শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ॥ অবৈধ পার্কিং, হাট-বাজারে ভোগান্তির শঙ্কা

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ॥ অবৈধ পার্কিং, হাট-বাজারে ভোগান্তির শঙ্কা

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ঘুরে: ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রতিদিন সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার গাড়ি রাজধানী ছেড়ে যায় এবং প্রায় সমসংখ্যক গাড়ি রাজধানীতে আসে। ঈদের সময় গাড়ির সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ ভাগ বেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন বাস মালিকরা।

ঈদের সময়টাতে অসহনীয় যানজটের কবলে পড়েন দেশের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীরা। মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা অস্থায়ী পশুর হাট, অবৈধ দোকানপাট ও বাজারের তাদের দুর্ভোগ যায় বেড়ে।

মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে ঘুরে ঈদের সময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানজট বাড়ার কারণগুলো অনুসন্ধান করেছে বাংলানিউজ।

এদিন সকালে দেখা যায়, গাবতলী থেকে গাড়ি ছাড়ার পর আমিনবাজার ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে দূরপাল্লার বাসগুলো। ট্রাফিক পুলিশের নাকের ডগায় দাঁড়িয়ে যাত্রী নিলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি ট্রাফিক সদস্যদের।

গাবতলী থেকে নবীনগর পর্যন্ত প্রায় ২৮ কিলোমিটার রাস্তা। এই ২৮ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৫/৬টি বাজার রয়েছে। এসব বাজারগুলো হয়ে উঠেছে অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ড। যাত্রী ওঠা-নামার জন্য আলাদা কোনো লেন নেই। মহাসড়কের অর্ধেকেরও বেশি জায়গা জুড়ে যাত্রী ওঠা-নামা করায় লোকাল সার্ভিস ও দূরপাল্লার বাসগুলো। এসব কারণে যাত্রীদের তীব্র যানজটে পড়তে হয়।

প্রতিটি বাজারে এবং ভাসমান বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী ওঠা-নামা করাতে বাসগুলো প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট করে অপেক্ষা করে। এতে একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে গেলে পেছনে আরও কয়েক শ’ গাড়ির লাইন পড়ে যায়, ফলে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।

সাভার বাজার থেকে নবীনগরে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত প্রায় এক দেড় কিলোমিটার এলাকায় মহাসড়কের দুইপাশের এক তৃতীয়াংশ জায়গা জুড়ে বসেছে দোকানপাট। দখলে আছে ফুটপাথও।

এ ব্যাপারে কথা হয় সাভার বাসস্ট্যান্ডে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. মাসুমের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা লাঠি হাতে নিয়ে গরু চড়ানোর মতো করে গাড়িগুলিকে চড়াই। তাতেও লাভ হয় না। ড্রাইভারদের বললেও কানে নেয় না। ওরা (ড্রাইভাররা) যাত্রীর জন্য খাই খাই করে। গাড়ি এক মিটার এগোয় তো আবার দাঁড়ায়, এভাবে করে প্রতিটি গাড়ি ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে। ফলে একটি গাড়ি দাঁড়ালেই বিশাল লাইন পড়ে যায়। ফলে গাবতলী থেকে সাভার নবীনগর পার হতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লেগে যায়। অথচ এই ২৮ কিলোমিটার পথ যেতে দূরপাল্লার গাড়ি সময় লাগার কথা আধা ঘণ্টার মতো।

দেশের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গগামী বাস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মারুফ তালুকদার সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, মহাসড়কের পাশের অবৈধ বাজার ও গাড়ি পার্কিং বন্ধ করে দিলে একটুও যানজট থাকবে না। যাত্রীদেরও কোনো ভোগান্তি হবে না।

তিনি বলেন, প্রতিদিন গড়ে মিনিবাস ও বড় বাসসহ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার গাড়ি গাবতলী ছেড়ে যায়। একইভাবে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সমসংখ্যক গাড়ি ঢাকায় আসে। ঈদের সময় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ গাড়ি বেড়ে যায় এই মহাসড়কে। ফলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ঈদের সময় যানজট বেশি ভোগায়। আর ঈদুল আযহায় তো কথাই নেই। মহাসড়কের পাশেই বসে কোরবানির পশুর হাট। রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে পশুবোঝাই ট্রাক। আমাদের যাত্রীবাহী গাড়ি কিভাবে যাবে?

মহাসড়কের পাশে বাজার এবং অবৈধ দোকান পাট উচ্ছেদ করলেই যানজট ৫০ শতাংশ কমে যাবে। বাকিটুক ট্রাফিক পুলিশ সঠিক তদারকি করলেই হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেন মারুফ তালুকদার।

মানিকগঞ্জে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. কামরুজ্জামান জানান, ঈদের সময় গাড়ি বেড়ে যাওয়ার কারণে যানজট হবেই। এটা ঠেকানো যাবে না। তাছাড়া মহাসড়কের পাশে যাত্রী ওঠা-নামাও বন্ধ করা যাবে না। যাত্রীদের সুবিধার্থেই আমরা কিছু বলি না। তারপরেও যদি দেখি কোনো গাড়ি বেশি সময় দাঁড়িয়ে আছে, তখন সেটাকে রেকার লাগিয়ে দেই।

তিনি বলেন, ঈদের সময় প্রায় ৫০ শতাংশ গাড়ি বেড়ে যায়। ঢাকার লোকাল গাড়িগুলিও তখন মহাসড়কে চলাচল করে। এগুলো আমরা বন্ধ করতে পারি না। কারণ যাত্রীরা ঈদের আনন্দ করতে যাচ্ছে, বাধা দিলে আরও দুর্ভোগে পড়বে। তাই দেখেও কিছু বলি না।

সার্জেন্ট কামরুজ্জামান আরও বলেন, মানিকগঞ্জ থেকে ধামরাই পর্যন্ত মহাসড়কের পাশে ঈদের আগ মুহূর্তে পশুর হাট বসে। টেরাজ, উথুলি, ধামরাই ও কালামপুরসহ বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডের পাশে বসা পশুর হাটে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে কিন্তু আমরা কিছু বলতে পারি না।

এবার মাওয়া ফেরিঘাট সময়মতো চালু না করতে পারলে এই রুটে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হবে যাত্রীদের- যোগ করেন ওই ট্রাফিক সার্জেন্ট।

ঈদকে সামনে রেখে মানিকগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগের ৭ কর্মকর্তাসহ ৬২ জনের নিয়মিত ফোর্স কাজ করবে। এর বাইরেও অতিরিক্ত ফোর্স আনা হবে বলেও জানান সার্জেন্ট কামরুজ্জামান।

মহাসড়কে বেপরোয়াভাবে চলাচলকারী গাড়ির গতিরোধে নেই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। এতে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। মানিকগঞ্জের বালিথা, বাথুলিয়া বাজারের পাশে কথা হয় মো. আবু দাউদের সঙ্গে।

তিনি বলেন, এই বাথুলিয়া বাজারে আগে অনেক দুর্ঘটনা ঘটতো। আওয়ামী লীগ সরকারের আগের টার্মে এখানে স্পিড ব্রেকার দেওয়ার পর আর দুর্ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এখন স্পিড ব্রেকার আর নাই। দুই দিন আগেও একটি বাচ্চা স্কুলে যাওয়ার সময় বাসের নীচে চাপা পড়ার অবস্থা হয়েছিল। আমি তাকে বাঁচিয়েছি। ঈদের সময় গাড়ির চাপ বেশি থাকে তাই কী হয় আল্লাহ জানে! বাংলানিউজেটোয়েন্টিফোর.কম