শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > জাবি ক্যাম্পাস এখন অতিথি পাখির অভয়ারণ্য

জাবি ক্যাম্পাস এখন অতিথি পাখির অভয়ারণ্য

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥

অতিথি এসেছে, অতিথি এসেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। দক্ষিণ গগনে শীতের বাতাস যখন হু হু করে ব্্ইতে শুরু করেছে, ঠান্ডার প্রকোপ যখন বেড়ে যাচ্ছে ঠিক তখনি চলে এসেছে অতিথিরাও। বুঝলেন নাতো, বলছি বাংলাদেশের অন্যতম শীতকালীন পাখির অভয়ারণ্য বিদেশি পাখির কথা। বলা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অতিথি পাখির স্বর্গরাজ্য। বিদেশি পাখির প্রিয় আবাসভূমি এই জাহাঙ্গীরনগরের ক্যাম্পাস।

সুদূর সাইবেরিয়া থেকে প্রতিবছরের মতো এবছরও জাহাঙ্গীরনগর যেন বিদেশি পাখির মিলনমেলায় পরিনত হয়েছে। পাখির কিচিরমিচিরে সকালের ঘুম ভাঙ্গছে এখানকার শিক্ষার্থীদের। প্রায় ১৮টি জলাশরের অতিথিরা সারাক্ষণ মুগ্ধ করে রাখছে প্রানচঞ্চল পথিকদের। এ পাখি দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন ছুটে আসছে হাজারো দর্শনার্থী। ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসের সুইমিং পুল সংলগ্ন জলাশয়ে, ট্রান্সপোর্ট ও প্রশাসনিক সংলগ্ন জলাশয়ে এবং প্রীতিলতা ও জাহানারা ইমাম হল সংলগ্ন জলাশয়সহ আরও অনেক জলাশয়ে এসেছে নাম না জানা অসংখ্য বৈচিত্র্যময় অতিথি পাখি। এছাড়াও বোর্টানিকেল গার্ডেনের পাশের লেকেও লাল শাপলার মাঝে দেখতে পাওয়া যাচেছ খুনসুঁটিতে ব্যস্ত অতিথি পাখিদের। এগুলোর মধ্যে ৫টি লেকে অতিথি পাখি বেশি বসে থাকে।

এবছরেও প্রশাসনিক ভবন ও ট্রান্সপোর্ট সংলগ্ন জলাশয়, জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল সংলগ্ন জলাশয় এবং সুইমিংপুল ও বোটানিকেল গার্ডেন সংলগ্ন জলাশয়ে দৃষ্টিনন্দন নানা জাতের নীল ও লাল শাপলার মাঝে অতিথি পাখিতে ছেঁয়ে গেছে। অতিথিদের খুনসুঁটি, পানির মাঝে ডুবোডুবি দেখতে, ক্যাম্পাসের কুয়াশায় গা জড়াতে, ঠান্ডা বাতাসে গা টাকে শিহরিত করতে, খোলা আকাশে পাখিদের ডানা ঝাপঁটানো দেখতে এবং ব্যস্তময় এ জীবনে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে আর এ সৌন্দর্য দেখে মনকে প্রশান্ত করতে লাল মাটির ক্যাম্পাস হিসেবে জাবির যেন জুড়ি মেলা ভার।

প্রতিবছর শীতকাল এলেই জলাশয়গুলোতে ভরে যায় নানা রংবেরঙের পাখিতে। আদর করে আমরা সেগুলোকে বলি অতিথি পাখি। নাম অতিথি হলেও এই পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে আমাদের দেশে হাজির হয় নিজেদের জীবন বাঁচার তাগিতে। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের দিকে হিমালয়ের উত্তরে প্রচন্ড শীত নামতে শুরুকরে। ফলে উত্তরের শীত প্রধান অঞ্চল সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নেপাল, জিনজিয়াং ও ভারতে প্রচুর তুষারপাত হয়।

তুষারপাতে টিকতে না পেরে পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে পাড়ি জমায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। এ সময় হাজার হাজার অতিথি পাখি দক্ষিণ এশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ দেশ বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশের যেসব এলাকায় এসব পাখি আসে তার মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।

অতিথি পাখির জন্য এই জলাশয়গুলোকে অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অক্টোবরের শেষে ও নভেম্বরের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে জলাশয়গুলোতে অতিথি পাখি আসতে শুরু করে আর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বেশি সংখ্যক অতিথি পাখি এ জলাশয়গুলোতে আসে এবং ফেব্রুয়ারি ও মার্চের প্রথম দিকে তারা চলে যায় আপন নীড়ে। বর্তমানে লেকগুলোতে যে পাখি দেখা যাচ্ছে তা এসেছে সাইবেরিয়া, নেপাল, মঙ্গোলিয়া ও ভারতের উত্তর হিমালয় ও বাংলাদেশের হাওড় অঞ্চল থেকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের জরিপে দেখা যায়, ১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম অতিথি পাখি আসে। এ সময় ৯০ প্রজাতির অতিথি পাখি দেখা যায় এ ক্যাম্পাসে। বর্তমানে ১৯৫ প্রজাতির পাখি দেখা যায়। যার মধ্যে ১২৬টি প্রজাতি দেশীয় এবং ৬৯টি পরিযায়ী বা অতিথি পাখি। এখানে যে ধরনের পাখি আসে তা বেশিরভাগ পানিতে থাকে । কিছু সংখ্যক আছে যা শুকনো স্থানে থাকতে বেশি পছন্দ করে।

শহরের ইট-পাথরে ঘেরা এই যান্ত্রিক জীবনের বহর থেকে একটুখানি প্রশান্তির পরশ পেতে। পাখিদের যারা ভালবাসি, কাছে রাখি, পাখির সাথে মনের ভাষায় অবলীলায় কথা বলি, পাখিকে ভালবাসতে চাই। এরকম নানা চাওয়া পাওয়া আর সবধরনের ক্লান্তি ও জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মনকে সতেজ রাখতে দরকার প্রানবন্ত কিছু মুহুর্তের। তবে আর দেরি নয় আপনার স্মৃতিতে কিছু মুহুর্ত স্বরণীয় করে রাখতে চলে আসুন প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যে ঘেরা অতিথি পাখিদের বিচরনস্থল এই জাহাঙ্গীরনগরের আবাসভূমিতে।