শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > জোড়া খুনের আসামিকে শিক্ষক বানাতে আইন লঙ্ঘন!

জোড়া খুনের আসামিকে শিক্ষক বানাতে আইন লঙ্ঘন!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে নিয়ম বহির্ভূতভাবে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ন্যূনতম যোগ্যতা না থাকার পরও এক ছাত্রলীগ ‘ক্যাডারকে’ নিয়োগ দেয়ার জন্য দু’বছর আগে দেয়া বিজ্ঞপ্তির আলোকে শিক্ষক নিয়োগের পাঁয়তারা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগামী মঙ্গলবার ওই বিভাগে নিয়োগের নির্বাচনী বোর্ডের সভার দিন ধার্য রয়েছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স অমান্য করে দু’বছর আগে দেয়া বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খোদ ইতিহাস বিভাগের শিক্ষকরা। গত সোমবার অনুষ্ঠিত বিভাগের পরিকল্পনা কমিটিতে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় শিক্ষকরা আগামী মঙ্গলবারের নির্বাচনী বোর্ডের সভা আইনসিদ্ধ নয় বলে তা বাতিলের জন্য উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন।

এর আগে ২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ারুল আজিম আরিফ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন তার ছেলেকে। প্রশাসনিক ভবনে কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দিয়েছেন তার শ্যালিকা ও পুত্রবধূকে।

জানা যায়, ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক পদে দু’জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন অর্ডিন্যান্স অনুসারে কলা অনুষদের চারুকলা, ইংরেজি, বাংলা ও নাট্যকলা বাদে অন্য বিভাগগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের আবেদনের ক্ষেত্রে যোগ্যতা নির্ধারণে এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স, মাস্টার্স মিলে যেকোনো তিন স্তরে প্রথম বিভাগ থাকার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। এছাড়া বাকি একটিতে কমপক্ষে ৫৫ শতাংশ নম্বর পেতে হবে।

আর গ্রেডিং পদ্ধতিতে কলা অনুষদের ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসিতে পৃথকভাবে ন্যূনতম জিপিএ ৩.০০ থাকতে হবে। তবে অনার্স ও মাস্টার্সে পৃথকভাবে ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০ থাকতে হবে।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষে ডাবল মার্ডার মামলার আসামি রন্টু দাসের এসএসসির গ্রেড পয়েন্ট হচ্ছে ২.৯০। অর্থাৎ বিজ্ঞাপন অনুযায়ী রন্টুর ন্যূনতম যোগ্যতাও নেই। কিন্তু দলীয়করণ করে এই ছাত্রলীগ ক্যাডারকে নিয়োগ দেয়ার জন্য অর্ডিন্যান্সের শর্ত শিথিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসিতে পৃথকভাবে জিপিএ ৩.০০ এর স্থানে পরীক্ষা দু’টির মোট জিপিএ ৭.০০ নির্ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮২তম সিন্ডিকেট। তবে গ্রেড পয়েন্ট শিথিলের এই সিদ্ধান্ত কোনো পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়নি।

বিজ্ঞাপন অনুযায়ী রন্টুর এসএসসি ফলাফল নিয়োগের শর্ত পূরণ না করলেও তিনি নিয়োগে আবেদন করেন। ওই সময় বিভাগের (ইতিহাস) দুই পরিকল্পনা কমিটিতে ওই বিভাগের এক প্রভাবশালী শিক্ষক (ড. ইমরান হোসেন) রন্টুকে অবহেলিত সম্প্রদায়ের লোক বলে বিবেচনার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। কিন্তু বিভাগের শিক্ষকরা নির্দিষ্ট একজনকে নিয়োগের জন্য অর্ডিন্যান্স ভঙ্গ করে এই শর্ত শিথিলে বাধা দেন। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারদলীয় প্রভাবশালী শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে ৪৮২তম সিন্ডিকেট সভায় যোগ্যতার শর্ত শিথিল করেন।

এ বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন, বিজ্ঞাপন অনুসারে ওই শিক্ষার্থী নিয়োগের আবেদনই করতে পারে না। কিন্তু বিভাগের এক প্রভাবশালী শিক্ষক দলীয়করণের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপ দিয়ে এই শর্ত শিথিল করে। যা সম্পূর্ণ অন্যায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স বিরোধী। এছাড়া এই শর্ত শিথিলের বিষয়টি আইনত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া দরকার ছিল। এতে আরো অনেক শিক্ষার্থী নিয়োগে আবেদন করতে পারতো। তাই গত সোমবারের প্ল্যানিং কমিটিতে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয় ঊর্ধ্বতন প্রশাসনকে তা বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগরসহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদল্যালয়গুলোতে উপাচার্য ও উপ-উপচার্য সমন্বয় করে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দেন। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী পর্যন্ত সব নিয়োগের একমাত্র সিদ্ধান্তদাতা উপাচার্য। ফলে নিয়োগে নিয়ম-অনিয়মের বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

এই বিষয়ে জানার জন্য উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম আরিফের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য জানা যায়নি।

উল্লেখ্য, এর আগে নিয়ম বর্হিভূতভাবে বাংলা, সমাজতত্ত্ব, নৃবিজ্ঞান, মাইক্রোবায়োলজি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগে বিজ্ঞাপিত পদের অতিরিক্ত ২৭ জন শিক্ষক নিয়োগ দেন বর্তমান উপাচার্য। এসব শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফলাফল, মেধা ও যোগ্যতার চেয়ে ব্যক্তিগত ও দলীয় পরিচয়কেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এসব বিভাগের শিক্ষকরা। এসব নিয়োগে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম বা শিক্ষা জীবনের সর্বস্তরেই প্রথম শ্রেণী পাওয়া আবেদনকারীদের বাদ দিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বাংলামেইল২৪ ডটকম