শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > শীর্ষ খবর > ত্রাণ চাই না, বাঁচার জন্য খাবার পানি দেন

ত্রাণ চাই না, বাঁচার জন্য খাবার পানি দেন

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
“স্যার মঙ্গলবার থেকে না খাওয়া। শুকনো খাবার চিঁড়া মুড়ি যা ছিল সব শেষ। বেঁচে থাকার জন্য বন্যার পানি খেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছি। আর পারছি না। আমরা ত্রাণ চাই না। একটু খাবার পানি ব্যবস্থা করে দেন। কোনোরকম জীবনটা বাঁচিয়ে রাখি। একটু দয়া করেন।”-এভাবেই আর্তনাদ করছিলেন ঘরের চালার ওপর আশ্রয় নেয়া গাবসারা ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের কৃষক আবদুল লতিফ ও তার পরিবার। লতিফের পরিবারের মতো হাজার হাজার পরিবারের আর্তনাদ শোনার মতো কেউ নেই। সরকারিভাবে এখনো পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সামগ্রী পাননি তারা। এগিয়ে আসেনি কোনো বেসরকারি সংস্থাও। বন্যার পানিতে বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় অনেকেই ঘরের মধ্যে উচু বাঁশের মাচান পেতে পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। হাজার হাজার মানুষ নিজ ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিবার-পরিজন ও গবাদিপশু নিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি, অন্যের উঁচু জমি ও বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। এদের বেশির ভাগই রয়েছে খোলা আকাশের নিচে। কোন ভালো গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড় করালেই ত্রাণের আশায় ছুটে যাচ্ছে গাড়ির কাছে। কিন্তু ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। সরজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনার পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে গাবসারা, অর্জুনা, গোবিন্দাসী, নিকরাইল ও অলোয়া ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকার ১৭ হাজার বসতবাড়ি বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এতে দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নিমজ্জিত হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন, বোনা আমন, আউশ, বীজতলা ও সবজি বাগান। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৫০টি পোল্ট্রি খামার ও ভেসে গেছে শতাধিক পুকুর। ক্লাস রুমে পানি প্রবেশ করায় ৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ৬টি দাখিল মাদরাসা বন্ধ হয়ে গেছে। স্থগিত করা হয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চলমান দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। নিমজ্জিত হচ্ছে ফসলি জমি। পুরো উপজেলাই বন্যাকবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে বন্যার পানিতে বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় অনেকেই ঘরের মধ্যে উচু বাঁশের মাচান পেতে পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। হাজার হাজার মানুষ নিজ ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিবার-পরিজন ও গবাদিপশু নিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি, অন্যের উঁচু জমি ও বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। এদের অধিকাংশই রয়েছে খোলা আকাশের নিচে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পৌঁছেনি কোনো সাহায্য। এছাড়া টাঙ্গাইল-তারাকান্দি সড়কের ভূঞাপুরের অর্জুনা, কুঠিবয়ড়া, তাড়াই, ভরুয়া ও গোলপেঁচা নামকস্থানে লিকেজ দেখা দেয়ায় এ সড়কটি হুমকির মুখে রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি ভেঙে গেলে টাঙ্গাইলের গোপালপুর, ঘাটাইল ও কালিহাতী উপজেলা তলিয়ে যাবে।
গাবসারা ইউনিয়নের কালিপুর গ্রামের ফরিদা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ‘বানের পানিতে ঘরবাড়ি ডুইবা গেছে। বিপদের মইধ্যে আছি। কেউ খোঁজ নিতে আসে নাই। ভোটের সময় আইলেই আমগর দাম বাইড়া যায়। অহন আমগো কোন দাম নাই।’
অর্জুনার রামাইল গ্রামের আবদুল আজিজ (৫৫) বলেন, ‘যমুনার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। গরু-ছাগল ও পরিবার নিয়ে জোমারবয়ড়া স্কুলে আশ্রয় নিয়েছি। ৩ দিন ধরে কেবল চিঁড়ামুড়ি খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করছি।’
গোবিন্দপুর বাজারের দোকানি আলি হোসেন (৪০) বলেন, ‘চরাঞ্চলের মানুষের কেনাকাটার একমাত্র স্থান গোবিন্দপুর বাজার তলিয়ে যাওয়ায় মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছে না। এতে তারা চরম বেকায়দায় পড়েছে।
গাবসারা ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘আমার ইউনিয়ন পুরোটাই পানির নিচে। এতে অর্ধলাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। অথচ সরকারিভাবে কোনো সাহায্যই পাচ্ছে না ক্ষতিগ্রস্তরা।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। উঁচু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যাতে বন্যার্তরা আশ্রয় নিতে পারে। আটকে পড়াদের উদ্ধারে নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। পর্যাপ্ত শুকনা খাবারের ব্যবস্থা রাখা আছে।’ মানবজমিন