রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > টি২০ বিশ্বকাপের দিকেই দৃষ্টি জুনায়েদের

টি২০ বিশ্বকাপের দিকেই দৃষ্টি জুনায়েদের

শেয়ার করুন

স্পোর্টস ডেস্ক ॥ পরিবর্তন কত প্রকার ও কী কী তার উত্তম একটি দৃষ্টান্ত হতে পারেন জুনায়েদ সিদ্দিকী। বাংলাদেশের ক্রিকেট মহলে একটি অতি পরিচিত নাম। ঘরোয়া টি২০ ক্রিকেটে নজর কাড়া নৈপুণ্য দেখিয়ে তার জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছিল ২০০৭ সালে টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রথম আসরেই। অভিষেকেই তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে পাকিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে ৭১ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেছিলেন।

সূচনায় তার এ রকম ইনিংস বাংলাদেশের ক্রিকেট মহলে আশার আলো ছড়িয়ে পড়ে। নতুন তারকার সন্ধান মিলেছে। বিশ্বক্রিকেটকে শাসন করবেন। হয়ে উঠবেন একদিনের এবং টেস্ট ক্রিকেটেরও অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিন জায়গাতেই তিনি বিচরণ করেছেন। কিন্তু বিধিবাম: ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়।

কোথায় হবেন দলের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়, সেখানে তিনি দল থেকেই বাদ! সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় যে টি২০ ক্রিকেটে খেলে জুনায়েদ নির্বাচকদের নজরে আসেন, শুরুতে চমক দেখান, সবার আগে তিনি সেই টি২০ ক্রিকেটেই অনিয়মিত হয়ে পড়েন। গল্প এখানেই শেষ নয়। টি২০ ক্রিকেটে তিনি বাদ পড়লেও টেস্ট ক্রিকেটে হয়ে ওঠেন আবার নিয়মিত। যদিও পরবর্তীতে তিনি সে জায়গাও ধরে রাখতে পারেননি।

আর একদিনের ক্রিকেটেও তার অবস্থা ছিল তথৈবচ। সংক্ষিপ্ত সারমর্ম হলো তিনি সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন টেস্টে। অথচ টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল টি২০ ও একদিনের ক্রিকেটের পর। অভিষেকেই তিনি টি২০ ক্রিকেটের মতোই বাজিমাত করেছিলেন। তামিম ইকবালের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে ১৬১ রান করে রেকর্ড করেছিলেন। কিন্তু সে জায়গাও তিনি ধরে রাখতে পারেননি। টেস্ট খেলেছেন ১৯টি।

একটি সেঞ্চুরির সঙ্গে সাতটি হাফ সেঞ্চুরিসহ রান করেছেন ৯৬৯। গড় ২৬.১৮। একদিনের ক্রিকেটে ৫৪ ম্যাচে ২৩.০০ গড়ে রান ১১৯৬। সেঞ্চুরি একটি, হাফ সেঞ্চুরি ছয়টি। টি২০ ম্যাচ খেলার সংখ্যা মাত্র সাতটি। ২২.৭১ গড়ে রান মাত্র ১৫৯। হাফ সেঞ্চুরি সেই অভিষেকে পাকিস্তানের বিপক্ষে করা ৭১ রানের ইনিংসই।

তাহলে জুনায়েদের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের পরিসমাপ্তি ঘটেছে? এমনিতেই দলে নেই। সেখানে আবার একের পর এক নতুন নতুন মুখ উঠে আসছে। আসন করে নিচ্ছে পাকাপোক্ত। সেখানে কি জুনায়েদের ফিরে আসা সম্ভব? কাজটি কঠিন বলে মনে করেন জুনায়েদ নিজেও। তবে হাল ছেড়ে দেননি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পারফরমারদের স্থান। পারফরমেন্স দেখাতে পারলে অবশ্যই তার জয়গা হবে বলে তিনি মনে করেন। তাই তিনি লক্ষ্য ঠিক করেছেন তার চিরচেনা আঙিনাকে। অর্থাত্ টি২০ ক্রিকেটে। ঘরের মাটিতে টি২০ বিশ্বকাপের আসরে লাল-সবুজের হয়ে আবার তার খেলার ইচ্ছা। কিন্তু সেখানেও মরিচা ধরেছে। টি২০ তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচের জন্য নির্বাচকরা কোথাও রাখেননি তাকে। এ নিয়ে হতাশ নন জুনায়েদ।

তিনি বলেন, ‘প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার জন্য দল করা হয়েছে। এখনও অনেক সময় বাকি আছে।’ এখানে তাকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের নৈপুণ্য। শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের হয়ে খেলে ৪৯৯ রান করে তিনি হয়েছেন আট নম্বর। তবে এখানেও নিজের ওপর নিজেরই কিছুটা রাগ আছে জুনায়েদের।

প্রথম লিগে তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। কিন্তু সুপার লিগে গিয়ে তিনি আর সেভাবে ভালো খেলতে পারেননি। প্রথম লিগে তার ১১টি ইনিংস ছিল কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষে ৯৫, সিসিএসের বিপক্ষে ৪২, প্রাইম দোলেশ্বরের বিপক্ষে ২৬, মোহামেডানের বিপক্ষে ৪৭, আবাহনীর বিপক্ষে ২০, কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমির বিপক্ষে ০, প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে ৭৪, গাজী ট্যাংকের বিপক্ষে ৬০, ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে ৪৮, খেলাঘরের বিপক্ষে ২২ ও ব্রাদার্সের বিপক্ষে ০। সেখানে সুপার লিগের পাঁচটি ইনিংস ছিল নিদারুণ ব্যর্থতায় ঢাকা ২১ (মোহামেডান), ৭ (প্রাইম দোলেশ্বর), ২ (গাজী ট্যাংক), ১৪ (প্রাইম ব্যাংক) ও ২১ (কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমি)।

সুপার লিগের এ ঘাটতি তিনি পূরণ করতে চান জাতীয় ক্রিকেট লিগে। সেখানে ভালো করে তিনি টি২০ বিশ্বকাপের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে তুলতে চান। এই ফাঁকে জুনায়েদ জানালেন তারও একটি আশার কথা। জাতীয় ক্রিকেট লিগে ভালো করতে পারলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সামনের সিরিজেও দলে ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। জুনায়েদ তার এ রকম অবস্থার জন্য নিজের ফিটনেসকেও কিছুটা দায়ী করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের পর থেকেই তিনি ব্যাক ইনজুরিতে ভুগছেন। এই ইনজুরির কারণে তিনি বিপিএলের বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলতে পারেননি।

অনেক কষ্ট করে নিজেকে কিছুটা ফিট করে তিনি প্রিমিয়ার লিগ খেলেছেন। জাতীয় ক্রিকেট লিগে খেলে তিনি নিজেকে শতভাগ ফিট করতে চান। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে তিনি বাংলাদেশের হয়ে খেলেছিলেন সব ম্যাচ। এবার ঘরের মাটিতে টি২০ বিশ্বকাপেও খেলার ইচ্ছা মনে লালন করে চলেছেন।