শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > তিনশ ফুট ও মাদানী সড়কে চলছে দখলের মহোৎসব

তিনশ ফুট ও মাদানী সড়কে চলছে দখলের মহোৎসব

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: জবরদখল হতে চলেছে রাজধানীর নতুন গেটওয়ে কুড়িল-কাঞ্চন ব্রিজগামী তিনশ ফুট সড়ক ও বারিধারায় মাদানী অ্যাভিনিউর একশ ফুট সড়ক।

অবৈধভাবে দোকানপাট তৈরি, ক্লাব প্রতিষ্ঠা ও বাড়িঘরের সীমানা বৃদ্ধিসহ নানা কৌশলে দখল করে নেওয়া হচ্ছে এ দুটি সড়কের দু পাশে জায়গা।
সংঘবদ্ধ কিছু লোক যেভাবে পারছে সেভাবেই সড়ক দুটিতে দখলের মহোৎসবে মেতেছে।

এদিকে, সাইনবোর্ড সর্বস্ব ভুঁইফোড় কিছু সংগঠনের নামে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা এসব সড়কের সিংহভাগ জায়গা জবরদখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

অনেকেই ইতোমধ্যে রাস্তার জায়গা নির্দিষ্ট আকারে বিক্রি করে সেখানে গড়ে তুলেছেন হাট-বাজার। থানা পুলিশ, সিটি করপোরেশন ও রাজউকের দুর্নীতিবাজ কর্মচারীরা মাসোহারা পাওয়ায় সংঘবদ্ধ এসব দখলবাজদের দৌরাত্ম থামছেই না। ফলে এ চক্রের হাতে থেকে মুক্ত হচ্ছে না সড়ক। কিন্তু এসব অনিয়ম যেন দেখার কেউ নেই।

কুড়িল ফ্লাইওভারের প্রান্ত থেকে কাঞ্চন ব্রিজমুখী শুরু হওয়া তিনশ ফুট সড়কের অনেক স্থানেই হাট-বাজারে পরিণত হয়েছে। ফ্লাইওভারের প্রান্তেই সড়কটির অন্তত দুটি লেন দখল করা হয়েছে। সেখানে একটি লেনের একাংশ দখল করে বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে বাড়িঘর, পাকা ভবন।

এছাড়া মোড়-সংলগ্ন অন্তত ৩০টি বাড়ির সীমানা বাড়িয়ে রাস্তা দখল করে নতুন ঘর-বারান্দা বানানো হয়েছে। রাস্তার আরেকটি লেন দখল করে গড়ে উঠেছে দোকানপাট, ওয়ার্কশপ, গ্যারেজ। মূল সড়কের ওপরই চলে সেই ওয়ার্কশপের গাড়ি মেরামত। সেখানে মেরামতে আসা সারি সারি গাড়ি রাখা হচ্ছে ব্যস্ততম রাস্তাজুড়ে।

এদিকে, সড়কটির তালবাড়ী এলাকায় কয়েকশ দোকানপাটের বড়সড় অবৈধ বাজার বসানো হয়েছে। রাস্তার অপর পাশের একটি লেন দখল করে বানানো হয়েছে বেশকিছু নার্সারি। রীতিমতো সাইনবোর্ড টাঙিয়ে স্থায়ী ভিতের বাণিজ্যকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে সেখানে।

একশ ফুট রাস্তা খ্যাত মাদানী অ্যাভিনিউয়ে ফুট বাই ফুট হিসেবে পজেশন বাবদ মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বসানো হয়েছে সহস্রাধিক দোকানপাট। এসব দোকান থেকে দৈনিক ভিত্তিতে চাঁদা তোলা হচ্ছে। এই রাস্তাবাজার থেকেই প্রতি মাসে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে ৩০ লক্ষাধিক টাকা।

জানা যায়, একশ ফুট প্রশস্ত রাস্তাটি বেরাইদসহ পূর্বাচল ও রূপগঞ্জে সহজ যোগাযোগের জন্যই নির্মিত হয়। সড়কটি রাজধানীর বাইপাস রোড হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা ছিল। কিন্তু এর নির্মাণকাজ কয়েক বছর ধরে ফেলে রাখায় তা দখলবাজদের খপ্পরে হারিয়ে যেতে বসেছে। হাজার হাজার মানুষের ব্যস্ততম রাস্তাটি এখন আর খুঁজে পাওয়ার উপায় নেই।

নতুনবাজারের ভাটারা থানা মোড় থেকে একশ ফুট রাস্তার এক কিলোমিটার জুড়ে দীর্ঘ বাজার বসানো হয়েছে। সেখানে ৮/১০টি হকার্স মার্কেট গড়ে তোলার পাশাপাশি নির্মিত হয়েছে শত শত অবৈধ স্থাপনা আর কয়েক হাজার দোকান।

রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভার-সংলগ্ন তিনশ ফুট চওড়া রাস্তা দখল করেও একইভাবে গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট, বাড়িঘর, অবৈধ স্থাপনা। চার লেনবিশিষ্ট এই সড়কের দুটি লেনই জবরদখল হতে চলেছে। ঝুপড়ি বস্তি স্টাইলে কিছু বাড়িঘরও নির্মিত হয়েছে সেখানে। এখন নির্মাণাধীন রয়েছে এরকম আরো কয়েকশ বাড়ি। এছাড়া চলছে কোনো কোনো বাড়ি ও দোকান পাকা করার কাজও।

এ সড়কেও বিভিন্ন সংগঠনের নামে রাস্তার জায়গা রীতিমতো পজেশন আকারে কেনাবেচা পর্যন্ত চলছে। শুধু সড়কের জায়গা দখল করতেই নামের আগে-পিছে ‘লীগ’ আর ‘মুক্তিযোদ্ধা’ ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুঁইফোড় সংগঠন খুলে বসেছে কেউ কেউ। তিনশ ফুট সড়ক দখলবাজির ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্থানে মসজিদ নির্মাণের কৌশলও শুরু করেছে দখলবাজরা।

এদিকে, সড়কের জায়গায় মসজিদ গড়ে তুলে তা ঘিরেই দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মিত হচ্ছে। অবৈধ দখলবাজদের কাছ থেকে থানা পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগের নামেও লক্ষাধিক টাকা মাসোহারা আদায় হয় বলে জানা গেছে।

এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেজে, স্থায়ী-অস্থায়ী শত শত দোকানের পসরায় দুটি সড়কের প্রবেশমুখই ‘ভিড়-ভাড়াক্কার হাট-বাজারে’ পরিণত হয়েছে। এসব বাজার, দোকান, স্ট্যান্ডের জটলা এড়িয়ে এঁকেবেঁকে যানবাহন চলাচল করতে গিয়েই তৈরি হচ্ছে যানজট।

তিনশ ফুট রাস্তায় দোকানপাটের পসরা সাজিয়ে বসা খুদে দোকানিরা জানান, প্রতিদিন ‘পুলিশের বিট’ বাবদ ২০ টাকা, ‘হকারদের কল্যাণকারী সংগঠনের চাঁদা’ বাবদ ১০ টাকা এবং স্থানীয় ক্লাব-সমিতির নামে ‘মাস্তানি ভাতা’ বাবদ আরও ৩০ টাকা করে চাঁদা দিতে হচ্ছে। দোকানিদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার জন্য একজন করে দোকানদার ‘লাইনম্যান’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া কমিশন পান রাজউক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন।

মাদানী অ্যাভিনিউয়ে সৌদি দূতাবাসের পূর্ব কোনায় রাস্তার ওপরই জিন্স প্যান্টের দোকান দিয়ে বসেছেন খুদে ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, রাস্তার মাঝখানে রোড ডিভাইডারে চার হাত বাই পাঁচ হাত জায়গায় দোকান বসাতে গিয়ে এককালীন দিতে হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। এখন প্রতিদিন দুইশ টাকা ভাড়া দিতে হয়, পাশাপাশি চাঁদা দিতে হয় ৫০ টাকা।

তিনি আরো বলেন, বেচাকেনা ভালো বলেই পুষিয়ে নিতে পারছি।

পাশেই রাস্তা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ফলের বাজার। দোকানপ্রতি ১০০ টাকা করে দৈনিক ভাড়া দিতে হয় তাদের। এত কিছু ঘটলেও সেখানে উচ্ছেদে দেখা যায়নি কোনো ম্যাজিস্ট্রেট।

অপরদিকে, দখলবাজ চাঁদা আদায়কারীদের কবল থেকে ভ্রাম্যমাণ হকাররা পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না। ঘুরে ঘুরে ডিম, মুড়িভাজা, পান-সিগারেট বিক্রেতাদের কাছ থেকেও ২০ টাকা হারে চাঁদা তোলা হচ্ছে। এমনকি ভাটারা থানার গেটজুড়েও ২০/২২টি ঝুপড়ি দোকান গড়ে তোলা হয়েছে।

ভাটারা থাসার ওসির গাড়িচালক পরিচয়ে এক পুলিশ কনস্টেবল এসব দোকান থেকে সপ্তাহে ২০০ টাকা করে বখরা নিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরেজমিন ঘুরে আরো দেখা যায়, দখলবাজ চক্রটি কোথাও এক চিলতে জায়গা ফাঁকা রাখছে না। তারাই মালিক সেজে রাস্তা-ফুটপাত পর্যন্ত ইজারা দিয়ে দিচ্ছে। রাজউকের প্লট আকারে গড়ে তোলা ‘জে ব্লক’ পুরোটাই দখল করে গ্যারেজ, ওয়ার্কশপ, ভাঙ্গারি দোকান থেকে শুরু করে গড়ে তোলা হয়েছে হাট-বাজার। বানানো হয়েছে শত শত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

বারিধারায় কূটনৈতিক পাড়ার সংরক্ষিত জায়গা-প্লটও তাদের দখলবাজি থেকে মুক্ত থাকেনি। মার্কিন দূতাবাস-ঘেঁষা পূর্ব পাশের বড় আয়তনের জায়গাজুড়েও বসানো হয়েছে ইট-বালু, স্যানিটারির বাণিজ্য। মাসে ভাড়া তোলা হচ্ছে আড়াই লক্ষাধিক টাকা। সরকারি দলের কতিপয় নেতাকর্মী পরিচয় বিক্রি করে রাজউকের জে ব্লকের প্লটগুলো ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন ২০ লক্ষাধিক টাকা। জে ব্লকের পার্কটি পর্যন্ত দখল করে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীদের কাছে তারা ভাড়া দিয়েছে।

ব্যস্ততম প্রগতি সরণির জায়গায়ও শত শত দোকানের অবৈধ বাজার রয়েছে ছয়টি। নতুনবাজার কূটনৈতিক পাড়ার মোড় থেকে বসুন্ধরা গেট পর্যন্ত ব্যস্ততম রাস্তার পূর্বপাশে নির্মিত রিকশা রাস্তা জুড়ে কয়েকশ দোকানের ফার্নিচার মার্কেট বানিয়ে ধুমছে বাণিজ্য চলছে।

জে ব্লকের ওই রাস্তাটি ইজারা স্টাইলে ভাড়া দিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা তুলছেন সরকারদলীয় নেতাকর্মী পরিচয় দেওয়া কয়েকজন। ফলে রাস্তার প্রশস্ততা কমে কোথাও কোথাও একটি গাড়ি চলাচল করতেও কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ফুটপাত-বাণিজ্যের দোকানপাটের মধ্যেই গাড়ির শোরুম আর গ্যারেজ-ওয়ার্কশপের ধকল নেমে আসছে প্রধান রাস্তায়।

এতে করে প্রধান সড়কের অর্ধেক জায়গাজুড়ে সারি সারি গাড়ি পার্ক করে রাখায় ধীরে ও অতি সাবধানে চলাচল করতে গিয়েও বেঁধে যাচ্ছে দীর্ঘ যানজট। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম