শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > জয়দেবপুর থানার দারোগা ও তাঁর শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

জয়দেবপুর থানার দারোগা ও তাঁর শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

শেয়ার করুন

এম. নজরুল ইসলাম আজহার ॥ জয়দেবপুর থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও তাঁর শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর বিরুদ্ধে ১২ লাখ ৫৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এ বিষয়ে গত ৮ এপ্রিল গাজীপুর পুলিশ সুপার বরাবর একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন জনৈক প্রবাসী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বাবুল।
প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী ও অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম বাবুল একই গ্রামের মজিবুর রহমানের সুন্দরী কন্যা মাহবুবা আক্তার নিশা(১৬)কে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি মহাধুমধামের সাথে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে করেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে কনেকে ১৪ ভরি স্বর্ণ ও একটি ডায়মন্ডের নাকফুল দেয়া হয়। বিয়ের খরচ মিটাতে কনের পিতাকে ৩ লাখ টাকা উপঢৌকন প্রদান করেন বাবুল। কনের কাবিনের ৬ লাখ টাকার মধ্যে ৫ লাখ টাকা নগদ প্রদান করেন। ৮ম শ্রেণীতে পড়–য়া স্ত্রী নিশাকে কনের পিত্রালয়ে রেখে বিয়ের কিছুদিন পর বাবুল পুণরায় সৌদি আরব গমন করেন। এরমধ্যে বড় ভায়রা গাজীপুরের টঙ্গী থানার সেকেন্ড অফিসার উপ-পরিদর্শক মনিরুজ্জামান খোকন (বর্তমানে জয়দেবপুর থানায় কর্মরত) উত্তরায় জায়গা কেনার কথা বলে বাবুলের কাছ থেকে দু’কিস্তিতে ৮ লাখ টাকা ধার নেয়। শ্বশুর মজিবুর রহমান ও শ্বাশুড়ী রোজিনা বেগম জামাতা বাবুলের নিকট থেকে বিভিন্ন অজুহাতে ৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকা ধার নেয়।
ইতোমধ্যে ভায়রা খোকনের নিকট ধারের টাকা ফেরৎ চাইলে দু’ভায়রার মধ্যে সম্পর্কের ভাটা পরে। শ্বশুর বাড়ীর সাথেও বাবুলের সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে নষ্ট হতে থাকে। সুন্দরী স্ত্রী নিশাকে হারানোর আশংকায় নিরূপায় হয়ে বাবুল সৌদি আরব থেকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরেন। দেশে ফিরে স্ত্রী, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী, শ্যালক কাউকেই গ্রামের বাড়িতে পাইনি। বাবুল খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পায়, সে দেশে ফিরার দু’দিন আগেই স্ত্রী, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী, শ্যালক টঙ্গী থানার সেকেন্ড অফিসার মনিরুজ্জামান খোকনের বাসায় অবস্থান করছে। বাবুল অনেক চেষ্টা করেও খোকনের বাসায় তাদের সাথে দেখা করতে কিংবা যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়।
অবশেষে স্ত্রীকে ফেরৎ দেয়ার জন্য নিশার আপন চাচা জয়দেবপুর থানাধীন মীরের বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক মোঃ মোবারক হোসেনকে অনুরোধ করলে তিনি উল্টো স্ত্রী নিশাকে দিয়ে তালাক দেয়ার হুমকি প্রদান করেন। অপরদিকে দারোগা খোকন বাবুলকে জামায়াত-শিবির বানিয়ে ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যার হুমকি প্রদান অব্যাহত রাখেন। অবশেষে নিরাপত্তাহীনতার আশংকায় বাবুল দ্রুত দেশ ত্যাগ করেন।
এদিকে এসব বিষয় নিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বাবুল গত ৮ এপ্রিল’১৪ গাজীপুর পুলিশ সুপার, বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে গাজীপুর পুলিশ সুপারের পক্ষে অভিযোগটি তদন্ত করছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান।
গত ৫ জুন’১৪ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান অভিযোগকারী পক্ষে দু’স্বাক্ষীকে ডাকেন গাজীপুর পুলিশ লাইনে তাঁর কার্যালয়ে। দু’স্বাক্ষী হলেন, বাবুলের ভগ্নিপতি মোঃ মোসলেম উদ্দিন, ভাতিজা (বাবুলের) ওমর ফারুক (মানিক)।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য ডাকেন বাবুলের মা খোরশেদা (৫৫), বাবুলের শ্বাশুড়ী রোজিনা বেগম ও স্ত্রী নিশাকে। নিশার সাথে উপস্থিত ছিলেন নিশার চাচা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোঃ মোবারক হোসেন। বাবুলের মার সাথে উপস্থিত ছিলেন, মোঃ মোসলেম উদ্দিন, ওমর ফারুক (মানিক), কাজীর সহকারী মনিরুল হক ও তাদের এক আত্মীয় ই.কে.এম সেলিম।
বাবুলের মা খোরশেদা বেগম বলেন, ‘নিশা ৮ম শ্রেণীতে পড়–য়া অবস্থায় আমার ছেলেকে দিয়ে মহাধুমধামের মাধ্যমে বিয়ে করাই। বিয়ের পর নিশা তার পিতার বাড়িতে থেকেই স্কুলে আসা-যাওয়া করতো। আমার বাড়ির পাশেই তাদের বাড়ি থাকায় মাঝে মধ্যে আমার বাড়িতে বেড়াতে আসতো। আমার এবং আমার ছেলের সাথে মেয়ে ও তার পরিবারের লোকজনদের কখনো কোন মনোমালিন্য হয়নি’।
আজ দুপুরে গাজীপুর পুলিশ লাইনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে মোসলেম উদ্দিন, মানিক ও ই.কে.এম সেলিম এ প্রতিবেদককে জানান, গত ৫ জুন দুপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে স্বাক্ষী দিতে আসলে কার্যালয়ের সামনে দারোগা খোকন তাদের হুমকি প্রদান করেন; বাবুলের পক্ষে স্বাক্ষী দেয়ার কারণে এ দু’জনকে বিভিন্ন থানায় চুরি ও ডাকাতি মামলা দিয়ে জীবনের শিক্ষা দিয়ে ছাড়বেন।
এ বিষয়ে দারোগা মনিরুজ্জামান খোকন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘টাকা-পয়সার বিষয়ে তাদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার শ্যালিকা গত গত ১৫ ফেব্রুয়ারি’১৪ বাবুলকে তালাক প্রদান করেন। আমার শ্বশুর অসুস্থ্য বিধায় আমার বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সে সুবাধে সকলেই আমার বাসায় অবস্থান করছেন’।
নিশার চাচা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোঃ মোবারক হোসেন বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় তাদের মধ্যে সেভারেশন হয়। মেয়ে ঐ ছেলের ঘর না করলে আমাদের কি করার আছে? তবে অর্থের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করুক। তিনি এ প্রতিবেদককে আরো বলেন, বাবুল বিদেশ থেকে লোকজন ভাড়া করে আমাদের বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগানোর চেষ্টা করেছিল। এ বিষয়ে মুরাদনগর থানায় একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি সম্পূর্ণ পারিবারিক। স্বাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। আপাদত পজেটিভ-নেগেটিভ বলা যাচ্ছে না’।