বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: পণ্য ও খাদ্য আমদানির নামে দুবাইয়ে প্রায় ২১৬ কোটি টাকা পাঁচার করেছে মেসার্স ফয়েজ উদ্দিন অ্যান্ড কোম্পানি নামের একটি পুরান ঢাকার প্রতিষ্ঠান। অভিযোগটি অনুসন্ধানে কোম্পানিটির ব্যাপারে তথ্য জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ৫টি প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সবাই তাদের তথ্য সরবরাহ করলেও বেঁকে বসেছেন বাকি দুটি ব্যাংক। তারা আইনের ধারা দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এই ব্যাংক দুটি হলো, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এবং সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।
দুদক সূত্র জানায়, দুবাই থেকে পণ্য আমদানির নামে তিন ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণপত্র খোলে পুরান ঢাকার মিডফোর্ড এলাকার রাসায়নিক পণ্য ও খাদ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফয়েজ উদ্দিন অ্যান্ড কোম্পানি। কিন্তু পণ্য না নিয়ে এসে পাচার করা হয়েছে প্রায় ২১৬ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনে দুবাইয়ে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের এ প্রমাণ পাওয়া যায়। আর এই অভিযোগটি দুদকে আসলে তা আমলে নিয়ে সহকারী পরিচালক দেবব্রত মন্ডলকে অনুসন্ধনী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয় কমিশন।
তিনি অনুসন্ধানের স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, আরাফা ইসলামী ব্যাংক এবং ঢাকা ব্যাংকের কাছে কোম্পানিটির ঋণসংক্রান্ত তথ্য চেয়ে চিঠি দেন। গত ১২ আগস্ট পাঠানো এসব পৃথক চিঠিতে আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়।
কিন্তু সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং আরাফা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ গত ২ আগস্টে ডিএফআইএম সার্কুলার নম্বর-৭ অনুযায়ী বলা আছে- দুদক সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে দুদক আইন-২০০৪ এর ১৯(১) (ঘ) ধারার ক্ষমতা বলে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বা বাণিজ্যিক ব্যাংক হতে অভিযুক্ত ব্যাক্তির তথ্য চেয়ে থাকে। প্রকৃত পক্ষে ব্যাংকার্স বুক অফ এভিডেন্স এ্যাক্ট এবং কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর (সিআরপিসি) এর ধারা অনুযায়ী আদালতের সুনির্দিষ্ট আদেশ ব্যতিত হিসাবধারী বা আমানতকারীর সংক্রান্ত তথ্য কোনো পক্ষকে প্রদানের সুযোগ নেই। যার প্রেক্ষিতে আপনাদের পত্রে বর্ণিত তথ্য ও নথিপত্র প্রদান হতে আমরা বিরত থাকলাম।’
তবে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ওই দুই ব্যাংক হতে মেসার্স ফয়েজ উদ্দিন অ্যান্ড কোম্পানির খোলা ব্যাংক হিসেবে ঋণপত্র খুলে দুবাইভিত্তিক কোম্পানি মোহসেন আল ব্রাইকি জেনারেল ট্রেডিং পণ্য আমদানি সংক্রান্ত ব্যাংকে রক্ষিত সকল রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ছায়া লিপি চেয়েছি। যেমন-এলসি, বিল অফ এন্ট্রি, কমার্শিয়াল ইনভয়েস এবং বিল অফ ল্যাডিং ইত্যাদি। সেই সঙ্গে এসব বিষয়ে ব্যাংকের কোনো অভ্যান্তরীণ নিরীক্ষা বা তদন্ত হয়ে থাকলে সেই প্রতিবেদনের সত্যায়িত অনুলিপি। কিন্তু এলসি, বিল অফ এন্ট্রি, কমার্শিয়াল ইনভয়েস বিল অফ ল্যাডিং এগুলো হচ্ছে পাবলিক ডকুমেন্ট এবং তা গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য নয়। তাই এক্ষেত্রে আদলতে নির্দেশনার প্রয়োজন নেই। আর তাই উপরোক্ত তথ্যগুলো জরুরি ভিত্তিতে প্রেরণ করার অনুরোধ করা হয়েছিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু অন্য আইন দেখিয়ে তথ্য দেয়া থেকে বিরত থাকছে প্রতিষ্ঠান দু’টি।’ আর তাদের কাছে এসব তথ্য চেয়ে উপরোক্ত কথাগুলো উল্লেখ করে তাগাদা দিয়ে আবারো চিঠি পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
দুদকে আসা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের বেগম রোকেয়া সরণি শাখায় ফয়েজ উদ্দিন অ্যান্ড কোম্পানির নামে ২০১১ সালের ৭ জুন হিসাব খোলা হয়। একইভাবে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের মৌলভীবাজার শাখায় হিসাব খোলা হয় ২০০৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ও ঢাকা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখায় ২০১২ সালের ১২ আগস্ট। এর মধ্যে পণ্য আমদানির জন্য সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণপত্র খোলা হলেও ৩৩টি ঋণপত্রের মধ্যে পণ্য আমদানি না করেই ২৪টি ঋণপত্রের বিপরীতে ৯৬ লাখ ডলার দুবাইয়ে পাঠিয়ে দেয় মেসার্স ফয়েজ উদ্দিন অ্যান্ড কোম্পানি। আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের মৌলভীবাজার শাখায় খোলা হয় ৫৮টি ঋণপত্র। এর মধ্যে ৩৩টির বিল অব এন্ট্রির সঠিকতা পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ কোনো পণ্যই আমদানি ছাড়াই ওইসব ব্যাংকের মাধ্যমে ভুয়া ঋণপত্রের বিনিময়ে পাঠানো হয়েছে ১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। বাংলামেইল২৪ডটকম