সোমবার , ১১ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৬শে কার্তিক, ১৪৩১ , ৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > টিআইবি’র রিপোর্ট- উদ্যোগ সত্ত্বেও ঘুষ, দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রয়েছে

টিআইবি’র রিপোর্ট- উদ্যোগ সত্ত্বেও ঘুষ, দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রয়েছে

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥
বাংলাদেশে নাগরিকের মৌলিক স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার প্রবণতা বিদ্যমান। ২০১৬ সালে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১৯৫ জন। ২০১৫ সালে সে সংখ্যা ছিলো ১৯২ জন। দেশে তথ্য ও মতামত প্রকাশের বিরুদ্ধে কিছু বিধানের অপব্যবহার করা হচ্ছে। তথ্য-প্রযুক্তি আইন ২০১৩ এর ৫৭ ধারার উদ্বেগজনক অপব্যবহার করা হচ্ছে উল্লেখ করে তা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। আজ রোববার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ১৬: দুনীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যের উপর বাংলাদেশের প্রস্তুতি, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে এমন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও বাংলাদেশে দুর্নীতি ও ঘুষ, অর্থপাচার, মৌলিক স্বাধীনতার ব্যত্যয় ও মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রয়েছে। জাতীয় শুদ্ধাচার কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো প্রত্যাশিত পর্যায়ে কার্যকর নয়। এর পেছনে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব, কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা, নির্বাহী বিভাগ ও প্রশাসনের আধিপত্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আরও বলা হয়, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই জনগণের কাছে জবাবদিহিতার কোনো কাঠামো নেই এবং এসব প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতার ব্যবস্থা দুর্বল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ পর্যাপ্ত নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত এসডিজি-১৬: (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) লক্ষ্যগুলোর বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রায় সবগুলোর ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশে আইন, নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি যথেষ্ট পরিপুষ্ট হলেও কিছু ক্ষেত্রে আইনি দুর্বলতা রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে আইনের অনুপস্থিতিও রয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, দেশে আইনের প্রয়োগ সীমিত বা চর্চায় ঘাটতি রয়েছে। এছাড়াও কোনো ক্ষেত্রে আইনের অপব্যবহার পরিলক্ষিত হয়েছে। দলীয় বিবেচনায় আইনের প্রয়োগ হচ্ছে। আইনি সংস্কার সুপারিশে বলা হয়েছে, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান ও সদস্যদের নিয়োগে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করা এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ নিশ্চিত করা, সরকারি কর্মচারীদের স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা, অধিকার ও দক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য পাবলিক সার্ভিস আইন প্রণয়ন, পুলিশকে জনবান্ধব করতে পুলিশ আইন ১৮৬১ সংস্কার, বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ ধারা বাতিল করণ, নির্বাচন কমিশন গঠন, কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও কার্যক্রম নিয়ে আইন প্রণয়ন, তথ্য প্রযুক্তি আইন ৫৭ ধারা বাতিল করা। প্রতিষ্ঠানিক সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক সংস্থাগুলোর জনবল কাঠামো পর্যালোচনা করে জনবল বৃদ্ধি, প্রেষণে নিয়োগের পরিবর্তে নিজস্ব কর্মীদের পদায়ন, দক্ষতা অনুযায়ী সুবিধা প্রদান, আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি- দুর্নীতি দমনে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী প্রতিষ্ঠানের (দুদক, সিএজি, বিচার বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা) জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। এছাড়াও প্রয়োগিক পর্যায়ের সুপারিশে বলা হয়েছে, বিচার বর্হিভূত হত্যার তদন্ত- সব ধরণের বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও পুলিশী হেফাজতে মত্যুর তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংস্থাটির প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম। লিখিত বক্তব্যে গবেষণার প্রেক্ষাপট ও যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট: এজেন্ডা ২০৩০ বা এসডিজি হিসেবে পরিচিত হবে। গবেষণাটি ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে আগষ্ট পর্যন্ত মেয়াদে তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিবেদন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে ১৭টি বৈশ্বিক অভীষ্ট: ১৬৯টি লক্ষ্য ও ২৪৪টি সূচক ধরা হয়েছে। এ গবেষণার উদ্দেশ্য ও পরিধি হিসিবে তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ১৬ এর কয়েকটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের প্রস্তুতি, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ পর্যালোচনা করা হয়েছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যারা বড় ধরনের অর্থ পাচার করেন তাদের আইনের আওতায় না এনে সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। দেশের বড় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে বলে জানান তিনি। টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, আইনের চোখে সকল নাগরিক সমান হলেও দেশে সকলস্তরে বৈষম্য-বিভাজন ও অনিয়ম বিদ্যমান। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। সকলস্থানে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।