শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > রাজনীতি > তৃণমূলের চূড়ান্ত মত নিচ্ছে বিএনপি

তৃণমূলের চূড়ান্ত মত নিচ্ছে বিএনপি

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
নির্বাচনে বিএনপির যাওয়া উচিত, নাকি আন্দোলন একমাত্র পথ এমন বিষয়ে দলের তৃণমূল নেতাদের সরাসরি মতামত নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন জেলা নেতাদের মোবাইল ফোনে কথা বলে তাদের মত জানতে চাচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বিএনপিতে দ্বিমত থাকলেও অনেক আসনে প্রার্থীর মনোনয়ন ‘নিশ্চিত’ করা হয়েছে। যেসব আসনে প্রার্থিতা নিয়ে বড় ধরনের ঝামেলা নেই, সেখানে একজনের কাছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সবুজ সংকেত যাচ্ছে বলে দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচন ঘিরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একাধিক জরিপ চালিয়েছেন। জরিপে এগিয়ে থাকা প্রার্থী, প্রার্থীর বিগত নির্বাচনগুলোর ফল এবং রাজনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে সবুজ সংকেত দেওয়া হচ্ছে। মনোনয়নে নিশ্চয়তা পাওয়া প্রার্থীদের ‘ইচ্ছা’য় ওই সংসদীয় আসনের সংগঠন গোছানো হচ্ছে।

দলটির একাধিক নেতা জানান, বিএনপি আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে

যাকে প্রার্থী করা হবে, তার নেতৃত্বেই আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করেই খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে।

জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় না করে নির্বাচনে গেলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতোই একতরফা নির্বাচন হবে। এ ক্ষেত্রে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি নির্বাচনের জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে। ৩০০ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অবস্থা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে আছে। তিনি জরিপ করিয়েছেন। যেখানে প্রার্থী প্রায় নিশ্চিত, বড় কোনো ঝামেলাও নেই সেখানে একজনকে আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হচ্ছে।

নোয়াখালী ও রাজশাহী অঞ্চলের দুই নেতাও স্বীকার করেছেন, তাদের মনোনয়নের নিশ্চয়তা দিয়ে কেন্দ্রভিত্তিক পরিকল্পনা তৈরি করতে বলা হয়েছে। দীর্ঘদিন রাজনীতিতে সক্রিয় নয় কিন্তু জনপ্রিয় সিলেট বিভাগের এক নেতাও দাবি করেন, তার মনোনয়নও নিশ্চিত করা হয়েছে। ওই নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে লন্ডনে গিয়ে দেখা করেছেন বলেও জানা গেছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে তারেক রহমান যেভাবে পরিকল্পনায় বৈচিত্র্য আনেন, এবারও ভিন্নভাবে সাজাচ্ছেন। ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচন পরিকল্পনা নতুন আঙ্গিকে করছেন। তার ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের পর সংস্কারপন্থি ইস্যুতে অনেক আসনের সাবেক বেশকিছু সংসদ সদস্য রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। ২০১৪ সালে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় অনেক আসনে উঠতি নেতারা এলাকায় অবস্থান তৈরি করেছেন। তারাও প্রার্থী হতে চান। এমন অবস্থায় বেশকিছু আসনে মনোনয়ন পরিবর্তন হতে পারে।

জানা গেছে, নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত। সে ক্ষেত্রে আন্দোলনের বিষয়টিকে তেমন প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না। নির্বাচনকে ঘিরে সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি তৈরি না হলে আন্দোলনে নাও যেতে পারে বিএনপি।

অবশ্য লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আন্দোলনের কথা বলেছেন। নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন, নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনের ডাক এলে তারা যেন ঝাঁপিয়ে পড়ে। গত মঙ্গলবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির নেতারা বৈঠক করেছেন। কারাবন্দি হওয়ার আগে খালেদা জিয়ার ঘোষণা অনুযায়ী, দায়িত্বপ্রাপ্তদের তৈরি করা নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখার বিকল্প তিন খসড়া প্রস্তাব নেতাদের হাতে হাতে দেওয়া হয়েছে। এ খসড়া প্রস্তাব নিয়ে পরবর্তী বৈঠকে স্থায়ী কমিটির নেতারা তাদের মতামত দেবেন।

স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, এ রূপরেখা নিয়ে সরকারবিরোধী অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে। বিশেষ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐক্য হলে, সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সঙ্গেও রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দিলেই হবে না, বর্তমান সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করবে নির্বাচনকালীন রূপরেখা দেওয়া হবে কিনা। কারণ সরকার না চাইলে এ রূপরেখা দিয়ে কোনো লাভ হবে না।

জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির নেতাদের হাতে সরবরাহ করা নির্বাচনকালীন সরকারের তিন বিকল্প খসড়া করা হয়েছে। প্রতিটি প্রস্তাবে সংসদ ভাঙার বিষয়টিকে রাখা হয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখায় প্রধানমন্ত্রীকে ছুটিতে পাঠিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া অথবা রাষ্ট্রপতির অধীনে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সংস্থাপনসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়া, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা খর্ব করে সব দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের হাতে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এসব প্রস্তাব সংবিধানের মধ্যে বা বাইরে থেকে করা সম্ভব বলে দলটির নেতারা জানান।

স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, নির্বাচনকালীন রূপরেখা দেওয়ার সম্ভাবনা কম। ওই নেতার মতে, যেখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা নেই, সেখানে রূপরেখা দিয়ে কী হবে? সূত্র : আমাদেরসময়