রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > দিনভর তার খোঁজ ॥ লতিফের ফেরা নিয়ে রহস্য কেন?

দিনভর তার খোঁজ ॥ লতিফের ফেরা নিয়ে রহস্য কেন?

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা : সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর হঠাৎ ঢাকা ফেরা অনেকটাই রহস্যঘন। কী কারণে ঝুঁকি নিয়ে গোপনে লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফিরলেন- এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজে বের করাই ছিল রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের আলোচনায়। সর্বমহলে এ প্রশ্নটি ঘুরপাক খেলেও জবাব স্পষ্ট নয়। রহস্যটি আরও ঘনীভূত হয়েছে ঢাকায় ফিরেই লতিফ সিদ্দিকী আত্মগোপনে যাওয়ায়। রবিবার রাতে ঢাকায় ফেরার পর থেকে তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সংস্থার কাছ থেকেও এ বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দেশে ফেরা আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আগাম জামিন চাইতে হাইকোর্টে এসেছেন বলে গতকাল গুজব ছড়িয়ে পড়ে। দিনভর এ নিয়ে গুঞ্জন থাকলেও দেখা মেলেনি তার। সকাল থেকে মিডিয়াকর্মীসহ কৌতূহলী মানুষের দৃষ্টি ছিল উচ্চ আদালতের দিকে।

ধারণা ছিল, জামিন নিতে তিনি সশরীরে উচ্চ আদালতে যাবেন। কিন্তু তাকে কেউ কোথাও দেখতে পাননি। তিনি কোথায় ছিলেন, তার অবস্থান কখন কোথায় ছিল- এসব নিয়েও গুজবের যেন শেষ ছিল না। তবে তার জামিনের কোনো আবেদন জমা পড়েনি বলে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করতে পুলিশকে তাগিদ দিয়েছেন আদালত।
লতিফ কোথায় : এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে রবিবার রাত ৮টা ২১ মিনিটে ঢাকায় ফিরে বিমানবন্দর ত্যাগ করার পর লতিফ সিদ্দিকী রয়েছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তত্ত্বাবধানে- এমন ধারণা করছেন অনেকেই। তবে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর কোনো সংস্থাই তা স্বীকার করেনি। লতিফ সিদ্দিকী ধানমন্ডির বাসায় আছেন এমন গুজব ছিল চারদিকে। সেই বাড়িতেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি সেখানে যাননি। তার ভাই-বোন আত্মীয়স্বজনের বাসাতেও খোঁজ নেওয়া হয়। কিন্তু সে সব বাসাতেও তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। সরকারদলীয় নেতা-কর্মী বা তার রাজনৈতিক সহকর্মীদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছেন- এমন কোনো তথ্যও নেই কারও কাছে। নিজ এবং আত্মীয়স্বজনের বাড়ি, রাজনৈতিক সহকর্মী বা বন্ধুবান্ধবের কাছে খোঁজ নিয়েও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি তা ধরেননি। রবিবার বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে চড়ে লাপাত্তা বনে যাওয়া বিতর্কিত এই এমপির কোনো খোঁজ না পাওয়ায় আবারও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, লতিফ এখন কোথায়?গুজব আর গুঞ্জন : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক নূরুল ইসলাম সুজনকে উদ্ধৃত করে সকালে কয়েকটি টেলিভিশন ও অনলাইনের খবরে বলা হয়, জামিন চাইতে লতিফ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে এসেছেন।সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে তারা এ বিষয়ে আবেদন করবেন। সংবাদ মাধ্যমগুলোর ওই খবরে লতিফের আদালতে আসার গুঞ্জনে জোর হাওয়া পায়। মুহূর্তে সারা দেশেই লতিফকে নিয়ে গুজবের ডালপালা ছড়িয়ে পড়ে।কিন্তু ঘণ্টাখানেক পর সুজন বিষয়টি অস্বীকার করেন।
সাংবাদিককে তিনি বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকী নামে কোনো মক্কেল আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তার পক্ষেও কেউ যোগাযোগ করেননি। তার সঙ্গে আমার কথাও হয়নি। তিনি হাইকোর্টে এসেছেন এমন কথাও আমি কাউকে বলিনি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সুজন বলেন, যারা বলছেন, তারা নিজ দায়িত্বে বলছেন। তবে লতিফের আসার খবরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বিএনপিপন্থি একদল আইনজীবী।
কঠোর গোপনীয়তা : ঢাকা ফেরার বিষয়টিকে গোপনই রেখেছিলেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। এমনকি তার ঘনিষ্ঠজনদেরও জানাননি। যেমন গতকাল সন্ধ্যায় লতিফ সিদ্দিকীর এক নিকটাত্মীয়ের কাছে জানতে চাওয়া হলে বললেন, আমাদের কিছুই জানাননি।একই কথা জানান টাঙ্গাইলে লতিফ সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এক আওয়ামী লীগ নেতাও।
অন্ধকারে ছিল পুলিশ : লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফিরছেন। এমন তথ্য হাতেগোনা সরকারি কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ছিল। পুলিশেরও ছিল অজানা। শীর্ষ পর্যায়ের মধ্যেই বিষয়টি রাখা হয়। রবিবার রাত ৮টা ২১ মিনিটে লতিফ সিদ্দিকীকে বহন করা এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটটি ঢাকার মাটি ছোঁয়ার ঠিক ১৫ মিনিট আগে পুলিশ ও অন্য সংস্থাগুলোকে সতর্ক করা হয়। লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারে খুব দ্রুত প্রস্তুতি নিতে থাকে পুলিশ। বিমানবন্দর ও উত্তরা থানা পুলিশও প্রস্তুত। আরও প্রস্তুত এপিবিএন। এয়ার ইন্ডিয়া অবতরণের সঙ্গে সঙ্গেই পুরো বিমানবন্দরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা দেয়। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি করতে থাকেন। গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা এ সময় তার সঙ্গে বার বার কথা বলেছেন। আবার কোনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তা ওয়াকিটকির মাধ্যমে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা চাচ্ছিলেন। কোনো নির্দেশ না পেয়ে পুলিশও পড়ে যায় অনেকটা বেকায়দায়। উপরমহল থেকে গ্রেফতারের নির্দেশ না আসায় রাত ৯টা ২৬ মিনিটে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল দিয়ে লতিফ সিদ্দিকীকে বের করে দেওয়া হয়। তবে এখনো পর্যন্ত তাকে গ্রেফতারে পুলিশের কাছে কোনো নির্দেশনা পৌঁছেনি। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করতে পারবে কি পারবে না, সেই সিদ্ধান্ত নেই এখনো পুলিশের কাছে। এখনো ‘উপরমহলের’ নির্দেশ না আসায় লতিফ সিদ্দিকী আপাতত গ্রেফতার হচ্ছেন না। আদালতের নির্দেশ থাকার পরও তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তিনি আমাদের নজরদারির মধ্যেই আছেন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা গতকাল রাতে বলেন, লতিফ সিদ্দিকী আমাদের নজরদারির মধ্যেই আছেন। সিগন্যাল পেলেই তাকে গ্রেফতার করা হবে। যতক্ষণ সরকার আমাদের নির্দেশ না দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে না।নিউইয়র্কে পবিত্র হজ, মহানবী (সা.) ও তাবলিগ জামাত নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে আঘাত দেওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলায় লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে বেশকিছু মামলা হয়। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও সমন জারি করা হয়েছে। লতিফ সিদ্দিকী নিরাপদে দেশে ফেরায় ক্ষুব্ধ দেশের ইসলামী দল ও সংগঠনগুলো। এসব সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে গ্রেফতারের আলটিমেটাম দিয়ে হরতালসহ নানা কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয় লতিফ সিদ্দিকীকে। আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও তাকে বাদ দেওয়া হয়। এই ডামাডোলের মধ্যে দেশে না ফিরে প্রায় দুই মাস ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করেন লতিফ সিদ্দিকী। সাংবাদিকদের প্রশ্নে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছেন সে অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।টাঙ্গাইলে প্রভাবশালী সিদ্দিকীদের জ্যেষ্ঠ ভাই ৭৭ বছর বয়সী লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। গত মহাজোট সরকারের পাট ও বস্ত্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন লতিফ সিদ্দিকী। শেখ হাসিনা টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর চলতি বছরের শুরুতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাকে।
বিডি-প্রতিদিন