শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > জামায়াতের শুরুর অপেক্ষা ॥ এরপর মুজাহিদের আপিল শুনানি

জামায়াতের শুরুর অপেক্ষা ॥ এরপর মুজাহিদের আপিল শুনানি

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: দ্বিতীয় যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের। শনিবার (১১ এপ্রিল) রাত দশটার পরে ফাঁসি কার্যকরের পর রোববার (১২ এপ্রিল) ভোররাত পাঁচটা দশ মিনিটে শেরপুরের গ্রামের বাড়িতে সম্পন্ন হয়েছে তার দাফনও।

এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে প্রথমবারের মতো ফাঁসির রায় কার্যকর হয় ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে। সেদিন ফাঁসিতে ঝোলানো হয় জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে।

স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরে ইতিহাসের দায় মোচনের এ ধারায় এবার শুরু হতে যাচ্ছে অপর শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতেরই সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আপিল মামলার শুনানি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আসা ১৩ আপিল মামলার মধ্যে চতুর্থ হিসেবে এ শুনানি শুরুর অপেক্ষায় আছে।

একই দলের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল মামলার চূড়ান্ত রায়ে তাকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এটি এখন বিচারিক প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত ধাপ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের পর্যায়ে রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে রিভিউ আবেদনের মাধ্যমে ফাঁসির রায় পুনর্বহালের আরজি জানানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ।

এদিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের বিরুদ্ধেও তদন্ত শেষ হয়ে এখন বিচার শুরুর অপেক্ষায়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী এ দল এবং তার সকল সহযোগী সংগঠন ও মুখপত্রের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দিয়েছেন তদন্ত সংস্থা। আইনি জটিলতা কাটিয়ে শিগগিরই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিলের আশা করছেন প্রসিকিউশন।

বিচারের মুখোমুখি ৭৪ ব্যক্তি ও জামায়াত
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠন করা হয়। বিচার প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করতে তিন সদস্যের দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয় ২০১২ সালের ২২ মার্চ।

দুই ট্রাইব্যুনাল মিলিয়ে গত পাঁচ বছরে দেওয়া হয়েছে মোট ১৭টি মামলার রায়, যেগুলোতে ১৮ যুদ্ধাপরাধীর সাজা ঘোষিত হয়েছে। তাদের বেশিরভাগেরই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে দু’জনের ফাঁসির রায় কার্যকরও হয়েছে। একজন অভিযুক্ত বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালে মারা যাওয়ার কারণে তার মামলার নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

বর্তমানে দুই ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে ৫ মামলায় আরও ৯ জনের, বিচার শুরু হতে যাচ্ছে দুই মামলায় ১৩ জনের এবং তদন্ত চলছে আরও ২১ মামলায় ৩৩ আসামির বিরুদ্ধে।

সব মিলিয়ে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন অথবা হতে যাচ্ছেন মোট ৭৪ ব্যক্তি এবং দলগতভাবে জামায়াত। ১৮ জনের রায় ঘোষিত হওয়ায় এবং একজন বিচার চলাকালে মারা যাওয়ায় বাকি ৫৫ জন ও জামায়াত যুদ্ধাপরাধের শাস্তি অথবা বিচারের অপেক্ষায়।

কামারুজ্জামান-কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর
ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রায় তিন বছর ৯ মাস পর একাত্তরে ‘মিরপুরের কসাই’ বলে পরিচিত কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচিত হয়। আর পাঁচ বছরের মাথায় মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের নৃশংস যুদ্ধাপরাধের হোতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরে কলঙ্কমুক্তির আরও একধাপ এগিয়েছে দেশ।

প্রথমবারের মতো কার্যকর হয় ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে ফাঁসি কার্যকর হওয়া কাদের মোল্লার মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয় একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর। ওই দিন ৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ৬টির মধ্যে ৫টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল-২ এর ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা বাড়িয়ে চূড়ান্ত এ রায় প্রদান করেন সর্বোচ্চ আদালত। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় এবং ১২ ডিসেম্বর রাতে কার্যকর হয় কাদের মোল্লার ফাঁসি।

অন্যদিকে ২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-২। এ ফাঁসির আদেশ থেকে খালাস চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন কামারুজ্জামান। তবে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় আপিল করেননি রাষ্ট্রপক্ষ।

গত বছরের ৩ নভেম্বর কামারুজ্জামানকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রেখে সংক্ষিপ্ত আকারে আপিল মামলাটির চূড়ান্ত রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। এ সর্বোচ্চ দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে কামারুজ্জামান রিভিউ আবেদন করেন গত ৫ মার্চ। গত ৬ এপ্রিল এ রিভিউ আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। এর পাঁচদিনের মাথায় শনিবার কার্যকর হয়েছে তার ফাঁসি।

তবে ট্রাইব্যুনাল তাকে দুই হত্যা-গণহত্যার দায়ে ফাঁসি দিলেও একটিতে বহাল রেখে ও একটি অভিযোগের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। অন্যদিকে ট্রাইব্যুনালে ৭টির মধ্যে ৫টি অভিযোগ প্রমাণিত হলেও আপিল বিভাগে প্রমাণিত হয়নি একটি, যেটিতে খালাস পেয়েছেন কামারুজ্জামান। প্রমাণিত বাকি দু’টির সাজা ও প্রমাণিত না হওয়া দু’টি অভিযোগের বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে একমত আপিল বিভাগ।

ট্রাইব্যুনালের ১৭ রায়
দুই ট্রাইব্যুনাল ১৭ মামলায় ১৮ জনের মধ্যে ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড, একজনকে যাবজ্জীবন, একজনকে ৯০ বছর ও দু’জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেন। এর মধ্যে ৯ মামলার রায়ে দশজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল-২ আর ৮ মামলায় আট অভিযুক্তের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল-১।

ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগ মিলিয়ে এ পর্যন্ত ফাঁসির আদেশ পেয়েছেন ১৪ জন। রায় কার্যকর হওয়া জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ছাড়া ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য ১২ জন হচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরী, ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সহ সভাপতি পলাতক জাহিদ হোসেন খোকন রাজাকার, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির আবদুস সুবহান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী, পলাতক জামায়াত নেতা বুদ্ধিজীবী হত্যার দুই ঘাতক আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দিন, পলাতক জামায়াতের সাবেক রোকন (সদস্য) আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা ও জামায়াতের সাবেক রোকন মোবারক হোসেন এবং জাতীয় পার্টির সাবেক প্রতিমন্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার।

অন্যদিকে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির আদেশ দিলেও সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এছাড়া জামায়াতের সাবেক আমির প্রয়াত গোলাম আযমকে ৯০ বছর এবং বিএনপির সাবেক নেতা সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত আব্দুল আলীম ও জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয় ট্রাইব্যুনাল থেকে।

ট্রাইব্যুনাল-১ ঘোষিত আটটি রায়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার জব্বারের আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর আজহারের ফাঁসি, ২৪ নভেম্বর মোবারকের ফাঁসি, ১৩ নভেম্বর খোকন রাজাকারের ফাঁসি, ২৯ অক্টোবর নিজামীর ফাঁসি, ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীর ফাঁসি, ১৫ জুলাই গোলাম আযমের ৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে ট্রাইব্যুনাল-২ ঘোষিত ৯টি মামলার মধ্যে ফাঁসির আদেশ দিয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সুবহান, গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর সৈয়দ কায়সার, ২ নভেম্বর মীর কাসেম আলী, ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর আশরাফুজ্জামান ও মাঈনুদ্দিন, ১৭ জুলাই মুজাহিদ, ৯ মে কামারুজ্জামান ও ২১ জানুয়ারি বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে এবং ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে আলীম ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায় দেন দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল।

সাঈদীর মামলার মাধ্যমে প্রথম ট্রাইব্যুনাল এবং বাচ্চু রাজাকারের মাধ্যমে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। সাঈদীর মামলাটি ছিল ট্রাইব্যুনালের ১ নম্বর মামলা। অন্যদিকে সাতটি মামলা আইন অনুসারে অথবা রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনক্রমে স্থানান্তরিত হয় ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ট্রাইব্যুনাল-২ এ।

এবার মুজাহিদের আপিল মামলার শুনানি
ট্রাইব্যুনাল থেকে রায় ঘোষিত ১৭টির মধ্যে এ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এসেছে ১৩টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা।

এগুলোর মধ্যে তিনটি মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হয়েছে। এসব রায়ের মধ্যে কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কাদের মোল্লার সাজা বাড়িয়ে ফাঁসির আদেশ দেন আপিল বিভাগ, যেগুলো কার্যকর হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল থেকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশ পেলেও সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

গোলাম আযম ও আলীম আপিল বিভাগে আপিল করলেও দণ্ড ভোগরত অবস্থায় স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন তারা। ফলে তাদের আপিল অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে।

মুজাহিদ, সাকা চৌধুরী, নিজামী, মীর কাসেম, মোবারক, আজহার, সৈয়দ কায়সার ও সুবহানের আট আপিল মামলার শুনানি শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। মামলার ক্রমানুসারে প্রথমেই শুরু হতে যাচ্ছে মুজাহিদের আপিল মামলার শুনানি।

অন্য চারটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামি বাচ্চু রাজাকার, আশরাফুজ্জামান ও মাঈনুদ্দিন, খোকন রাজাকার এবং ইঞ্জিনিয়ার জব্বার পলাতক থাকায় আপিল করেননি।

জামায়াতের বিচার শুরুর অপেক্ষা
রাজনৈতিক দল হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী জামায়াত এবং তার সকল সহযোগী সংগঠন ও মুখপত্রের বিচারের আইনি অস্পষ্টতা দূর হচ্ছে শিগগিরই। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের (আইসিটি)’ ১৯৭৩ সংশোধনী আনতে যাচ্ছে সরকার। যুদ্ধাপরাধে জড়িত সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বিধান করে সংশোধনীর খসড়াটি চূড়ান্ত করেছে আইন মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রিসভার আগামী বৈঠকে সংশোধনীটি উত্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এমপি। মন্ত্রিপরিষদ চূড়ান্ত করার পরে সংসদের আগামী বাজেট অধিবেশনে এটি পাসের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এর পর পরই জামায়াতের বিচারের লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনালে মামলার চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেবেন প্রসিকিউশন।

খসড়া সংশোধনীতে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তির পাশাপাশি দলের বিরুদ্ধেও অভিযোগ গঠন ও বিচার করার পর রায় ঘোষণার ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। সংশোধিত আইনের খসড়ায় রাজনৈতিক দল বা সংগঠনকে দায়ী করার প্রক্রিয়া সম্পর্কিত বিধান রেখে দলবদ্ধ যুদ্ধাপরাধের শাস্তি সুনির্দিষ্ট করা হচ্ছে। কোনো সংগঠনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হলে ট্রাইব্যুনাল তা নিষিদ্ধ করে নিজস্ব নাম বা অন্য কোনো নামে ভবিষ্যৎ কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ বা অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে এ রকম অন্য কোনো শাস্তির রায় দিতে পারবেন বলে বিধান করায় জামায়াতের বিচার করে অপরাধ প্রমাণ সাপেক্ষে নিষিদ্ধ করা হবে বলে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন সংশ্লিষ্টরা।

জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনেও জামায়াত এবং তাদের অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির (সে সময়কার ইসলামী ছাত্রসংঘ) ও ইসলামী ছাত্রীসংস্থা, শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী, আলবদর, আলশামসের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর আলোকে তৈরি এ তদন্ত প্রতিবেদনে জামায়াত ও তার সব অঙ্গ সংগঠন নিষিদ্ধ ও অবলুপ্ত করার আরজি জানানো হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে জামায়াতের বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান-সংগঠনের বিরুদ্ধেও। ভবিষ্যতেও যেন কেউ এ ধরনের রাজনীতির আলোকে রাজনৈতিক দল গঠন বা রাজনীতি করতে না পারেন সে রায়ও চাওয়া হয়েছে।

একাত্তরে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জেনেভা কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র এবং এসব অপরাধ ঠেকাতে ব্যর্থতাসহ সাত ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে জামায়াত ও তার অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে। জামায়াতের নীতিনির্ধারক, সংগঠক, পরিচালক এবং কেন্দ্র থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের এসব অপরাধের জন্য দায়ী করা হয়েছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত জামায়াত, তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ, শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী, আলবদর বাহিনী ও আলশামস বাহিনীর নানা নৃশংস অপরাধ এবং জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের যাবতীয় অপরাধের অভিযোগ তুলে আনা হয়েছে এ তদন্ত প্রতিবেদনে।

গত বছরের ২৭ মার্চ দল হিসেবে দলবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী জামায়াতের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এ প্রতিবেদনের আলোকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবেন প্রসিকিউশন।

প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বাংলানিউজকে বলেন, আইনটি সংশোধিত হওয়ার পর ফরমাল চার্জ তৈরি করে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবেন প্রসিকিউশন।

সাঈদীর সাজা কমে আমৃত্যু কারাদণ্ড
গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল-১ এর দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

সাঈদীর বিরুদ্ধে আনা ২০টি অভিযোগের মধ্যে আপিল বিভাগের রায়ে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে ৫টি অভিযোগ। এর মধ্যে ২টিতে আমৃত্যু, একটিতে যাবজ্জীবন, একটিতে ১২ বছর ও একটিতে ১০ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে সাঈদীকে। এছাড়া ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত তিনটি অভিযোগ আপিল বিভাগে প্রমাণিত না হওয়ায় এসব অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ওই রায়ে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণের আটটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে দু’টি অপরাধে সাঈদীকে বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। প্রমাণিত অন্য ৬টি অভিযোগে আলাদাভাবে কোনো সাজা দেননি ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সাঈদী ও সরকারপক্ষ পৃথক দু’টি আপিল দাখিল করলে শুনানি শেষে সাজা কমিয়ে দেন সর্বোচ্চ আদালত। এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এখনও প্রকাশিত হয়নি। প্রকাশিত হওয়ার পর রিভিউ আবেদনের মাধ্যমে ফাঁসির রায় পুনর্বহালের আরজি জানানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ।

মৃত্যুতে অকার্যকর গোলাম আযম-আলীমের আপিল
জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম মারা যাওয়ায় তার আপিল অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে। গোলাম আযমকে ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই দেওয়া ট্রাইব্যুনাল-১ এর ৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষই। রাষ্ট্রপক্ষ একই সঙ্গে আবেদন করেন জামায়াত নিষিদ্ধেরও।

তবে শুনানি শুরুর আগেই দণ্ড ভোগরত অবস্থায় গত বছরের ২৩ অক্টোবর মারা গেছেন দেশের এই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী। ফলে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এ আপিল মামলা অকার্যকর ঘোষণা করেন আদালত।

অন্যদিকে ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর আলীমকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে ১৭টি অভিযোগের মধ্যে হত্যা-গণহত্যার ৯টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলেও আলীমের শারীরিক-মানসিক অক্ষমতার কারণে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে এ রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল।

এ রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আলীম আপিল করলেও আপিলে যাননি রাষ্ট্রপক্ষ। দণ্ড ভোগরত অবস্থায় গত বছরের ৩০ আগস্ট মারা যান এই যুদ্ধাপরাধী। এ কারণে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর আপিল মামলাটি অকার্যকর ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ।

মারা যাওয়ায় নিষ্পত্তি ইউসুফের মামলার
বিচার চলাকালে মারা যাওয়ার কারণে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত মুক্তিযুদ্ধকালে রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে মামলা আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করে নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-২।

ইউসুফের মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে ছিল। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও পক্ষে সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়ে গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি মামলার শেষ ধাপ যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শুরুর কথা ছিল। কিন্তু এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যাওয়ায় ওই দিন ট্রাইব্যুনাল এ মামলা নিষ্পত্তির আদেশ দেন।

ইউসুফকে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ ৪ ধরনের ১৩টি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে ডা. মালেক মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে এবং পাকিস্তানি বাহিনীর সকল সহযোগী বাহিনীকে নেতৃত্ব দানের কারণে তিনি অভিযুক্ত হন সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (উর্ধ্বতন নেতৃত্ব) দায়েও।

বিচার চলছে নয়জনের
দুই ট্রাইব্যুনাল মিলিয়ে ৫ মামলায় আরও ৯ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিচার চলছে। এসব মামলার বিচারিক কার্যক্রমও শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

এর মধ্যে বাগেরহাটের রাজাকার কমান্ডার সিরাজুল হক সিরাজ মাস্টার এবং দুই সহযোগী আব্দুল লতিফ তালুকদার ও আকরাম হোসেন খাঁনের বিরুদ্ধে একটি মামলার বিচার চলছে ট্রাইব্যুনাল-১ এ। এ তিনজন অভিযুক্ত হয়েছেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও ধর্মান্তরের ৭টি মানবতাবিরোধী অপরাধে।

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানার রাজাকার কমান্ডার পলাতক সৈয়দ মোঃ হাসান আলীকে ৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করেছেন ট্রাইব্যুনাল-১। এর মধ্যে রয়েছে ২৪ জনকে হত্যা-গণহত্যা, ১২৫টি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, ১২ জনকে অপহরণ, আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে একটি মামলায় তিনটি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করেছেন ট্রাইব্যুনাল-২। এর মধ্যে রয়েছে ২৮ জনকে হত্যা ও গণহত্যা এবং শতাধিক বাড়ি-ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ।

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের মো. ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল-২ এ ৫টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৮ জনকে হত্যা ও গণহত্যা, ৪ জনকে ধর্ষণ, ৩ জনকে ধর্মান্তরকরণ, ১৩টি পরিবারকে দেশান্তরকরণ, ৬৪টি বসতঘর ও দোকানপাটে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ।

গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা নেত্রকোনার সাবেক দুই মুসলিম লীগ নেতা আতাউর রহমান ননী ও ওবায়দুল হক তাহের একটি মামলার আসামি। তাদের বিরুদ্ধে গঠন করা অভিযোগে ১৫ জনকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যা-গণহত্যা, অপহরণ এবং প্রায় সাড়ে ৪শ’ বাড়ি ঘরে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

বিচার শুরু হচ্ছে ১৩ জনের
মানবতাবিরোধী অপরাধের আরও দুই মামলায় গ্রেফতারকৃত ও পলাতক ১৩ জনের বিচার শুরু হতে যাচ্ছে।

এর মধ্যে জামালপুর জেলার আটজন একটি মামলার আসামি। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন করে দশটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর ভিত্তিতে প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করবেন ট্রাইব্যুনালে।

তাদের সবার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর জামায়াতের সাবেক আমির অ্যাডভোকেট শামসুল আলম ও সাবেক জামায়াত নেতা সিংহজানি স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক এস এম ইউসুফ আলী গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। অন্য ছয়জন হচ্ছেন- আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক শরিফ আহাম্মেদ, মো. আব্দুল মান্নান, মো. আব্দুল বারী, আবুল হাসেম ও মো. হারুন।

কিশোরগঞ্জের মোট পাঁচজন অন্য মামলাটির আসামি। তারা হচ্ছেন করিমগঞ্জের দুই সহোদর সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ ও কিশোরগঞ্জ জেলা বারের আইনজীবী মো. শামসুদ্দিন আহমেদ এবং কিশোরগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান, হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলাম। পাঁচজনের বিরুদ্ধেই ট্রাইব্যুনাল-১ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলেও এ পর্যন্ত কেবলমাত্র গ্রেফতার হয়েছেন শামসুদ্দিন।

নাসিরউদ্দিন- শামসুদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থা তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলেও আরও অধিক তদন্তের জন্য ফেরত পাঠিয়েছেন প্রসিকিউশন। তাদের বিরুদ্ধে ১২ জনকে হত্যা, গণহত্যা, আটক, নির্যাতন ও লুণ্ঠনের ৫টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল সে সময়। প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা বলছেন, পুনর্তদন্তে আরও নতুন নতুন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এর ভিত্তিতেই অন্য তিনজন এ মামলার আসামি হয়েছেন।

৬০৮ মামলার আসামি ৩৩৬৪ জন
তদন্ত সংস্থায় এখন পর্যন্ত ৬০৮ মামলায় ৩ হাজার ৩শ’ ৬৪ জন আসামির নাম এসে জমেছে। বর্তমানে সংস্থায় তদন্তাধীন আছে ৩৩ জন আসামির বিরুদ্ধে দায়ের করা ২১টি মামলা।

এসব আসামির মধ্যে কয়েকজন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। বাকিদের বিষয়ে তদন্ত কিছুটা অগ্রসর হলেই গ্রেফতারের আবেদন জানানো হবে বলে জানান তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক।

সানাউল হক জানান, তদন্তাধীন মামলার আসামিদের মধ্যে কক্সবাজারের মহেশখালীর এলডিপির নেতা কক্সবাজার চেম্বারের সাবেক সভাপতি সালামত খান উল্লাহ খান ওরফে আঞ্জুবর ওরফে ‘পঁচাইয়া রাজাকার’, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ রশিদ মিয়া ও জাকারিয়া সিকদার- এ তিনজন একটি মামলার আসামি। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর প্রথম দু’জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা দুই সহোদর হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া অন্য একটি মামলার আসামি।

অন্য একটি মামলার চার আসামি হলেন মৌলভীবাজার জেলার আলাউদ্দিন চৌধুরী, আকমল আলী, লাল মিয়া এবং মো. মতিন মিয়া।

মৌলভীবাজার জেলারই অন্য তিনজন আলবদর কমান্ডার শামসুল হক, রাজাকার কমান্ডার নেছার আলী ও রাজাকার কমান্ডার ইউনুছ মৌলভী একটি মামলার আসামি।

রাজাকার আজিজ (হাবুল) ও রাজাকার আব্দুল মতিন নামক দুই সহোদর এবং মনির আলী- এ তিনজন অন্য একটি মামলার আসামি, তাদের বাড়িও মৌলভীবাজার জেলায়।

ময়মনসিংহ জেলার একটি মামলায় তদন্ত চলছে মো. রিয়াজ উদ্দিন ফকির ও মো. আমজাদ আলী নামক দুই আসামির বিরুদ্ধে।

অন্য ১৩ মামলায় একজন করে ১৩ আসামি রয়েছেন। তারা হচ্ছেন- গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা যশোরের জামায়াতের সাবেক এমপি মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, চট্টগ্রামের রাউজানের বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন কাদের গিকা চৌধুরী, কক্সবাজার জেলার পেকুয়ার মহসীন হায়দার চৌধুরী, নেত্রকোনা জেলার আব্দুল খালেক তালুকদার, ময়মনসিংহ জেলার আবুল ফালাহ মুহাম্মদ ফাইজুল্লাহ, গাইবান্ধা জেলার আবু সালেহ মো. আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়ামারা আজিজ, ঢাকা জেলার সৈয়দ মোহাম্মদ হুসাইন ওরফে হোসেন, গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীর এনায়েত মোল্লা, নোয়াখালী জেলার সুধারামের আমির আহম্মেদ ওরফে রাজাকার আমির আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলের এমদাদুল হক ওরফে টাক্কাবালী, হবিগঞ্জ জেলার লাখাইয়ের লিয়াকত আলী, পটুয়াখালী জেলার আয়নাল খা এবং পটুয়াখালী জেলার গলাচিপার আশ্রাব আলী খান।

এছাড়া তদন্ত সংস্থা ছাড়া পাওয়া ১১ হাজার দালালের বিরুদ্ধে তদন্তকাজ এগিয়ে রাখতে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করছেন। অন্য মামলার তদন্তের সময় পাওয়া যাচ্ছে যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি ১৯৫ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা প্রমাণপত্রও। সেগুলোও সংরক্ষণ করছেন তদন্ত সংস্থা। সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে ভবিষ্যতে সুযোগ হলে দেশি-বিদেশি এসব যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরুরও আশা করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক বাংলানিউজকে জানান, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ছাড়া পাওয়া ১১ হাজার দালাল এবং পাকিস্তানি ১৯৫ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও নতুন করে তদন্ত শুরু করার প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। দু’টি বিষয়ই নির্ভর করছে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের ওপরে। সরকার সিদ্ধান্ত নিলে তারা অবশ্যই এগোবেন।

তিনি জানান, অন্য মামলার তদন্তের সময় পাওয়া যাচ্ছে ১১ হাজার দালালের বিরুদ্ধে কাগজপত্র। এ ক্ষেত্রে স্বাধীনতার পর তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো খতিয়ে দেখে রিভিউ করতে হবে। কে কে জীবিত আছেন, কে কে মারা গেছেন- এসব বিষয়ও বিবেচনায় নিয়ে পুনর্তদন্ত করতে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করছেন তারা।

তিনি জানান, পাওয়া যাচ্ছে পাকিস্তানি ১৯৫ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা প্রমাণপত্রও। সেগুলোও সংরক্ষণ করছেন তদন্ত সংস্থা। সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে ভবিষ্যতে সুযোগ হলে দেশি-বিদেশি এসব যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরুরও আশা করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম