শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > জামায়াতে ইসলামী এগিয়ে যে কারণে

জামায়াতে ইসলামী এগিয়ে যে কারণে

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের হিসাবে পিছিয়ে। জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যাশার চেয়ে ভাল ফলাফলের বিশ্লেষণ চলছে সর্বত্র। বিভিন্ন উপজেলার ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, বড় দু’দলের কোন্দলে বেরিয়ে আসে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী। নির্বাচন কমিশনের হিসাব মতে, প্রথম দফায় অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনের মোট ভোটার ছিল ১ কোটি ৬৪ লাখ ৭৮ হাজার ১৭২ জন। এদের মধ্যে ১৯শে ফেব্রুয়ারি ৬২.৪% ভোটার ভোট দিয়েছেন।

সে হিসাবে মোট ভোট পড়েছে ১ কোটি ২ লাখ ৮২ হাজার ৩৭৯টি। কাস্ট হওয়া এই ভোটের মধ্যে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীরা পেয়েছেন প্রায় ৩২ লাখ ভোট। তার মধ্যে বিএনপির বিজয়ী ৪৩ প্রার্থীর ভোটের সংখ্যা ২৪ লাখ। আওয়ামী লীগের বিজয়ী ৩৪ প্রার্থীর ভোটের সংখ্যা ১৬ লাখ। ৩টি উপজেলায় দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ প্রার্থীই আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন। এমন ঘটনা বিএনপির ক্ষেত্রে ঘটেছে একটি। বিভাগ ভিত্তিক হিসাব করে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগের ২৫ উপজেলার ১১টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ, একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়া বাকি সবকটিই জিতে নিয়েছে বিএনপি।

খুলনা বিভাগের ১৪টি উপজেলার ৮টিতে বিএনপি, ৫টি আওয়ামী লীগ ও ১টিতে জামায়াতে ইসলাম বিজয়ী হয়েছে। রাজশাহী বিভাগের ১৭টি উপজেলায় বিএনপি ৮টি, আওয়ামী লীগ ৪টি ও জামায়াত ৫টিতে বিজয়ী হয়েছে। রংপুর বিভাগের ১৬টিতে বিএনপি ৬টি, আওয়ামী লীগ ৫টি, জামায়াত ৩টি, জাতীয় পার্টি ১টি ও একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়। সিলেট বিভাগে ১২টি উপজেলার ৬টিতে আওয়ামী লীগ, ৪টিতে বিএনপি ও ২টিতে জামায়াত বিজয়ী হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে ৮টি উপজেলায় বিএনপি ৩, আওয়ামী লীগ ২ ও অন্য প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন ৩টিতে। বরিশাল বিভাগে ৩টি উপজেলার ৩টিতেই বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ।

প্রথম দফার নির্বাচনে জামায়াতের ফলাফলকে বাজিমাত বলছেন অনেকেই। ২০০৮ সালের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬টিতে জয় পাওয়া এই দলটি রাজনৈতিক নানা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেও নির্বাচনের ফলাফলে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। দলটির ১২জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছে এবার। রংপুরের মিঠাপুকুরে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তিন পদেই প্যানেল বিজয় পেয়েছে দলটি। এছাড়া জামায়াতের ৬ জন প্রার্থী নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি হিসাবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। একেক এলাকায় দলটির সাফল্যের একেক রকম কারণ দেখা গেছে।

সিলেটের গোলাপগঞ্জে বড় দুই দলের কোন্দলের সুযোগ নিয়েছেন জামায়াত নেতা হাফেজ নাজমুল ইসলাম। তিনি ২৪ হাজার ৩৬৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ছিল আরও ৬জন। যাদের ৩জন ছিলেন আওয়ামী লীগ আর ৩জন ছিলেন বিএনপি সমর্থক। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল হোসেন পেয়েছেন ২৩ হাজার ৬০২ ভোট। মাত্র ৭৬১ ভোট এগিয়ে থেকে বিজয়ী হয়েছেন জামায়াতের প্রার্থী। ওই উপজেলায় বিএনপির তিন প্রার্থীর প্রাপ্ত মোট ভোট হয় ৩৫৫৮১, আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী সর্বমোট পেয়েছেন ৩১ হাজার ১৫৯ ভোট। জামায়াত বিজয়ী হয়েছে এমন ৮টি উপজেলায় নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ওই ৮টি উপজেলার সাতটিতেই বিএনপির কোন প্রার্থী ছিল না।

নির্বাচনের আগেই বিএনপির প্রার্থীকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করাতে সক্ষম হয় জামায়াত। বগুড়ার শেরপুর আসনে বিএনপির এক প্রার্থী ছিলেন। তার মার্কাও ছিল। কিন্তু তিনি নিজেই জামায়াতের পক্ষে নির্বাচনে প্রচার কাজ চালিয়েছেন। পাবনার সাঁথিয়ায় এক বিএনপি নেতা জামায়াতের বিরুদ্ধে প্রার্থী হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। ওই সব এলাকায় জামায়াতের প্রার্থীরা ১৯ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসাবেই বিজয়ী হয়েছে। জামায়াতের বিজয়ী হওয়া ৩টি উপজেলায় বিএনপির বিএনপির প্রার্থী দ্বিতীয় স্থান পায়। একটিতে দ্বিতীয় হন এক স্বতন্ত্র প্রার্থী। জামায়াতের কোন এলাকায়ই বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল না।

উপজেলা পরিষদের প্রথম দফা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদেও আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়েছে। জয়জয়কার হয়েছে বিএনপি ও জামায়াতের। আওয়ামী লীগ সমর্থিত ভাইস চেয়ারম্যান কেউ বিজয়ী হননি ১৭ জেলার ৩০ উপজেলায়। বিএনপি সমর্থিত কোন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বিজয়ী হননি ৯ জেলার ১৩ উপজেলায়। স্থানীয় তথ্য অনুযায়ী গত ১৯শে ফেব্রুয়ারি ৯৭ উপজেলায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত ৩৮ জন ও জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত ২৪ জন মিলিয়ে এই জোটের ৬২ জন নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ২৩ জন। স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের ১১ জন ভাইস চেয়ারম্যান বিজয়ী হয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের ক্ষেত্রেও এগিয়ে বিএনপি।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৩৫ জন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। একই পদে নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত ৪৫জন প্রার্থী। জামায়াতে ইসলামেরও ৯জন নারী এই পদে বিজয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের বিজয়ী হয়েছেন ৭ জন। ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কোন প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারেননি যশোরের অভয়নগর, রংপুরের তারাগঞ্জ ও মিঠাপুকুর, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, হবিগঞ্জের মাধবপুর ও বাহুবল, দিনাজপুরের কাহারোল ও খানসামা, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, শেরপুর, ধুনট, নন্দিগ্রাম, দুপঁচাচিয়া ও সোনাতলা, চাঁপাই নবাবগঞ্জের নাচোল, নওগাঁর রানীনগর ও মহাদেবপুর, রাজশাহীর মোহনপুর, নাটোরের সিংড়া, মেহেরপুরের সদর উপজেলা, কুষ্টিয়ার সদর উপজেলা, মাগুরা জেলা সদর ও শ্রীপুর, খুলনার কয়রা ও দিঘলিয়া, সাতক্ষীরার আশাশুনি, নরসিংদীর পলাশ ও বেলাবো ও চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও মিরসরাই উপজেলায়।

রংপুরের তারাগঞ্জ ও মিঠাপুকুর, গাইবান্ধার সাঘাটা ও গোবিন্দগঞ্জ, রাজশাহীর মোহনপুর, নড়াইলের কালিয়া, ভোলার লালমোহন, বরিশালের গৌরনদী ও বাকেরগঞ্জ, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী ও মকসুদপুর, মাদারীপুরের কালকিনি ও মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত কোন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারেননি।