শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > টঙ্গী-ভৈরব বাজার ডাবল রেললাইন, বাড়বে ট্রেন

টঙ্গী-ভৈরব বাজার ডাবল রেললাইন, বাড়বে ট্রেন

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥

ঢাকা : অবশেষে সিগন্যালিংসহ টঙ্গী-ভৈরববাজার রেলের ডাবল লাইন উদ্বোধন হচ্ছে বৃহস্পতিবার। প্রকল্পটির কাজ ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাধা সৃষ্টি হয় এবং নির্মাণ কাজ পিছিয়ে যায়।

অনেক জল্পনা-কল্পনার পর বৃহস্পতিবার সাড়ে ১১টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ রেল লাইনের উদ্বোধন করবেন। গত সোমবার রেলপথ মন্ত্রণালয় বৈঠক করে উদ্বোধনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে।

এ উপলক্ষ্যে ভৈরব বাজার রেল স্টেশন চত্বরে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নিবেন রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। এ সময় কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান, রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন, মহাব্যবস্থাপক ও প্রকল্প পরিচালক সাগর কৃষ্ণ চক্রবর্তীসহ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক জানান, সিগন্যালিংসহ টঙ্গী-ভৈরববাজার পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে সব ট্রেনের ট্রায়াল রান। এটা চালু হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট এবং ঢাকা-ভৈরব-ময়মনসিংহ-এই তিনটি করিডোরের লাইন ক্যাপাসিটি বাড়বে।

তিনি জানান, বর্তমানে এ সেকশনে ২২টি আন্তঃনগর, ১৮টি মেইল এক্সপ্রেস ও ৬টি কন্টেইনার ট্রেনসহ ৪৪টি ট্রেন চলাচল করছে। আর ডাবল লাইনটি চালুর পর থেকে এ লাইন ক্যাপাসিটি প্রায় দ্বিগুণ হবে। ফলে অধিক সংখ্যক ট্রেন চালু করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এই তিনটি করিডোরের পাশাপাশি লাকসাম-চিনকিআস্তানা এবং ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতসা সেতু নির্মাণ কাজও প্রায় শেষ। সেতু দুটি’র নির্মাণ কাজ শেষ হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরে অধিক সংখ্যক কন্টেইনার ট্রেন পরিবহন করা সম্ভব হবে। এতে করে পরিবহন মাধ্যমগুলোর মধ্যে রেলওয়েতে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন বৃদ্ধি পাবে। চট্টগ্রাম পোর্ট থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে আমদানি মালামাল ও চট্টগ্রাম পোর্টে বিভিন্ন রপ্তানি মালামালর স্বল্পমূল্যে পরিবহন করা যাবে বলে সংশ্লিষ্ট রেল কর্মকর্তাদের অভিমত। ফলে রেলওয়ের আয় বাড়বে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে বলেও রেল কর্মকর্তারা জানান।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, টঙ্গী-ভৈরব বাজার পর্যন্ত ডাল লাইনের কাজ শুরু হয়ে গত বছর ৩১ ডিসেম্বর নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধের কারণে নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। ঢাকা-চট্টগ্রাম ৩২০ কিলোমিটারের মধ্যে টঙ্গী-ভৈরব ৬৪ কিলোমিটার একটি উপপ্রকল্প। ২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সিগন্যালিংসহ টঙ্গী থেকে ভৈরব বাজার পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদিত হয় ২০১১ সালের জুলাই মাসে। কাজটি শুরু হয়েছে ২০১১ সালের ২ নভেম্বর।

প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামোর অগ্রগতি ১০০ ভাগ বলে দাবি করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। এ প্রকল্পের মূল ঠিকাদার চীনের সিআরএসসি ও সাব-কন্ট্রাকটর কোরিয়ার এলএস আইএস এবং দেশি সংস্থা ম্যাক্স ও তমা কনসোর্টিয়াম যৌথভাবে কাজটি করছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে করিডোর বাংলাদেশ রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাছাড়া, এ করিডোরটি সার্ক, বিমসটেক, সাসেক ও অন্যান্য আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক রেলওয়ে রুট এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের একটি বড় অংশ। বাংলাদেশ এ উপ-অঞ্চলে পরিবহন এবং ট্রান্সশিপমেন্টের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্তে রয়েছে ভারত ও মিয়ানমার এবং ল্যান্ডলক্ড দেশ ভুটান ও নেপাল এ দেশের কাছেই অবস্থিত।

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে করিডোর দিয়ে বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী দেশগুলোকে চট্টগ্রাম পোর্টের মাধ্যমে মালামাল পরিবহন সুবিধা প্রদান করতে পারে। এর মাধ্যমে এদেশে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করা সম্ভব। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬% এ উন্নীত হওয়ায় দেশের অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রেলওয়ে পরিবহনের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেলেও এ সেকশনে সিঙ্গেল লাইন থাকায় অধিক সংখ্যক ট্রেন চালু করা সম্ভবপর হচ্ছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে করিডোরকে ডাবল লাইনে উন্নীত করার জন্য স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘদিন পর বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে করিডোরের মোট ৩২০.৭৯ কিলামিটারের এর মধ্যে ঢাকা-টঙ্গী অংশে ২২.৯৪ কিলামিটার, আশুগঞ্জ-আখাউড়া অংশে ২৫.৯১ কিলামিটার এবং চিন্কি আস্তানা-চট্টগ্রাম অংশে ৬৮.৮২ কিলামিটার অর্থাৎ মোট ১১৭.৬৭ কিলামিটার ডাবল লাইন রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ১৮ এপ্রিল জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে লাকসাম-চিন্কি আস্তানা ৬০.৭৮ কিলামিটার সেকশনে ডাবল লাইনে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন। টঙ্গী-ভৈরব বাজার ৬৪ কিলামিটার সেকশনে ডাবল লাইন চালু করার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে করিডোরে মাত্র ৭৮.৩৪ কিলামিটার সিঙ্গেল লাইন অবশিষ্ট থাকবে।

অবশিষ্ট ৭৮.৩৪ কিলামিটার সিঙ্গেল লাইন অংশ ডাবল লাইনে উন্নীত করার লক্ষ্যে ভারতীয় ডলার ক্রেডিট লাইনের অর্থায়নে চলমান এপ্রোচসহ দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস রেল সেতু (৬.৭৮ কিলামিটার) নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৬১.৪০% যা আগামী ডিসেম্বর শেষ হবে। সেই সঙ্গে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও ইউরোপীয় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (ইআইবি) অর্থায়নে চলমান লাকসাম-আখাউড়া সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন (৭১.৫৬ কিলামিটার) নির্মাণ কাজের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন আছে। এ প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বর নাগাদ শেষ করার জন্য নির্ধারিত। অর্থাৎ ২০১৯ সাল নাগাদ সমগ্র ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে করিডোরটি ডাবল লাইনে উন্নীত হবে।