সোমবার , ১১ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৬শে কার্তিক, ১৪৩১ , ৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > টাকা নিয়েও খালেদার কর্মসূচিতে নামেননি চার নেতা!

টাকা নিয়েও খালেদার কর্মসূচিতে নামেননি চার নেতা!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ খালেদা জিয়ার ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র টাকা নিয়েও মাঠে না নামার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদলের চার নেতার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বিএনপির ছাত্রসংগঠনটিতে চরম ক্ষোভ আর অসন্তোষ বিরাজ করছে।

নেতাকর্মীরা বলছেন, ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচিতে ছাত্রদলের জন্য বরাদ্দকৃত অন্তত ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র দিন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছ থেকে কোনো দিকনির্দেশনা তো মেলেইনি, উল্টো বন্ধ ছিল তাঁদের মোবাইল ফোন। গ্রেপ্তারের অজুহাতে এখনো কয়েকজন আত্মগোপনে রয়েছেন।

ছাত্রদলের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা কাদের পকেটে গেছে? এমন প্রশ্নে কেন্দ্রীয় কমিটির অন্তত ১৫ নেতার মন্তব্য, বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’। অন্যদিকে, ছাত্রদলের ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক টাকার ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। তিনি আঙ্গুল তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতাদের দিকে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচিতে ছাত্রদলের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে সমালোচনা চলছে গত দু’মাস ধরেই। সর্বশেষ বুধবার বিকেলে মার্চ ফর ডেমোক্রেসির জন্য বরাদ্দকৃত টাকার হিসেব নিয়ে হাতাহাতির পর ভণ্ডুল হয়ে যায় কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভা। বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির ডাকে সভা হলেও তিনিই সেখানে যাননি।

স্বাধীনতা মাসে ছাত্রদলের কর্মসূচি এবং তারেক রহমানের কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সভা আহ্বান করা হয়েছিল। সভা সূত্রে জানা গেছে, সেখানে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট আবু সাঈদ ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসিরের মাঝে টাকার হিসেব নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। সভায় সাঈদ বলেন, ছাত্রদল সভাপতি আব্দুল কাদের ভুইয়া জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব গ্রেপ্তার হওয়ার পর বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এমন কোনো কাজ করেননি যার কারণে তাদেরকে নেতা হিসেবে মেনে নেব।

সভায় আবু সাঈদ ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র টাকার হিসেব জানতে চান। এ সময় অন্যরাও তাঁকে সমর্থন জানান এবং এত টাকা কোথায় গেছে, তা জানতে চান। এ সময় কথা বলতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে আবু সাঈদ দাঁড়িয়ে পড়েন। কিন্তু নাসির তাঁকে বসে যেতে বলেন। আর তখনই সাঈদ-নাসির বাগবিতন্ডা হয়।

এ বিষয়ে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসিরের ভাষ্য, অন্য মাধ্যমে এসব টাকা বণ্টন করা হয়েছে। এসব টাকার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার পরেও টাকার হিসেব জানেন না কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলা যায় না। বিএনপির সিনিয়র নেতারা টাকার হিসেব জানেন।

তবে সভায় ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাগবিতন্ডার বিষয়টি এড়িয়ে যান ওবায়দুল হক নাসির। তিনি বলেন, সাঈদ ভাই সিনিয়র মানুষ। দুই একটা বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়েছে।

সভাসূত্র জানায়, টাকা আত্মসাতের বিষয়টি বিএনপি চেয়ারপারসনকে জানানোর প্রস্তাব দেন ছাত্রদলের ভাইস প্রেসিডেন্ট শহিদুল্লাহ ইমরান। তাঁকে অনেকে সমর্থন করে বলেন, পরবর্তীতে ম্যাডামের সঙ্গে বসার সুযোগ হলে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।

ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের দাবি, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফিরোজ ভাইয়ের সম্মতিতে ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচির টাকা বণ্টন করা হয়েছে। তিনি ভালো জানেন, এসব টাকা কোথায়। এছাড়া যাদেরকে টাকার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের ছাত্রদলের অনেকেই চেনেন।

এদিকে, বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি সভা ডেকেও তাতে উপস্থিত না থাকায় প্রশ্ন তুলেছে একাধিক নেতা। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় তিনি থাকলে ভালো হতো বলে মনে করেন তাঁরা। ছাত্রদলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বায়েজিদ আরেফিন বলেন, এ্যানি ভাই সভা আহ্বান করে সভায় আসেননি। কেন তিনি আসেননি, তা বুঝতে পারছি না।

জানা গেছে, হট্টগোলের কারণে কোনো রকম সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভা। পরে সিনিয়র ৪/৫ জন নেতা মার্চ মাসের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার অভিযোগ, মার্চ ফর ডেমোক্রেসির জন্য বরাদ্দকৃত টাকা ছাত্রদলের চার নেতাকে দেয়া হয়েছে। তাঁরা এসব টাকা বিভিন্ন ইউনিটে বণ্টন না করে আত্মসাৎ করেছেন। কাদেরকে এসব টাকা দেয়া হয়েছে- তা ‘ওপেন সিক্রেট’ বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় কমিটির অন্তত ১৫ জন নেতা। তাঁদের দাবি, বিষয়টা যেহেতু ‘ওপেন সিক্রেট’ সেহেতু যারা এসব টাকা আত্মসাৎ করেছেন তাদেরকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ম্যাডাম খালেদা জিয়ার কাছে নালিশ করা হবে বলেও তাঁরা জানান।

কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য জানান, মার্চ ফর ডেমোক্রেসির দুইদিন আগে সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব আহসান তাদেরকে তৈরি থাকতে বলেন। তিনিও অন্তত একশত ছাত্রদল কর্মী নিয়ে ২৯ ডিসেম্বর সকালে সেগুন বাগিচার আশপাশে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু রাজীবের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় নেতাদের দিক নির্দেশনার অভাবে কিছুই করতে পারেননি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় কমিটির ওই সদস্য বলেন, মার্চ ফর ডেমোক্রেসির টাকা যারা আত্মসাৎ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। এরকম সংকটময় সময়ে যারা টাকা আত্মসাৎ করার চিন্তা করে তাদের বিরুদ্ধে ম্যাডামের উচিত কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া। বেঙ্গলিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম