবং অদক্ষ ব্যক্তিদের মাস্টারশিপ সনদ দেওয়ার কারণেই নৌপথে দুর্ঘটনায় প্রাণ ও সম্পদহানি ঘটছে।’

ফিটনেস এবং চালকদের মাস্টারশিপ সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দায়িত্বশীল ও সতর্ক হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। বেঙ্গলিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম