স্টাফ রিপোর্টার ॥ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজার আজ মহাসপ্তমী। শুক্রবার সকালে মহাসপ্তমী বিহিত পুজা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সোমবার দেবীর প্রতীমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ এ উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে সারা দেশে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার।
দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধানতম ধর্মীয় উত্সব শারদীয় দুর্গাপূজা। দুর্গাপূজাকে ঘিরে সারা দেশে শুরু হয়েছে উৎসবের আমেজ। আনন্দময়ী দেবী দুর্গার আগমনী গানে মুখরিত এখন চারদিক। ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে অতিথি আপ্যায়ন। বাহারী পোশাকে আর অঙ্গসজ্জায় নিজেদের সাজিয়ে রাঙ্গিয়ে উৎসব-আনন্দে মেতে উঠেছে শিশু-কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণী।
পঞ্জিকা মতে, এ বছর দেবী দুর্গা শ্বশুরালয় থেকে বাবার বাড়িতে আসছেন দোলায় চড়ে। আর ফিরে যাবেন গজের (হাতি) পিঠে চড়ে। বলা হয়ে থাকে, দেবীর এমন আগমনের ফলে পৃথিবীতে রোগ-ব্যাধি দেখা দেয়। তবে দেবী হাতির পিঠে চড়ে ফিরলে বসুন্ধরার শস্যভাণ্ডার পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এবার ১০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) ষষ্ঠী, ১১ অক্টোবর (শুক্রবার) সপ্তমী, ১২ অক্টোবর (শনিবার) অষ্টমী, ১৩ অক্টোবর (রোববার) নবমী এবং ১৪ অক্টোবর (সোমবার) বিজয় দশমী।
কোথায় কখন, কিভাবে দূর্গাপুজার সূচনা হয় তা সঠিক ভবে বলা মুশকিল। প্রাচীন কাল থেকেই প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে পাঞ্জাবের হরপ্পা ও সিন্ধুর মহেঞ্জোদারোতে দেবীর পূজা হতো। শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং দেবীর পূজা করেছেন। ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায় তৎকালীন শ্রীহট্ট(বর্তমান বাংলাদেশের সিলেট) এর রাজা গনেশ পঞ্চদশ শতকে প্রথম মূর্তিতে দূর্গা পূজা করেন। ষোড়শ শতকে রাজশাহী অঞ্চলের রাজা কংশনারায়ন দুর্গা পূজা করেন। অষ্টাদশ শতকে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র দুর্গা পূজা করেন।
পূর্বে রাজা, জমিদার, মহাজন তথা বিত্তবানরা আতীয়স্বজন সমন্বয়ে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে ধুমধাম করে প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে দুর্গাপূজা করতেন। সাধারন মানুষকে তাদের প্রতিযোগিতা দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন মা এর পূজা সর্বজনীন রূপ লাভ করেছে। ধনী-গরিব-গোত্র-বর্ণ সবাই একসাথে প্রার্থনা করে মায়ের চরনে।
এ বছর সারা দেশে ২৩ হাজারেরও বেশি পূজা মণ্ডপে দূর্গা পূজা হবে। শান্তিপূর্ণ পূজা অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাসহ সবরকম প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দুর্গোৎসব চলাকালে রাজধানীর পূজামণ্ডপে প্রতিদিনই অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ-আরতি হবে। এছাড়া পূজা মণ্ডপগুলোতে আলোকসজ্জা, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে ২৪ অক্টোবর সরকারি ছুটি থাকবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।
রাজধানীতে কেন্দ্রীয় পূজা মণ্ডপ ঢাকেশ^রী জাতীয় মন্দিরে শনিবার মহাঅষ্টমীর দিন দুপুরে মহাপ্রসাদ বিতরণ, মহানবমীর সন্ধ্যায় আরতি প্রতিযোগিতা এবং দশমী পূজার দিন সকালে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও বিকেলে বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। রামকৃষ্ণ মিশনে এবছরও মহাঅষ্টমী ও কুমারী পূজা হবে। এ ছাড়া ঐতিহ্যবাহী রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রমে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দুর্গা পূজা উপলক্ষে স্বামীবাগের লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম ও মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দির ও সংগঠনের মণ্ডপে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।