‘দলিল যার, জমি তার’ আইন হওয়ার পরেও সুফল পাচ্ছে না গাজীপুরবাসী

স্টাফ রিপোর্টার:
গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল-২০২৩’ পাস হওয়ার পরেও তার সুফল মিলছে না সাধারণ মানুষের মধ্যে। জমির তিনটি রেকর্ড থাকার পরেও প্রতিনিয়ত বন বিভাগের গেজেটের নামে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। গেজেট থেকে মুক্তি পেতে সীমানা নির্ধারণের জন্য ডিমারকেশনের আবেদন করেও মুক্তি পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা।
খাতা কলমে জমিনের মালিকানা থাকার পরেও শুধুমাত্র সীমানা জটিলতায় বিভিন্ন মামলার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ব্যক্তি মালিকানা জমিও গেজেট থাকার কারণে বন বিভাগের কর্মকর্তারা দখল নিয়ে চারা রোপন করছে।
এমনই এক ঘটনার শিকার হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর এলাকার মৃত আলাল উদ্দিনের পুত্র রিপন ও দোলাল।
ভুক্তভোগী রিপন জানান, ৪নং ধনুয়া মৌজার এসএ ৭১ খতিয়ানে এসএ ১৭৭৩ দাগ, আরএস ১১২৭ খতিয়ানে আর এস ৬৯৪৫ দাগে মালিকানা রেকর্ডীয় কাগজপত্র থাকার পরেও বন বিভাগের কর্মকর্তারা গেজেটের নামে কয়েক বছর আগের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে সেই জমিতে চারা রোপন করেছে। প্রায় বছর খানেক আগে সীমানা নির্ধারণের জন্য আবেদন করেও বন বিভাগের কর্মকর্তারা সীমানা নির্ধারণ করে দিচ্ছে না। আবার অন্যদিকে আমার তিনটি রেকর্ড থাকা সত্তে¡ও জমির উপর থাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করে বনের চারা রোপণ করেছে বন বিভাগের কর্মকর্তারা। এতে করে আমাদের লাখ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর আগেও একবার আমাদের কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করে। এ সময় ছোট ভাইকে ধরে নিয়ে গিয়ে অন্য আরেক খাস জমিনের দাগ নাম্বার উল্লেখ্য করে বন আইলে মামলা দিয়েছে। পরে আমাদের জমিনের কাগজপত্র আদালতে দেখালে আদালত আমার ভাইকে পরের দিনই জামিন দিয়ে দেয়।
তিনি আরো জানান, আমাদের এখানে বনের নামে কোন জমি নেই। শুধুমাত্র পার্ট গেজেট রয়েছে। তার জন্য আমরা গত বছরের ১৮/৪/২০২৩ তারিখে ঢাকা বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে সীমানা নির্ধারণের জন্য আবেদন করি। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ নুরুল করিম সীমানা নির্ধারণ করে ডিমারকেশন করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষদের নির্দেশ দিয়ে একটি নোটিশ প্রেরণ করেন। প্রায় বছরখানেক হলেও তার কোন সুফল পাচ্ছিনা। উল্টো মামলা হামলা সহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হচ্ছি। তাছাড়া ১৭৭৩ দাগে মোট ১৮৯ একর ৫৯ শতাংশ জমি রয়েছে, তার ভিতর ২০ একর ৫৮ শতাংশ জমি বনের রয়েছে। এই ১৭৭৩ দাগে গেজেট থাকলেও অনেক শিল্প কারখানা সহ বাসাবাড়ি স্থাপন করা হয়েছে। কারো কোন সমস্যা হয়নি। বন বিভাগের কর্মকর্তার কাউকে বাধা দেয়নি। আজ আমাকে প্রতিনিয়ত হয়রানি করা হচ্ছে। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এর ন্যায় বিচার চাই এবং ‘দলিল যার, জমি তার’’ আমরা এই আইনের বাস্তবায়ন চাই।
অপরদিকে যাদের দলিল আছে, কিন্তু বনের গেজেটে অন্তর্র্ভূক্ত (পার্টবন) তারা নিজের জমি বেচাকেনা, হস্তান্তর কিংবা ভোগদখল অনেকাংশে করতে পারছেন না। এমন ভুক্তভুগি হাজার হাজার লোক রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই গাজীপুর জেলা প্রশাসনে ডিমারগেশন করার জন্য বছরের পর বছর অফিস পাড়ায় ঘুরে সুরাহা পাচ্ছেন না এমন অভিযোগ অনেক ভুক্তভুগির। তাদের অভিযোগ, জেলা প্রশাসনে আবেদন করার পর সংশ্লিষ্ট উপজেলা ভূমি অফিস, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ঘুরেও আবেদনের কোন কূলকিনারা পাওয়া যায় না। ফাইলের পিছনে ঘুরতে ঘুরতে সমাধানের আশা ছেড়ে দিয়েছেন এমন অনেক ভুক্তভুগি।
ঢাকা বিভাগীয় সহকারী বন সংরক্ষক আরিফিন শুভ অভিযান পরিচালনার সময় সাংবাদিকদের জানান, এখানে ১৭৭৩ দাগে গেজেট ভুক্ত বনভূমি। এখানে পাবলিককে কোন রেকর্ড দেওয়া হয়নি এবং এখানে কোন পার্ট নাই অংশ নাই’ ১৭৭৩ দাগে সকল জমি গেজেট ভুক্ত। যেহেতু এ জায়গায় আমরা গেজেটভুক্ত বনভূমি পেয়েছি। তাই বনের চারা রোপন করা হচ্ছে।
স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, যেহেতু এটা বন বিভাগের গেজেটভুক্ত জমি। বন আইনের ৬৬ ধারায় বলা আছে, যদি বন আইনে অপরাধ সংগঠিত হয় সেখানে বন বিভাগের কর্মকর্তারা বাধা প্রদানের জন্য হস্তক্ষেপ কামনা করতে পারবে। বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী এখানে এনে নির্মাণের জন্য পায়তারা করছে। আমরা তা বাঁধা দেওয়ার জন্য হস্তক্ষেপ কামনা করেছি।
গাজীপুর জেলার সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট হায়দার আলী জনান, বন আইনের অধ্যায় ৫ এর ৩৮শের (১) ধারায় বলা আছে ব্যক্তি মালিকানাধীন বন অধ্যাদেশ, ১৯৫৯ (১৯৫৯ সালের ই,পি, অধ্যাদেশ নম্বর ৩৪) এর ধারা ৬ এর উপ-ধারা (২) ধারা ৭ বা ধারা ১১ এর অধীন বন বিভাগ কারো ব্যক্তি মালিকানাধীন বনের উপর নিয়ন্ত্রণের অধিকার বা দাবীর চেষ্টা করতে পারবে না। এবং (২) এর ধারার অধ্যাদেশ নম্বর ৩৪) এর ধারা ৩ এর অধীন বন বিভাগ ব্যক্তি মালিকানাধীন বনের জন্য কার্যকরী পরিকল্পনার চাহিদা ও কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারবে না।
আর বন আইনের ৬৬ ধারায় বলা আছে। প্রত্যেক বন কর্মকর্তা এবং পুলিশ কর্মকর্তা, যে কোন বন অপরাধ সংঘটনে বাধা প্রদান করবেন এবং বাধা প্রদানের উদ্দেশ্যে হস্তক্ষেপ করতে পারেন। আর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য আদালতের নির্দেশ লাগবে।
ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তি বন বিভাগের গেজেট ভুক্ত থাকায় স্থাপনা করতে প্রতিনিয়তই বন কর্মকর্তাদের বাধার সম্মুখীন হচ্ছে শুধুমাত্র সীমানা নির্ধারণের জন্য। সীমানা নির্ধারণ বা ডিমারকেশনের আবেদনের জন্য গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। তা না হলে সময় মত আবেদন করেও তার সুফল পাচ্ছে না বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগী আরো জানান, অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল-২০২৩ নতুন এ আইনে বলা হয়েছে ‘দলিল যার, জমি তার’ এবং দলিল বা আদালতের আদেশের মাধ্যমে কোনও মালিকানা না থাকলে দখলের অধিকার প্রাপ্ত না হলে কোনও ব্যক্তি ওই ভূমি দখলে রাখতে পারবেন না। আর যদি অবৈধ দখলের চেষ্টা করে সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদন্ড ও অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে।
সাধারণ মানুষ বলছেন, এ সমস্ত হয়রানি থেকে রেহাই পেতে দ্রুত আইনের বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি বানানো দরকার।

শেয়ার করুন

Related News

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫