শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > থমকে আছে ঢাকা মহানগর বিএনপি পুনর্গঠন

থমকে আছে ঢাকা মহানগর বিএনপি পুনর্গঠন

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সারা দেশে ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা, জেলা ও মহানগর বিএনপি কাজ শুরু করলেও ঢাকা মহানগর বিএনপিতে দৃশ্যমান কোনো কাজ নেই।

ঢাকার দুই কাণ্ডারি মির্জা আব্বাস ও হাবীব উন নবী খান সোহেল গ্রেপ্তার এড়াতে এখনো রয়েছেন আত্মগোপনে। খালেদা জিয়ার প্রোগ্রামে মাঝে-মধ্যে হাবিব উন নবী খান সোহেলের দেখা মিললেও মির্জা আব্বাসের দেখা মিলছে না কোথাও। স্ত্রী আফরোজা আব্বাস সামলাচ্ছেন দলীয় কর্মকাণ্ড।

সূত্রমতে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না হলেও দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সারাদেশে যে তৎপরতা শুরু হয়েছে, তাতে তৃণমূল পুনর্গঠন নিয়ে আশাবাদী বিএনপি। কিন্তু ঢাকা মহানগর পুনর্গঠন নিয়ে সংশয় কাটছে না দলটির।

ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা ও সদস্য সচিব আব্দুস সালাম এর নেতৃত্বাধীন আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবীব উন নবী খান সোহেলের নেতৃত্বে নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

চার উপদেষ্টা, ছয়জন যুগ্ম আহবায়ক ও ৪৫ জন সদস্য’র সমন্বয়ে গঠিত নতুন আহবায়ক কমিটিকে এক মাসের মধ্যে মহানগরের সব ওয়ার্ড ও থানায় কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তী এক মাসের মধ্যে মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনেরও কথা ছিল।

মহানগরের সব কমিটিই নির্বাচনের মাধ্যমে করার লক্ষে নতুন কমিটিতে উপদেষ্টা করা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, রফিকুল ইসলাম মিয়া, বিলুপ্ত কমিটির আহবায়ক সাদেক হোসেন খোকা ও সদস্য সচিব আবদুস সালামকে। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুকে।

যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয় সালাউদ্দিন আহমেদ, কাজী আবুল বাশার, প্রয়াত নাসির উদ্দীন পিন্টু, এম এ কাইয়ুম, আবুল সাঈদ খান খোকনকে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ, বরকতউল্লা বুলু, সাবেক সংসদ সদস্য এস এ খালেক, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা নাসিরুদ্দীন অসীম, শাহাবুদ্দিন আহমেদকে করা হয় সিনিয়র সদস্য।

এছাড়া ঢাকা মহানগরের ৩৬টি সাংগঠনিক থানার প্রতিটির জন্য একজন করে সদস্য আহ্বায়ক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সূত্রমতে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহতের আন্দোলনে সাদেক হোসেন খোকা ও আব্দুস সালামের কমিটি ‘ব্যর্থ’ হওয়ায় স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ হাইপ্রোফাইল নেতাদের দিয়ে ‘শক্তিশালী’ আহবায়ক কমিটি গঠন করে দেন খালেদা জিয়া। নতুন কমিটিকে ২ মাস সময় বেঁধে দেন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য।

কিন্তু গত ১৪ মাসেও ঢাকা মহানগরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি আব্বাস-সোহেল এর নেতৃত্বাধীন আহ্বায়ক কমিটি।

গত বছর জুলাই মাসে নতুন আহবায়ক কমিটি গঠনের পর ডিসেম্বর পর্যন্ত মোটামুটি কর্ম তৎপরতা দেখা যায় ঢাকা মহানগর বিএনপিতে। ওই সময় ঢাকা মহানগরের সংসদীয় আসনগুলোকে ১৫টি ইউনিটে ভাগ করে নতুন কমিটির উপদেষ্টা, আহবায়ক, সদস্য সচিব, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিনিয়র সদস্যদের আলাদ আলাদাভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয় কমিটি পুনর্গঠনের জন্য।

কিন্তু শুরু থেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিরুদ্ধে ‘পকেট কমিটি’ গঠনের অভিযোগ উঠে। অর্থের বিনিময়ে পছন্দের লোকদের কমিটিতে রাখার অভিযোগে বেশ কয়েকটি জায়গায় কমিটি পুনর্গঠনের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

সূত্রমতে, নানা জটিলতার মধ্যে দিয়েও কমিটি পুনর্গঠনের কাজ এগিয়ে চলছিল ঢাকা মহানগরে। কিন্তু গত ৬ জানুয়ারি গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার পর ঢাকা মহানগর বিএনপির পুনর্গঠন থেমে যায়।

আত্মগোপনে চলে যান কমিটির শীর্ষ নেতা মির্জা আব্বাস, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুস সালাম, হাবীব উন নবী খান সোহেল।

কারাবন্দি হন কমিটির সিনিয়র সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমান উল্লাহ আমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ।

এমন পরিস্থিতিতে কমিটি পুনর্গঠন আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি ঢাকা মহানগর বিএনপির পক্ষে।

কিন্তু টানা ৯২ দিন নিষ্ফল আন্দোলন শেষে গত ৫ এপ্রিল দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয় থেকে বাসায় ফিরে গেলেও ঢাকা মহানগর বিএনপির আত্মগোপনে থাকা নেতারা বাসায় ফিরতে পারেননি। গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল কারামুক্ত হলেও আমান উল্লাহ আমান কারাগারে আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছেন। ফলে গত চৌদ্দ মাসেও ঢাকা মহানগরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি বিএনপি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর বিএনপির সিনিয়র সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা মহানগরের সাংগঠনিক ইউনিটগুলোতে সম্মেলন করে প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ গুছিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু আন্দোলন শুরু হয়ে যাওয়ায় কাজগুলো শেষ করতে পারিনি। ঈদের পর ম্যাডাম লন্ডন থেকে ফিরে এলে আবার কাজ শুরু করব।

ঢাকা মহানগর বিএনপির উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা তো চেষ্টা করেছিলাম বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ঢাকা মহানগর বিএনপি পুনর্গঠনের। কাজও এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আন্দোলন শুরু হওয়ায় মহানগর বিএনপি পুনর্গঠন থেমে যায়। ঈদের পর আবার কাজ শুরু হবে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম