শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > তথ্য অধিকার আইন বিষয়ে অলিউর রহমান-এর ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ

তথ্য অধিকার আইন বিষয়ে অলিউর রহমান-এর ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ

শেয়ার করুন

প্রেসবিজ্ঞপ্তি ॥
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ সিন্ডিকেট সভায় “সংবাদকর্মীদের তথ্য অভিগম্যতা: তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন-পূর্ব ও পরবর্তী পরিস্থিতি বিশ্লেষণ” (ঔড়ঁৎহধষরংঃং’ অপপবংং ঃড় ওহভড়ৎসধঃরড়হ : চৎব-ধহফ চড়ংঃ-ঝরঃঁধঃরড়হ অহধষুংরং ড়ভ ঃযব জরমযঃ ঃড় ওহভড়ৎসধঃরড়হ অপঃ)’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে মো. অলিউর রহমানকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক (অনারারি) ড. সাখাওয়াত আলী খান-এর তত্ত্বাবধানে অলিউর রহমান তাঁর গবেষণাকর্ম সম্পন্ন করেন।

গবেষক ড. অলিউর রহমান-এর জন্ম বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলার জামুয়া গ্রামে, ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে। তিনি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় ১৯৯১ সালে বি এ (অনার্স) এবং ১৯৯৪ সালে এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন। গণযোগাযোগ বিষয়ে এমফিল ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৯৯ সালে। একই বছর তিনি জার্মানির ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর জার্নালিজম (আইআইজে) থেকে সাংবাদিকতায় ‘প্রশিক্ষক-প্রশিক্ষণ’ কোর্স সম্পন্ন করেন।

গবেষক তাঁর অভিসন্দর্ভে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারসমূহের নিশ্চয়তা দিতে এবং সুশাসন ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠাকল্পে সবার আগে নাগরিকদের তথ্যক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা জরুরি বলে উল্লেখ করেন। গবেষণায় তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন পূর্ব ও পরবর্তী অবস্থার পর্যালোচনায় দেখা যায়, তথ্য অধিকার আইন প্রণয়নের আগে বাংলাদেশে তথ্য অভিগম্যতা ছিল ‘সীমিত’ ও ‘নিয়ন্ত্রিত’ পর্যায়ে। তবে বর্তমানে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখন সংবাদকর্মীরা আইনের আওতায় জোড়ালোভাবেই তথ্য চাইতে পারছেন। উত্তরদাতাদের ৬৮ শতাংশের মতে এ আইনের ফলে তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত স্বীকৃতি মিলেছে।

তথ্য অধিকার আইন প্রণয়নের ফলে সংবাদকর্মীদের তথ্য প্রাপ্তিতে আইনগত বাধা-বিপত্তি কিছুটা দূর হলেও বেশ কিছু সমস্যা এখনও রয়ে গেছে। ৬৫ শতাংশ উত্তরদাতা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের অসহযোগিতামূলক মনোভাব এবং ৬৪ শতাংশ উত্তরদাতা কর্মকর্তাদের তথ্য গোপন করার প্রবণতাকে অন্যতম সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এছাড়া তথ্য সংরক্ষণ ও সরবরাহে আধুনিক পদ্ধতির প্রয়োগে দুর্বলতা থাকায় চাহিদা মতো তথ্য দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার, তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য প্রদানের সুযোগ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ নানা অজুহাত দেখিয়ে অকারণে কালক্ষেপন করেন এমন তথ্য এসেছে ৭৪ শতাংশ উত্তরদাতাদের কাছ থেকে।

তথ্য অধিকার আইনের ৭ নম্বর অনুচ্ছেদসহ বেশ কিছু সীমাবদ্ধতাকেও সংবাদকর্মীগণ তথ্য অভিগম্যতার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাদের মতে, আইনের ৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বেশ কিছু বিষয়ের তথ্য দেওয়াকে বাধ্যবাধকতামুক্ত রাখা হয়েছে। অথচ আইনের পূর্বে এসব বিষয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের তথ্য সাংবাদিকবৃন্দ সহজেই পেতে পারতেন। নাগরিকদের জানার অধিকারের আওতামুক্ত তথ্যের তালিকাটি বেশ দীর্ঘ বলে মন্তব্য করেছেন ৩৮ শতাংশ উত্তরদাতা। আইনের ৭ নম্বর ধারায় অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার অধিকারের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে এবং অহেতুক অনেক বিষয় এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে মনে করেন যথাক্রমে ৩০ এবং ২৩ শতাংশ উত্তরদাতা।

আইনে আবেদনকৃত কোনো তথ্যের ফটোকপির মূল্য কোন খাতে বা কোন অ্যাকাউন্টে জমা হবে তা যেমন অস্পষ্ট, তেমনি এই আইনে তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে যেরূপ সময়সীমার কথা বলা হয়েছে Ñ সেসব অনেকাংশেই অস্পষ্ট ও অনির্দিষ্ট বলে মনে করেন যথাক্রমে ৫৯ এবং ৪৫ শতাংশ উত্তরদাতা।

গবেষণার তথ্যে লক্ষ করা গেছে, অধিকাংশ সংবাদকর্মীই তথ্য অধিকার আইনটি সম্পর্কে সচেতন নন। আইনটির প্রায়োগিক দিক সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকায় যতটুকু সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে তাও ব্যবহার করতে পারছেন না সংবাদকর্মীবৃন্দ।

সংবাদকর্মীদের তথ্য অনুযায়ী দৈনন্দিন রিপোর্টিংয়ে বা তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে ‘হার্ড-নিউজ’ করতে এই আইন ব্যবহারের কোনো সুযোগ থাকছে না। তবে গভীরতর রিপোর্টিয়ের ক্ষেত্রে আইনটি বেশ সহায়ক। গভীরতর রিপোর্টিংয়ের আওতায় দুর্নীতি দমন (৬৩ শতাংশ উত্তরদাতা), মানবাধিকার সুরক্ষা (৪৭ শতাংশ উত্তরদাতা), অপরাধ (৪০ শতাংশ উত্তরদাতা) ও উন্নয়ন বিষয়ক রিপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে এই আইনটি সংবাদকর্মীদের জন্য সহায়ক।

গবেষণার সমাপনী বক্তব্যে বলা হয়, বৈশি^ক প্রবণতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তথ্যের অবাধ অভিগম্যতা তথা তথ্যের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা গেলে নাগরিক জীবনে সুশাসন ও মানবাধিকার সমুন্নত করা সহজ হয়। লক্ষ করা যায়, ১৭৬৬ সালে থেকে এ পর্যন্ত বিশে^র অন্তত একশ’টি দেশে তথ্য অধিকার সংক্রান্ত আইন প্রণীত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে (১৯৬৬-১৯৭৮) মাত্র তিনটি দেশ, দ্বিতীয় পর্যায়ে (১৯৫১-১৯৮৭) ১১টি দেশ এবং তৃতীয় পর্যায়ে গত ২২ বছরে (১৯৯০-২০১২) ৮৬টি দেশে তথ্য অধিকার বিষয়ক আইন প্রণীত হয়েছে।

গবেষণায় তথ্যক্ষেত্রে সংবাদকর্মীদের অভিগম্যতার চিত্র তুলে ধরতে মাঠ পর্যায়ের সমীক্ষা, গভীরতর সাক্ষাৎকার (কেআইআই), ফোকাস দল আলোচনা (এফজিডি) এবং কেস স্টাডি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। ‘সংবাদকর্মীদের তথ্য অভিগম্যতা : তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন-পূর্ব ও পরবর্তী পরিস্থিতি বিশ্লেষণ’ শীর্ষক বর্তমান গবেষণায় সার্বিকভাবে বাংলাদেশে তথ্য ও যোগযোগক্ষেত্রে সংবাদকর্মী তথা নাগরিকদের অভিগম্যতার একটি চিত্র উঠে এসেছে এবং এক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাসমূহ এবং সেসব দূরীকরণের উপায় সম্পর্কে সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়েছে।

ড. রহমান প্রথম আলোর পর্যালোচনা ও প্রশিক্ষণ বিভাগে, বাংলাদেশ প্রেস ইনিস্টিটিউটে ‘সিনিয়র প্রশিক্ষক’ হিসেবে, জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিল (ইউএনডিপি)-এর ‘এলজিএসপি-এলআইসি প্রকল্পের আইইসি কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইনস্টিটিউট অব ইনোভেটিভ মিডিয়া অ্যান্ড ই-জার্নালিজম (ইমেজ)-এর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ইনস্টিটিউট অব কমিউনিকেশন অ্যান্ড ই-লার্নিং (আইসেল)-এর নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম বিষয়ের ওপর তাঁর পাঁচটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও জার্নালে তাঁর প্রকাশিত নিবন্ধের সংখ্যা একশ তেইশ।