শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ট্রলারে মালয়েশিয়া যাবার চেষ্টায় শত শত মানুষ

ট্রলারে মালয়েশিয়া যাবার চেষ্টায় শত শত মানুষ

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
সমুদ্রে উত্তাল ঢেউ, হারিয়ে যাবার বিপদ, মৃত্যুভয় – কোন কিছুই যেন তাদের মালয়েশিয়া যাবার ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখতে পারছে না।

এই পথেই প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের শত শত মানুষ ছোট্ট ট্রলারে মালয়েশিয়ার দিকে পাড়ি দিচ্ছে। কেউ বা মালয়শিয়ায় পৌঁছাচ্ছেন, আবার বেশির ভাগেরই পরিণতি হচ্ছে দুঃখ, যন্ত্রণা কিংবা মৃত্যু, অথবা নিখোঁজ।

কয়দিন আগে সমুদ্র থেকে প্রাণে বেঁচে ফিরে এসেছেন রামুর খায়রুল আমিন। তার বাড়িতেই কথা হচ্ছিল খায়রুল আমিনের সাথে।

তিনিবলেন, “সমুদ্রে আমরা ১৭ দিন ভেসে ছিলাম। আমরা ১৬০ জন ছিলাম। তার মধ্যে ৪০ জন উদ্ধার হয়েছে। বাকিরা এখনো নৌকায় আছে। আমি মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে একটি ড্রাম নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছিলাম।এরপর বার্মার একটি নৌকা আমাদের উদ্ধার করে।”

খায়রুল আমিনের ভাগ্য ভালো। মালয়েশিয়ায় যেতে না পারলেও অন্তত ঘরে ফিরেছেন। কিন্তু এ ধরনের যাত্রায় সামিল হওয়া অনেক বাংলাদেশীর কোনো খোঁজ নেই।

রামুর আরেকজন বাসিন্দা আব্দুল কাদের জানান দুই বছর আগে তার ভাই মালয়েশিয়া যাবার উদ্দ্যেশ্যে টেকনাফে একটি ট্রলারে উঠেছিল। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ।

কক্সবাজার জেলায় এ ধরনের কাহিনী এখন লোকমুখে এবং প্রতিটি গ্রামে। শুধু বাংলাদেশীরা নয়, এ যাত্রায় সামিল হচ্ছে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা কত তার নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই।

টেকনাফের কুতুপালংয়ের ক্যাম্পটিতে নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত মিলিয়ে এক লাখের মতো রোহিঙ্গাদের বসবাস।

এই ক্যাম্পের বাসিন্দা ফাতেমা খাতুনের করুণ আর্তনাদ। ফাতেমা খাতুন জানালেন তিনি বার্মা থেকে ২০ বছর আগে এই ক্যাম্পে আসছিলেন। দুই বছর আগে তার স্বামী এবং ছেলে মালয়েশিয়া চলে যায়।

তিনি বলেন, “তাদের সম্পর্কে এখনও আমি কিছু জানিনা। জানিনা তারা বেঁচে আছে না মারা গেছে। এই ক্যাম্পের জীবনটা অমানবিক।”

এই ক্যাম্পেরই আরেকজন বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন চাকরীর প্রলোভন দেখিয়ে দালালচক্র নানাভাবে মানুষজনকে প্রতারিত করছে।

স্থানীয় মানুষজন বলছে শুধু রোহিঙ্গারা এ যাত্রায় সামিল হচ্ছে তা নয়, বাংলাদেশীরাও বিপুল সংখ্যায় যাচ্ছে। রামুর বাসিন্দা মোঃ আলম জানালেন দারিদ্র্যের কারণেই এই পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে।

মি: আলম বলে , “মানুষজন বেকার বলতে একদম বেকার। কোনো কাজ নাই।লোকজন একেবারে গরিব।” তিনি জানান সে এলাকার প্রায় প্রতিটি পবিরার থেকেই একজন করে মালয়েশিয়া গেছে।

বেকারত্বের কারণে অনেক বাংলাদেশী যেমন মালয়শিয়া যেতে চাইছে আবার সে সুযোগ নিয়ে দালালচক্র এক ধরনের মুক্তিপণ বাণিজ্য গড়ে তুলেছে।

শুধু কক্সবাজার নয়, দেশের বিভিন্ন থেকে লোক এনে তাদের সমুদ্র পথে পাচারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। টেকনাফ বিজিবির কর্মকর্তা লেঃ কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানান দালাল চক্রের নেট্ওয়ার্ক দেশজুড়ে বিস্তৃত। দেশের বিভিন্ন এলাকা দালালরা মালয়েশিয়া পাঠানোর নামে লোক জড়ো করে বরে তিনি উল্লেখ করেন।

এসব দালাল চক্রের সাথে বার্মা, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ার দালালচক্রের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে বলে জানান মি: জাহিদ।

সমুদ্র পথে যতই তদারকি বাড়ানো হোক, এই প্রবণতা কতটা কমানো যাবে সেটি নিয়ে অনেকেরই সংশয় আছে কারন অতি দরিদ্র এসব মানুষের কাছে জীবন ও মৃত্যুর মাঝে ব্যবধান খুবই অল্প।–বিবিসি