রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > টানা দ্বিতীয় হার আবাহনীর, শামসু’র সেঞ্চুরিতে শ্বাসরুদ্ধকর জয় মোহামেডানের

টানা দ্বিতীয় হার আবাহনীর, শামসু’র সেঞ্চুরিতে শ্বাসরুদ্ধকর জয় মোহামেডানের

শেয়ার করুন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ মানেই যে টানটান উত্তেজনা, তার সবটুকুই কাল দেখা গেল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। আর উত্তেজনায় ভরপুর খেলায় জয় তুলে নিয়েছে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান। আবাহনীর ২৮২ রানের কঠিন চ্যালেঞ্জকে টপকে ৩ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে মোহামেডান। দেশী-বিদেশী স্বনামধন্য অনেক ক্রিকেটারের ভিড়েও ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে নেন শামসুর রহমান।
ওয়ালটন ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে হারানোর নায়ক মোহামেডানের ব্যাটসম্যান শামসুর রহমান শুভই। ম্যাচটি টাইও হতে পারতো। যখন মোহামেডানের স্কোর বোর্ডে ২৮২ রান, তখন ম্যাচের বাকি এক বল। আর শেষ বলে মুক্তার আলী একটি রান নিয়ে মোহামেডানকে লীগের সেরা জয়টি উপহার দেন। অপর প্রান্তে তখন শামসুর রহমান অপরাজিত ১০৫ রানে।
আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে ভীষণ চাপ নিয়ে সেঞ্চুরি হাঁকানো শামসুর বলেন, ‘আমি জানি আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ মানেই বড় ম্যাচ। প্রিমিয়ার লীগের ইতিহাসে এ দুটি দলে খেলা মানেই কঠিন উত্তেজনা। কিন্তু আমি প্রথম থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম বড় ইনিংস খেলব। কারণ, আমি কিছুদিন থেকে ফিফটির পর নিজের ইনিংসটিকে বড় করতে পারছিলাম না। অবশেষে তা সম্ভব হয়েছে। আর এই এমন বড় ম্যাচে আমাদের ভাগ্যও সহায়তা দিয়েছে। আমাদের জয়ের জন্য যখন প্রয়োজন ৩ বলে ৫ রান, তখন ফিল্ডার আল-আমিন হোসেন মুক্তার আলীর একটি ক্যাচ ফেলে দেন। বলা চলে, ভাগ্য তাতেই আমাদের দিকে ঝুঁকে যায়। ভাগ্য সহায় হয়েছিল বলেই এটা হয়েছে।’ আবাহনীর ২৮৩ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে দলীয় ১০ রানেই জুপিটার ঘোষকে হারায় মোহামেডান। এরপর দলীয় ৪২ রানে লঙ্কান ব্যাটসম্যান উপুল থারাঙ্গাও বিদায় নেন মাত্র ১১ করে। তবে আরেক লঙ্কান ওপেনার তিলকারতেœ দিলশান ৫১ রান করে দলের বিপর্যয় সামাল দেন। দিলশাল আউট হলে দলের হাল ধরেন শামসুর রহমান শুভ। দিলশানের সঙ্গে ৩৪ রানের জুটির পর রাজিন সালেহের সঙ্গে ৪৯, আর মোহামেডানের আফগান তারকা মোহাম্মদ নবীর সঙ্গে ৮৭ রানে জুটি গড়ে দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখান শামসুর। দলীয় ২১২ রানের সময় নবী ৪৭ রান করে আউট হলে তার সঙ্গে হাল ধরেন অধিনায়ক মাশরাফি। এ দু’জন ৩১ রানের জুটি গড়ে দলের ল্য সহজ করে তোলেন। তবে ১২ বলে ১৮ রান করে মাশরাফি বিদায় নিলে শেষ জুটিতে মুক্তার আলীকে নিয়ে ৩৮ রান যোগ করে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন শামসুর। ১১৫ বলে ১০৫ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। সীমিত ওভারের ক্রিকেটেই এটি তার প্রথম সেঞ্চুরি।
শামসুর রহমানের ব্যাটে মোহামেডানই শুধু জয় পায়নি তার জাতীয় দলের ফেরার রাস্তাটাও সহজ হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে আমার জাতীয় দলে আসার জন্য এটা কাজে দিবে ঠিক, তবে আমি সেই উদ্দেশ্য নিয়ে খেলিনি। আমি জানি প্রতিটি ম্যাচেই আমাকে ভাল খেলতে হবে। আর তাহলেই অনেক স্বপ্ন পূরণ হবে।’ দলের জয় নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যেতে পারলে জিততে পারব। আর হয়েছেও তাই। এ জয় আমাদের আত্মবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তিন ম্যাচে তিনটি জয় নিয়ে মোহামেডানের পয়েন্ট এখন ৬। আর বিপরীতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী তিন ম্যাচে মাত্র একটি জিতে পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পেরেছে মাত্র দুটি।
এর আগে গতকাল টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে মোহামেডান অধিনায়ক আবাহনীকে ব্যাট করতে পাঠায়। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা নিজের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করতে বল হাতে তুলেই নেন দুটি উইকেট। শাহরিয়ার নাফীসকে ১৯ ও নাজিমুদ্দিন ৯ রান করে যখন সাজঘরে হাঁটেন, তখন আবাহনীর স্কোর বোর্ডে ৩২ রান। তবে সেখানে হাল ধরেন তাদের লঙ্কান অধিনায়ক ইন্ডিকা ডি সারাম ও আরেক লঙ্কান থারাঙ্গা পারানাভিতানা। তবে ৫৫ রানে এ দু’জনের জুটি ভাঙে ৩৩ রানে সারাম সাজঘরের পথ ধরলে। তবে এরপর আবারও আবাহনীর নায়ক হন ১৮ বছরের মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। পারানাভিতানার সঙ্গে ৯২ ও তালিনা কান্দাম্বির সঙ্গে ৭৬ রানের জুটি গড়ে দলের স্কোর বোর্ডকে পরিপূর্ণ করে তোলেন। লীগের তৃতীয় রাউন্ড শেষে মোসাদ্দেকই রান সংগ্রহে সবার ওপরে। ৩ ম্যাচে ৭১ গড়ে ২১৫। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান এই ম্যাচে ৭৬ রান করে ফিরেন মাশরাফির বলে। শেষ পর্যন্ত কান্দাম্বি কিছুটা লড়াই করলেও আবাহনীর স্কোর বোর্ডের চাকা থামে ৪৯.৫ ওভারের ২৮২ রানের পুঁজি নিয়ে। ১০ ওভার বল করে মাশরাফি একাই নিয়েছেন ৪টি উইকেট।

সংপ্তি স্কোর
আবাহনী-মোহামেডান
টস: মোহামেডান (ফিল্ডিং)
আবহনী: ৪৯.৫ ওভারে ২৮২ রান (মোসাদ্দেক ৭৬, পারানাভিতানা ৬১, মাশরাফি ৪/৪০)
মোহামেডান ৫০ ওভারে ২৮৩/৭ (শুভ ১০৫, দিশলান ৫১, নবী ৪৭, নাবিল সামাদ ৩/৫৪)
ফল: মোহামেডান ৩ উইকেটে জয়ী