শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > জয়দেবপুর রেল জংশনে নানাবিধ সমস্যা

জয়দেবপুর রেল জংশনে নানাবিধ সমস্যা

শেয়ার করুন

মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার
বিশেষ প্রতিনিধি ॥
গাজীপুর: জয়দেবপুর রেল জংশনটি প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ধরণের সুযোগ-সুবিধার অভাবে যাতাযাতকারী হাজার হাজার যাত্রীদের ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
বিগত প্রায় ১৫ বছর পূর্বে জয়দেবপুর রেল স্টেশনটি জংশনে উন্নীত করা হলেও এবং দিনে দিনে যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সরকারের রাজস্ব আয় অনেক বাড়লেও অদ্যবধি আধুনিকতার তেমন কোন ছোঁয়া পড়েনি। এমনকি প্রয়োজনীয় লোকবলও নিয়োগ করা হয়নি। ফলে দুর্ভোগকে নিত্য সঙ্গী করেই এ জংশন দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে বিপুল সংখ্যক যাত্রীদের।
গাজীপুর জেলা শহরে অবস্থান জয়দেবপুর রেল জংশনের। বর্তমানে এ জংশন দিয়ে প্রতিদিন আন্ত:নগর ট্রেনসহ দেশের উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলে ৬২টি ট্রেন যাতায়াত করে থাকে। এ হিসাবে এ জংশন দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াতকারী যাত্রী সংখ্যা কমপক্ষে ১২/১৩ হাজার। প্রায় ১৫ বছর পূর্বে জয়দেবপুর রেল স্টেশনটি জংশনে উন্নীত করা হয়। শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত গাজীপুর জেলায় বর্তমানে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ লক্ষ। এদের মধ্যে বিভিন্ন পেশার কর্মজীবীসহ বিপুল সংখ্যক লোকজন ট্রেন যোগে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করে থাকে।
রেলওয়ের পরিসংখ্যানে রাজস্ব আয়ের দিক দিয়ে দেশের মধ্যে জয়দেবপুর রেল জংশনের স্থান ৬ষ্ঠ হলেও আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা ও যাত্রী সেবার দিক দিয়ে এর স্থান শ’এর নিচে বলে জানা গেছে। শুধু একটি প্লাটফরম নির্মাণ করা ছাড়া জংশনটিতে অবকাঠামোগত আর কোন উন্নয়ন করা হয়নি। বর্তমানে যে দু’টি প্লাটফরম রয়েছে সেগুলো প্রয়োজনের তুলনায় তেমন দীর্ঘ নয়।
তাই দু’টি প্লাটফরমই দক্ষিণের দিকে সম্প্রসারণ করা জরুরী। পাশাপাশি আর একটি প্লাটফরম নির্মাণ করাও প্রয়োজন। রেল জংশনের ১নং মিটার গেজ লাইনটিতে ব্রডগেজ লাইন সংযোজনসহ স্টেশনের পাসিং লাইনের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা জরুরী। রেল জংশনে লোকবলের সংকট থাকায় প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ রেল জংশনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা দরকার। বর্তমানে ক্ষুদ্র পরিসরের একটি কক্ষ থেকে দু’টি মাত্র কাউন্টারে টিকেট বিক্রি করা হয় বলে টিকেট ক্রয়ে যাত্রীদের বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। অনেক সময় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সময়মতো টিকেট না পেয়ে যাত্রীদের বিনা টিকেটে ট্রেনে উঠে পড়তে দেখা যায়। জংশনটিতে শ্রেণী অনুযায়ি যাত্রী বিশ্রামাগার নেই। নেই প্রয়োজনীয় টয়লেট, নেই বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থা। এমনকি জংশনে অনুসন্ধান কাউন্টারও নেই। জংশনে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত রেলওয়ে পুলিশ নেই, তেমনি নেই রেলওয়ের নিরাপত্তা ফোর্সও। আরেকটি লক্ষ্যনীয় দিক হচ্ছে এ জংশন দিয়ে আন্তঃনগর ট্রেনে প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রী যাতায়াত করলেও টিকেট বিক্রির বরাদ্দ রয়েছে এক হাজারেরও কম। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এ জংশনে ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ৫টি আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি নেই। ননস্টপেজের এ ট্রেন গুলো হচ্ছে তিস্তা, রংপুর, মোহনগঞ্জ, অগ্নিবীণা ও ব্রম্মপুত্র এক্সপ্রেস। এলাকাবাসীদের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ এ ৫টি ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবি জানানো হলেও রেল কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছে না। জংশনের ২নং মধ্যবর্তী লাইনটিতে প্লাটফরম সুবিধা না থাকায় ট্রেনে যাত্রীদের বিপদজনক ভাবে উঠা-নামা করতে হয়। বিশেষ করে বৃদ্ধ-শিশু ও নারীদের বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে প্রায় দুই বছর পূর্বে রেল জংশনের পশ্চিম পার্শ্বের গেটটি বন্ধ করে দেওয়ায় স্টেশনের আগমন ও নির্গমনে যাত্রীরা মারাত্মক অসুবিধার সম্মূখীন হচ্ছে। ফলে অনেক ঝুঁকি নিয়ে রেললাইনের উপর দিয়ে মালপত্রসহকারে যাত্রীদের যাতায়াত করতে দেখা যায়। তাই অবিলম্বে পশ্চিম পার্শ্বের গেটটি খুলে দেয়া প্রয়োজন বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
এ ব্যাপারে জয়দেবপুর জংশনের সিনিয়র স্টেশন মাস্টার মোঃ শাহজাহান জানান, এ জংশনের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকা সরকার রাজস্ব আয় পাচ্ছে। প্রতিদিন এ জংশন দিয়ে ১২/১৩ হাজার যাত্রী যাতায়াত করে থাকে। সেই তুলনায় স্টেশনে আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধার অভাব রয়েছে। তাই চাহিদা অনুযায়ী এ জংশনের অবকাঠামোগত সকল সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে এলাকাবাসীদের অভিমত।