শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > জামায়াতের সহযোগী আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১২৭

জামায়াতের সহযোগী আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১২৭

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর পৃষ্ঠপোষকতায় সারাদেশে পরিচালিত হচ্ছে দেশি-বিদেশি ৪৩টি এনজিওসহ ১২৭টিরও বেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান ধর্মের নাম ব্যবহার করে নানা কৌশলে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখে আর্থিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছে। যার প্রত্যক্ষও পরোক্ষ সুফল পাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী।জামায়াতের সহযোগী আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১২৭
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ‘রাজনৈতিক দল’ বা ‘সংগঠন’ হিসেবে জামায়াতের বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে তদন্ত সংস্থার দাখিল করা ‘প্রতিবেদন’ পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্ত সংস্থা এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনগত দিক খতিয়ে দেখতে প্রস্তাব দিয়েছে। সমকালের কাছে এসব প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দেশি-বিদেশি এনজিও ৪৩, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২২ এবং হাসপাতাল-ক্লিনিক ১০টি।
এদিকে, যুদ্ধাপরাধী ‘দল’ বা ‘সংগঠন’ হিসেবে জামায়াতের বিচার শুরুর পাশাপাশি দলটির অর্থের উৎস চিহ্নিত করে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের দাবি জানিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, জামায়াতের বিচার করলেই হবে না, দলটির অর্থের উৎসও বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করার অপতৎপরতা প্রতিরোধ করা যাবে না।
গত ২৭ মার্চ ৩৭৩ পৃষ্ঠার এ ‘তদন্ত প্রতিবেদন’ ও ৯ হাজার ৫৫৭ পৃষ্ঠার আনুষঙ্গিক তথ্য-উপাত্ত ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের কাছে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মতিউর রহমান। ওই একই প্রতিবেদনে জামায়াত ও তার সহযোগী সংগঠন আলবদর, আলশামস, রাজাকারসহ তাদের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামকে বিচারের মুখোমুখি করতে আইনগত বিষয় খতিয়ে দেখার জন্যও প্রস্তাব করা হয়।
তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন এরই মধ্যে পর্যালোচনা করে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিলের জন্য কাজও শুরু করেছে সাত সদস্যের প্রসিকিউশন টিম। ওই টিম সমন্বয়কের দায়িত্বে রয়েছেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। তিনি সমকালকে বলেন, জামায়াতসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আইনগত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তুরিন আফরোজ বলেন, জামায়াত যুদ্ধাপরাধী দল। তদন্ত সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে ১২৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জামায়াতের সম্পৃক্ততার বিষয় উল্লেখ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে আইনি প্রক্রিয়ায় অনুমোদনের ভিত্তিতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে অনুমোদন বাতিলসহ কোন প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া যায়থ তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
টিমের অন্য প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম বলেন, জামায়াতের অর্থের উৎস হচ্ছে এসব (১২৭টি) প্রতিষ্ঠান। জামায়াতের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হলে এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা যায় কি-না, সে বিষয়ে আইনগত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।তদন্ত সংস্থার প্রধান আবদুল হান্নান খান সমকালকে বলেন, জামায়াতসহ সহযোগী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলে তারা এদেশে ভবিষ্যতে কোনো ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবে না । তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে প্রসিকিউশন শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নেবে। তদন্ত সংস্থার সহ-সমন্বয়ক সানাউল হক বলেন, ট্রাইবুন্যালস আইনের ৪(১) ও (২) ধারা অনুসারে জামায়াতের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি অর্থাৎ সব অপরাধের দায় সংগঠন বা দলটির উল্লেখ করে বিচারের জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া জামায়াতের সহযোগী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকা উল্লেখ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও আইনগত দিক খতিয়ে দেখতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।এ বিষয়ে জামায়াতের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, জামায়াতসহ সহযোগী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ভূমিকা গণতন্ত্রকে বিপন্ন করার উদ্যোগ। এটি ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। এতে দেশের গণতান্ত্রিক চরিত্র ধ্বংস হবে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, শুধু জামায়াতের বিচার করলেই হবে না; দলটির অর্থের উৎস বন্ধ করতে হবে। কারণ জামায়াত নানা কৌশলে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ার মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করছে এবং সেই অর্থ দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত করতে ব্যয় করছে। তিনি বলেন, জামায়াতের বিচার দু’ভাবে অর্থাৎ একাত্তরে গণহত্যা ও বর্তমানে যেসব সন্ত্রাসী ভূমিকা দলটির রয়েছে, তার জন্য হতে পারে। এ ছাড়া দলটির অর্থের উৎস বন্ধ করতে হলে সহযোগী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু সেটা ট্রাইব্যুনাল বা প্রচলিত আদালতে কীভাবে হবেথ সে বিষয়টি সংশ্লিষ্টদেরই খতিয়ে দেখা উচিত। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ড. সারওয়ার আলী বলেন, দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর অপতৎপরতা থেকে বাঁচাতে হলে দ্রুত জামায়াত সংশ্লিষ্ট এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে।
তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক ১২৭টি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছেথ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ফারইস্ট ইসলামী ব্যাংক, ফয়সাল ইনভেস্টমেন্ট ফাউন্ডেশন, ইসলামী
ফাইনান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, তাকাফুল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছেথ ইবনে সিনা ট্রাস্ট, বাংলাদেশ মসজিদ মিশন, দারুল ইহসান ট্রাস্ট, আল ইনসান ফাউন্ডেশন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিডি ফুডস, টি কে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, ইবনে সিনা ফার্মাসিটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ইয়ুথ গ্রুপ, কেয়ারি গ্রুপ, মিশন গ্রুপ, মেট্রো গ্রুপ এবং তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দিগন্ত টেলিভিশন, নয়াদিগন্ত, সংগ্রাম, দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশন, আল মানার অডিও ভিউসাল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছেথ ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, আইবি মেডিকেল কলেজ, আইবি কমিউনিটি হসপিটাল, আইবি ফিজিওগ্রাফি অ্যান্ড ডিজ্যাবল রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল, আইএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ইমেজিং সেন্টার, আল মাগরিব চক্ষু হসপিটাল, ফুয়াদ আল খতিব মেডিকেল ট্রাস্ট ও সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট ডায়ালগ।বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছেথ কেয়ারি ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত পিংক সিটি, মিশন ডেভেলপারস, কেয়ারি হোল্ডিং, কোরাল রিফ, ইনটিমেট হাউজিং, সোনারগাঁ হাউজিং, আল-হামরা শপিং সেন্টার (সিলেট), মেট্রো শপিংমল, মনোরম আইবি ক্রাফট অ্যান্ড ফ্যাশন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত আইবি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, আইবি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চিটাগাং, কিং ফয়সাল ইনস্টিটিউট, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লার আল-আমিন একাডেমী, ইসলামী প্রি-ক্যাডেট স্কুল, লাইসিয়াম কিন্ডারগার্টেন, আল হেরা কিন্ডারগার্টেন।
এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর তালিকাভুক্ত দেশি-বিদেশি ৪৩ এনজিওর কর্মকাণ্ডে জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। এগুলো হচ্ছেথ সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক রিলিফ অর্গানাইজেশন, জাস্টিস কনসার্ন, ইসরা ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ইসহারুল মুসলিমিন, রাবিতা আল আলম আল ইসলামী, আল হারামেইন ইসলামী ফাউন্ডেশন, আল ফোরকান ফাউন্ডেশন, ফুয়াদ আল খতিব ফাউন্ডেশন, সার্ভেন্টস অব সাফারিং হিউমিনিটি ইন্টারন্যাশনাল, ইসলাহুল মুসলিমিন, রিভাইভল অব ইসলামিক হেরিটেজ সোসাইটি, আহলে হাদিস লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টার, রাবেতা তৌহিদ ট্রাস্ট, বেনোভোলেন্ট ট্রাস্ট, আল হারমেইন, কুয়েত চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, ইসলামিক রিলিফ এজেন্সি, মুসলিম এইড বাংলাদেশ, ইসলামিক এইড সমিতি, অ্যাসোসিয়েট অব মুসলিম ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, আদর্শ শিক্ষা পরিষদ, আদর্শ কুটির, এগ্রো-ইন্টারন্যাশনাল ট্রাস্ট, আল ফারুক সোসাইটি, আল আমিন, আল মুদারাবা ফাউন্ডেশন লিমিটেড, আল মজিদ সোসাইটি, আল ইনসান-সুনিসি সমিতি, আঞ্জুমান ইতিহাদ বাংলাদেশ, অ্যাসোসিয়েশন ফর ওয়েলফেয়ার অব হিউম্যান সার্ভিসেস, অ্যাসোসিয়েশন অব মুসলিম ওয়েলফেয়ার এজেন্সি ইন বাংলাদেশ, বায়তুস সার্ফ ফাউন্ডেশন লিমিটেড, সাথিয়া-বাংলা পরিষদ, বাংলাদেশ কৃষি কল্যাণ সমিতি, ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ মসজিদ সমাজ, দারুল ইফতা, দারুস সালাম সোসাইটি, ধলেশ্বরী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি, আল ফারুক ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মানারাত ট্রাস্ট।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছেথ বাংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্র, সাইমুম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছেথ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক হাইয়ার লার্নিং সোসাইটি, আল মারকাজুল ইসলামী ও অ্যাসোসিয়েশন অব মুসলিম ওয়েলফেয়ার এজেন্সিস অব বাংলাদেশ। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত পরিবহন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছেথ অনাবিল, আবাবিল, ছালছাবিল, সৌদিয়া, পাঞ্জেরী, বোরাক, কেয়ারী সিন্দাবাদ (সেন্টমার্টিন)। (সমকাল)
বেঙ্গলিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম ডেস্ক