বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: বাংলাদেশের খ্যাতিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘রেড ডট মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড’ এর নির্মিত ট্যুরিজম ভিত্তিক সাড়াজাগানো তথ্যচিত্র ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ জালিয়াতি নিয়ে তোলপাড় চলছে এখন বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়াতে। বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে আসা লন্ডন প্রবাসী ‘প্রতারক’ মইনুল হোসেন মুকুল সম্প্রতি এ তথ্যচিত্রের মূল নির্মাতাদের দিনের আলোতে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করে পোল্যান্ডের মাটিতে পুরষ্কার জেতারও তামাশা করেছেন। গেল ১৮ জুন পোলিশদের কাছ থেকে ওই পুরষ্কার বাগিয়ে নেন বাংলাদেশে বহু মামলার পলাতক এই আসামি।
জালিয়াতি ও প্রতারণার ষোলকলা পূর্ণ করতে মইনুল হোসেন মুকুল তার মেধাকে কাজে লাগিয়ে অত্যন্ত সুকৌশলে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করেছেন পোল্যান্ডের ট্যুরিজম ফেস্টিভাল কর্তৃপক্ষকেও। পোলিশ আয়োজকদেরকে তিনি সাফল্যের সাথে ‘কনভিন্স’ করাতে সক্ষম হন যে, তিনিই ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ তথ্যচিত্রের নির্মাতা। ম্যানেজ করা তথা ‘হোমমেইড’ এই পুরষ্কার জেতার পর বাংলাদেশের কিছু পত্রিকায় ও সংবাদ মাধ্যমে মইনুল হোসেন মুকুলকে ‘ব্রিটিশ-বাংলাদেশি’ নির্মাতা হিসেবেও সংবাদ পরিবেশন করানো হয়। ডিজিটাল যুগে দিনে-দুপুরে জালিয়াতির পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার পরপরই নড়েচড়ে বসে ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ তথ্যচিত্রের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘রেড ডট মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড’।
২৩ জুন ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘ব্রিটিশ-বাংলাদেশি প্রতারক’ মইনুল হোসেন মুকুলের জালিয়াতির অদ্যোপান্ত তুলে ধরেন ‘রেড ডট মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড’র চেয়ারম্যান স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পী মাহফুজ আনাম জেমস এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর গাজী নুরুদ্দিন আহমেদ শুভ্র।
সুপরিচিত বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাতা গাজী শুভ্র ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ তথ্যচিত্র নির্মাণের মূল সত্যটি তুলে ধরে বলেন, ‘প্রোডাকশনটিতে যে ১৫৬ জন কাজ করেছেন তাদেরই একজন মইনুল হোসেন মুকুল। এটি যখন নির্মাণ করা হয় তখন মইনুল হোসেন মুকুল বাংলাদেশে অবস্থান করায় এবং ব্রিটিশ মডেলের সঙ্গে কো-অর্ডিনেশনের সুবিধার্থে আমরা তাকে সুযোগ দিয়েছিলাম আমাদের টিমে একজন ‘ভলান্টিয়ার অ্যাসিস্টেন্ট’ হিসেবে কাজ করার। দুর্ভাগ্যের বিষয়, শুটিংয়ে সামান্য সময় উপস্থিত থেকেই এতোদিন পর এসে ‘ডিরেক্টর’ বনে গেলেন তিনি।’
সংবাদ সম্মেলনে ‘রেড ডট মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড’র চেয়ারম্যান সঙ্গীতশিল্পী জেমস তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মইনুল হোসেন মুকুলের এই ‘এনালগ’ জালিয়াতির। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ নির্মাণের কোনো অফিসিয়াল ‘ওয়ার্ক-অর্ডার’ বা তথ্য-প্রমাণ ‘প্রতারক’ মুকুল কোথাও দেখাতে পারবেন না।’
জালিয়াতি ও প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত মইনুল হোসেন মুকুল অবশ্য ইতিমধ্যে লন্ডনের সুপরিচিত এক সাংবাদিককে দেয়া ভিডিও বক্তব্যে তার এ অপকর্মকে ‘হালাল’ করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। নিজেকে বাঁচাতে ভিনদেশি অপেশাদার মডেলকে দিয়েও নিজের অনুকূলে বানোয়াট ভিডিও বিবৃতি প্রচার করতেও কুণ্ঠিত হননি মইনুল হোসেন মুকুল।
‘ব্রিটিশ-বাংলাদেশি প্রতারক’ মইনুল হোসেন মুকুলের বেশকিছু অজানা অধ্যায়ও সামনে নিয়ে এসেছেন ‘রেড ডট মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর গাজী নুরুদ্দিন আহমেদ শুভ্র। তিনি বলেন, ‘মইনুল হোসেন মুকুল ঢাকার এসএ টিভির ৩২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লন্ডনে পালিয়ে যান। এজন্য মোট ৯টি মামলা তার বিরুদ্ধে দায়ের করে জনপ্রিয় ওই টিভি চ্যানেল। সাউন্ড সিস্টেমের জনৈক শামীমের ২২ লাখ, লাইটের জনৈক সেকান্দারের ৪০ লাখ ছাড়াও বিখ্যাত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ‘এশিয়াটিক ইভেন্টস’ ৭০ লাখ টাকা এখনো পাওনা রয়েছে লন্ডনে পলাতক এই মইনুল হোসেন মুকুলের কাছে।’
উল্লেখ্য, একসময় ঢাকার এটিএন বাংলা এবং ইস্টার্ন প্যানোরামায় ‘ভিডিও এডিটর’ হিসেবে কাজ করতেন অভিযুক্ত এই প্রতারক। বেশ কয়েক বছর আগে লন্ডনে এসেও স্থানীয় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে একই কাজের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে প্রতারণার পথ প্রশস্ত করেন।
প্রতারণারই ধারাবাহিকতাতেই পোল্যান্ডে ‘তথাকথিত’ পুরষ্কার প্রাপ্তি বিশাল এই জালিয়াতিরই অংশ। ১৮ জুন পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রতারক মইনুল হোসেন মুকুলের সঙ্গে উপস্থিত থেকে একই মঞ্চে পুরষ্কার গ্রহণ করেন পোল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল জেনারেল ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুক (ছবিতে বাঁ থেকে দ্বিতীয়)। ঢাকাস্থ বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই নাকি তিনি ওই পুরষ্কার গ্রহণ করতে যান।
অবশ্য ট্যুরিজম বোর্ডের ওই চিঠির কোথাও মইনুল হোসেন মুকুলের নাম ছিল না বলে জানিয়েছেন অনারারি কনসাল। একজন ‘ভুয়া নির্মাতা’ তথা প্রতারকের সঙ্গে একই মঞ্চে পুরষ্কার গ্রহণ করায় ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুক নিজেও বিতর্কিত হয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে। তাছাড়া বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের দায়িত্বহীনতা নিয়েও প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে জোরেশোরে।
