শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > তুরাগ পারে লাখো মুসল্লির জুমা আদায়

তুরাগ পারে লাখো মুসল্লির জুমা আদায়

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা : বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিন লাখো মুসল্লি তুরাগ তীরে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। নিয়মিত তাবলিগ জামাতের বাইরে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশ এলাকার লাখ লাখ মুসল্লি জুমার নামাজে অংশ নেন। ইজতেমা ময়দান যেন তুরাগ তীরে ঢল নেমেছে মুসল্লিদের।

ইজতেমার ময়দান ও আশপাশ এলাকায় শুধু মুসল্লি আর মুসল্লি। শিল্প নগরী টুঙ্গী এখন ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। বৃহত্তর জুমার নামাজের ইমামতি করেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. জোবায়ের।
শুক্রবার বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা এহসানের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। প্রচণ্ড শীত এবং ২০ দলীয় জোটের অবরোধ উপেক্ষা করে মহান আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের আশায় দলে দলে ইজতেমায় শরিক হতে টঙ্গীর তুরাগ তীরে জড়ো হয়েছেন লাখো লাখো মুসল্লি। সকাল পর্যন্ত ৫০টি দেশের ৪ হাজার ৯৮২ বিদেশি মুসল্লি ইজতেমায় যোগ দিয়েছেন।
ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবলিগ মারকাজের শুরা সদস্য ও বুজর্গরা বয়ান পেশ করেন। মূল বয়ান উর্দূতে হলেও বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ করা হয়। ইজতেমায় বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসল্লিরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন করে মুরব্বি মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শুনান।
বিশ্ব ইজতেমার কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আম ও খাস বয়ান, তালিম, তাশকিল, ৬ উছুলের হাকিকত, দরসে কোরআন, দরসে হাদিস, চিল্লায় নাম লেখানো, নতুন জামাত তৈরি, যৌতুক বিহীন বিয়ে।
বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বিএনপির অবরোধের মধ্যে দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা ময়দানে আসতে শুরু করেন। অনেকেই ময়দানে রাতযাপন করেন। শুক্রবার ভোর থেকে রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে লাখো মুসল্লির ঢল নামে। বাস, ট্রাক, ট্রেন, নৌকাসহ বিভিন্ন যানবাহনযোগে এবং পায়ে হেঁটে ময়দানে এসে বৃহত্তম জামাতে জুমার নামাজ আদায় করেন। দুপুর ১২টার আগেই ময়দানের ১৬৫ একর এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এরপর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক কামরপাড়া রোড়সহ আশপাশের খালি জায়গার মধ্যে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।
ইজতেমা ময়দানে কয়েকজন মুসল্লি বলেন, তাঁরা আল্লাহকে রাজিখুশি করতে প্রস্তুত রয়েছেন। এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যাই তাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে কেউ কেউ বলেন, দূর দূরান্তের মুসল্লিদের নিরাপদ যাতায়াতের বিষয়টি সবারই অনুধাবন করা উচিত।
শুধু ইজতেমা ময়দান নয় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-আশুলিয়া সড়ক, উত্তরা আব্দুল্লাহপুর এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পরেছে। মুসল্লিরা সড়ক, মহাসড়ক, গাড়ির ছাদে, ময়দান সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন ভবনের ছাদে পেপার, চটের বস্তা ও পলিথিন বিছিয়ে জুমার নামাজ আদায় করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার বাদ আসর থেকেই ময়দানে ঈমান, আমল ও আখলাকসহ তাবলীগের ছয় উসুল সম্পর্কে অনানুষ্ঠানিক বয়ান শুরু হয়।
আয়োজক কমিটির মুরব্বি প্রকৌশলী মো. গিয়াসউদ্দিন জানান, এবার প্রথম দফায় দেশের ৩১টি জেলার তাবলিগ জামাতের মুসল্লি ও সর্বস্তরের মুসলমান প্রথম পর্বে অংশ নিচ্ছেন। প্রথম পর্বে ঢাকা, গাজীপুরসহ ৩১টি জেলার মুসুল্লীরা অংশ নিচ্ছেন। মুসল্লিদের জন্য ইজতেমা ময়দানকে ৪০টি খিত্তায় (ভাগে) ভাগ করা হয়েছে। ১ ও ২ নম্বর খিত্তায়- গাজীপুর জেলা, ৩ থেকে ১৩ নম্বর খিত্তায়- ঢাকা জেলা, ১৪ নম্বর খিত্তায়- সিরাজগঞ্জ জেলা, ১৫ নম্বর খিত্তায়- নরসিংদী জেলা, ১৬ নম্বর খিত্তায়- ফরিদপুর, ১৭ নম্বর খিত্তায়- রাজবাড়ী, ১৮ নম্বর খিত্তায়- শরিয়তপুর, ১৯ (১৯/১ ও ১৯/২) নম্বর খিত্তায়- কিশোরগঞ্জ, ২০ নম্বর খিত্তায়- নাটোর, ২১ নম্বর খিত্তায়- রংপুর, ২২ নম্বর খিত্তায়- শেরপুর, ২৩ নম্বর খিত্তায়- রাজশাহী, ২৪ নম্বর খিত্তায়- জয়পুরহাট, ২৫ নম্বর খিত্তায়- গাইবান্ধা, ২৬ নম্বর খিত্তায়- লালমনিরহাট, ২৭ নম্বর খিত্তায়- হবিগঞ্জ, ২৮ নম্বর খিত্তায়- দিনাজপুর, ২৯ নম্বর খিত্তায়- সিলেট, ৩০ নম্বর খিত্তায়- চাঁদপুর, ৩১ নম্বর খিত্তায়- ফেনী, ৩২ নম্বর খিত্তায়- চট্টগ্রাম, ৩৩ নম্বর খিত্তায়- বান্দরবন, খাড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি, ৩৪ নম্বর খিত্তায়- বাগেরহাট, ৩৫ নম্বর খিত্তায়- নড়াইল, ৩৬ নম্বর খিত্তায়- চুয়াডাঙ্গা, ৩৭ নম্বর খিত্তায়- যশোর, ৩৮ নম্বর খিত্তায়- ভোলা, ৩৯ নম্বর খিত্তায়- বরগুনা এবং ৪০ নম্বর খিত্তায়-ঝালকাঠি জেলা।
৩ দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামী ১১ জানুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। চার দিন বিরতির পর দ্বিতীয় পর্ব ১৬ জানুয়ারি শুক্রবার বাদ ফজর থেকে শুরু হবে এবং ১৮ জানুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে।