বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা চালুর ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু এখনো পর্যন্ত স্থানীয় কর্মকর্তাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ফলে, উপজেলা পর্যায়ে এ সেবার মুখ দেখছেন না সাধারণ নাগরিকেরা।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, কোনো কারণ ছাড়াই তড়িঘড়ি করে অনলাইন সেবা চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তাই, এ সেবাটিও ঢাকাকেন্দ্রিক। এর মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে জাতীয় পরিচয়পত্র উত্তোলন, সংশোধনের জন্য প্রকৃতপক্ষে কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে কর্মকর্তাদেরও অনলাইন সেবা প্রদানের বিষয়ে কোনো দিক-নির্দেশনা বা গাইড লাইন দেয়নি নির্বাচন কমিশন। ফলে, গ্রাহক পর্যায়ে এ সেবা পৌঁছাতে পারছে না।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ইসি সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অনলাইন সেবা চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেদিন তিনি বলেন, ‘আজ থেকে অনলাইন সেবা শুরু করতে যাচ্ছি। এর মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রায় এ সেবা সবার কাছে পৌঁছে যাবে।’
সেদিন জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অণুবিভাগের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ বলেন, অনলাইন আবেদনের মাধমে জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রদর্শিত-অপ্রদর্শিত তথ্য দেখা ও হালনাগাদ, তথ্য সংশোধনের জন্য বাড়ি বসেই সুযোগ মতো ব্যবহারকারী নিজেই আবেদন করতে পারবেন।
এছাড়া ভুল সংশোধনের জন্য সুযোগ মতো অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া, নতুন ভোটার নিবন্ধন আবেদন, আবেদন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ, নিজের পছন্দ মতো উপজেলা থেকে কার্ড সংগ্রহ, পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সেবার হালনাগাদ তথ্য জানা, সার্বিক প্রক্রিয়া শেষ হলে বিতরণের সময়সূচি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নোটিফিকেশন পাওয়া এবং ভোটের সময় ভোটকেন্দ্রের তথ্যও জানা যাবে।
কিন্তু প্রকৃত চিত্র হচ্ছে, অনলাইন সেবা চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ ছাড়া আর কিছুই করা যাচ্ছে না। ঢাকার বাইরের সেবাগ্রহীতারা নিজের ঘরে ফরম পূরণ করছেন ঠিকই। তবে সেই আবেদনের একটি সফটওয়্যার জেনারেটেড কপি ডাউনলোড করে প্রিন্ট কপি জমা দিতে হচ্ছে।
এক্ষেত্রেও আবার স্থানীয় উপজেলা কর্মকর্তা সে প্রিন্ট কপি বা হার্ডকপি জমা নিচ্ছেন না। তারা বলছেন, অনলাইনের আবেদন হার্ডকপি জমা নেওয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা ইসি থেকে আসেনি। এতে করে সেবাগ্রহীতাকে ঢাকাতেই আসতে হচ্ছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি, বিষয়টি স্থানীয় কর্মকর্তাদের নির্বাচন কমিশনের সমন্বয় সভাতেও আলোচিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ওই সভাতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য একটি গাইড লাইন দ্রুত জারির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সভার আগেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল এনআইডি অণুবিভাগকে এবং বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ‘অজ্ঞাত’ কারণে বাস্তবায়ন প্রতিবেদনও দাখিল করা হয়নি।
এ বিষয়ে এনআইডি অণুবিভাগের মহাপরিচালক সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ বলেন, ভবিষ্যতে স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে যাদের এখন লেমিনেটেড কার্ড আছে, তারাই প্রথমে পাবেন। তাই, যাদের ভুল আছে, তারা যেন খুব সহজে সংশোধন করতে পারেন, এজন্যই এই সেবাটি চালু করা হয়েছিল। তবে অনলাইনে আবেদন পূরণ করে স্থানীয় নির্বাচন কার্যালয়েই হার্ডকপি জমা দিলে বিষয়টি মীমাংসা হওয়ার কথা। এছাড়া ভবিষ্যতে এ সেবাটি আরো সহজতর করা হবে।
তবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা অনলাইনে করা আবেদনপত্রের হার্ডকপি জমা নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ সাধারণ নাগরিকদের।
আমিনুর রহমান (উপজেলার নাম প্রকাশ করতে চাননি) নামে এক ভুক্তভোগী বাংলানিউজকে বলেন, আমি অনলাইনে ভুল সংশোধনের আবেদন করে আমার উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী উপজেলাতেও হার্ডকপি জমা দেওয়া জন্য নিয়ে গেছি। কিন্তু কর্মকর্তারা তা গ্রহণ করেননি। বরং তারা ভালো ফল পেতে ঢাকা যেতে বলেছেন। একইসঙ্গে এ বিষয়ে তাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলেও জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেছেন, অনলাইন সেবা চালুর পর স্থানীয় কর্মকর্তাদের কোনো দিক-নির্দেশনা বা কোনো ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি, যা অত্যন্ত জরুরি। কেননা, জাতীয় পরিচয়পত্রে অনলাইন সেবাটি খুবই টেকনিক্যাল একটি বিষয়। বাংলানিউজ