রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > টার্গেট কিলিং বৃদ্ধি ও নাশকতার শংকা

টার্গেট কিলিং বৃদ্ধি ও নাশকতার শংকা

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
দেশে টার্গেট কিলিং বৃদ্ধির আশংকা করছে সরকার। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নস্যাৎ করতে স্বার্থান্বেষী মহল দেশে এভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর চোরাগোপ্তা হামলাও হতে পারে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃংখলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গত ৫ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ‘এগুলো স্পেকুলেশন। ধারণার বশবর্তী হয়ে এগুলো বলা হয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে কিছু বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা এ ধরনের বুলেটিন ছাড়ে। তবে আমাদের আইনশৃংখলা বাহিনী এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে।’

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, যে কোনো জঙ্গি সংগঠন বিশৃঙ্খল, ধ্বংসাত্মক বা নাশকতামূলক ঘটনা ঘটাতে পারে। পাশাপাশি টার্গেট কিলিং ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে পারে। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে স্বার্থান্বেষী মহল দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। এসব কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, গাইবান্ধার সরকারদলীয় এমপি লিটন সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হওয়ায় টার্গেট কিলিংয়ের আশংকা আরও বেড়েছে। গত ২ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রী-এমপিদের সতর্ক হয়ে চলাচলের নির্দেশ দেন। এর আগে সংসদ ভবন চত্বরে লিটনের নামাজে জানাজার পর ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া সংসদ সদস্যদের নিরাপত্তা বাড়ানোর তাগিদ দেন। সবকিছু মিলিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়ার নির্দেশনা আসে।

গত ৩১ ডিসেম্বর গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের সাহাবাজ গ্রামে এমপির নিজ বাসভবনে গুলিবর্ষণের এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় টনক নড়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য যুগান্তরকে জানান, ২ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকের অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। দেশবিরোধী শক্তি চক্রান্ত করছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা আরও ঘটনা ঘটাতে পারে। এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত নতুন নয়। ১৯৭২ থেকে ৭৪ সাল পর্যন্ত সাতজন এমপিকে মারা হয়েছে। জোট সরকারের আমলেও সংসদ সদস্য শাহ এএমএস কিবরিয়া ও আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে সমাজের নানা মতাদর্শের মানুষ এই টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয়েছেন। গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয়। এ ঘটনার দু’দিন পরই ঈদের দিনে শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা হয়। সংশ্লিষ্টদের মতে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ব্যাহত করতে স্বার্থান্বেষী মহল বিশেষ করে জামায়াত দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার রায় ঘোষণার আগ থেকেই সারা দেশে সহিংস অবস্থান নিয়েছিল জামায়াত-শিবির। এরপর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় হওয়ার পর জামায়াত অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারায় ৭০ জনেরও বেশি। কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পরও ব্যাপক সহিংসতা চালায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। ইতিমধ্যে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, আমির মতিউর রহমান নিজামী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হলেও জামায়াত প্রকাশ্যে তেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তবে জামায়াত নেতা আবদুস সুবহান এবং এটিএম আজহারুল ইসলামের ফাঁসির রায় নিয়ে আপিল বিভাগে বিচার কার্যক্রম চলছে। এ বিষয়টিও সরকার সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।