শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > জাতীয় > দুই বয়লারে ১৩৭০০ মেট্রিক টন কয়লা পুড়বে প্রতিদিন

দুই বয়লারে ১৩৭০০ মেট্রিক টন কয়লা পুড়বে প্রতিদিন

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥
কক্সবাজার: মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি এলাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। দেশি-বিদেশি প্রায় পাঁচ হাজার কর্মী দিন-রাত কাজ করছেন প্রকল্প এলাকায়। এখান থেকে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে, যা যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে।

এটি আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এখানে কয়লা পুড়িয়ে উৎপাদন করা হবে বিদ্যুৎ। কয়লা পোড়ানোর জন্য প্রকল্প এলাকায় তৈরি করা হচ্ছে দুটি বয়লার। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এই দুই বয়লারের মাধ্যমে প্রতিদিন ১৩ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন কয়লা পোড়ানো হবে।

সরেজমিন মাতারবাড়ির এই বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দুটি বয়লারের মধ্যে ইতোমধ্যে এক নম্বর বয়লারের পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। পাইলিং করে বয়লারটির বেজমেন্টের ঢালাইও দেয়া হয়েছে। এখন বয়লারটির কাঠামো তৈরির কাজ চলছে।

অন্যদিকে দুই নম্বর বয়লারের পাইলিংয়ের কাজও শেষ হয়েছে। শিগগির বেজমেন্টের ঢালাই দিয়ে এই বয়লারটিরও কাঠামো তৈরির কাজ শুরু হবে।

এক নম্বর বয়লারের কাঠামো তৈরির কাজ করা এক শ্রমিক বলেন, ‘এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবকিছু গুরুত্বপূর্ণ। তবে বয়লারের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। বয়লার ছাড়া এখানে কয়লা পোড়ানো যাবে না। কয়লা না পোড়ানো গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে না।’

‘আবার বয়লারে ত্রুটি থাকলেও কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ তৈরির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে। সে কারণে আমরা বয়লারে কাজ করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছি। সম্পূর্ণ নিখুঁতভাবে বয়লার তৈরি করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই বয়লারের কাজ শেষ হবে।’

বয়লারের কাঠামো তৈরির কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরেক শ্রমিক বলেন, ‘এ প্রকল্পের সব ধরনের কাজ করা হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। কয়লা পোড়ানোর সময় যেন কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা না থাকে, সেসব বিষয় নিশ্চিত করেই বয়লার তৈরি করা হচ্ছে। যে গতিতে কাজ চলছে, তাতে বয়লার পূর্ণ অবয়ব পেতে খুব বেশি সময় লাগবে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বয়লার তৈরির কাজ শেষ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ বয়লারের জন্য পাইলিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে দুটি বয়লারের পাইলিং শেষ হয়েছে। পাইলিং করে এক নম্বর বয়লারের বেজমেন্ট ঢালাই দেয়া হয়েছে। এখন দেখতে দেখতে কাঠামোর কাজ শেষ হয়ে যাবে। দুটি বয়লারই এক ধরনের এবং একই ক্ষমতাসম্পন্ন হবে।’

প্রকল্পের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য যে দুটি বয়লার তৈরি করা হচ্ছে তার মাধ্যমে প্রতিদিন ১৩ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন কয়লা পোড়ানো যাবে। কয়লা পোড়ানোর ফলে যে ছাই তৈরি হবে, তা পরিবেশবান্ধব উপায়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের সব কাজ শেষ হবে।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মাতারবাড়ি আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দিন-রাত প্রকল্পের কাজ চলছে। বর্তমানে প্রায় সাড়ে চার হাজার কর্মী প্রকল্পের মধ্যে কাজ করছেন। করোনার মধ্যেও আমাদের কাজ থেমে থাকেনি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের সব কাজ শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি।’

তিনি বলেন, ‘এখানে যে পাওয়ার প্লান্ট করা হচ্ছে তা অত্যাধুনিক। এটি জাপানি প্রতিষ্ঠান করছে, যদিও জাপানেই এখন এটা বাস্তবায়ন হয়নি। এ প্রকল্পে যা কিছু আছে সবই অত্যাধুনিক।’

প্রকল্প সূত্র জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে মোট খরচ হচ্ছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। তার মধ্যে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি তিন লাখ টাকা। বাকি সাত হাজার ৪৫ কোটি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার ও সিপিজিসিবিএল। প্রকল্পটি ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) আওতায় বাস্তবায়নাধীন এই বিদ্যুতের প্রকল্পে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রথম ইউনিট এবং জুলাইয়ে দ্বিতীয় ইউনিট চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২৬ সালের জুলাইয়ে ওয়ারেন্টি পিরিয়ড সমাপ্তির লক্ষ্য নিয়ে বর্তমানে কাজ চলছে। সূত্র: জাগোনিউজ।