শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > জাবিতে দুই মাসের ছুটিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থীরা

জাবিতে দুই মাসের ছুটিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থীরা

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: গ্রীষ্মকালীন অবকাশ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টানা দুই মাস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। ফলে সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

গত শনিবার (২৩ মে) রাতে প্রশাসনিক ভবনে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় গ্রীষ্মকালীন অবকাশ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৬ মে থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত দুই মাস বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।

এর আগে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলন এবং বছরের শুরুতে কয়েক মাস রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১০ সালের ২ জানুয়ারি ক্লাস শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি তাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা জীবনের পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে। সাধারণত চার বছর মেয়াদী স্নাতক (সম্মান) ও এক বছর মেয়াদী স্নাতকোত্তর মিলে মোট পাঁচ বছরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করার কথা। কিন্তু দিনের পর দিন আন্দোলন ও দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে পাঁচ বছর পাঁচ মাসেও অধিকাংশ বিভাগে এ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে পারেননি।

ইংরেজি, পদার্থ, গণিত, মাইক্রোবাইয়োলজি, প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করছেন। বাংলা, দর্শন ও ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তর পরীক্ষা চলছে। এছাড়া বাকি বিভাগগুলোতে এ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে পারেননি।

এছাড়া অর্থনীতি ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৩৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ছয় বছরেও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে পারেননি।

নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রেহেল ফেরদৌস শাহ বলেন, দুই মাস বন্ধ দিয়ে ক্যাম্পাসে বিদ্যমান সমস্যাগুলো এড়িয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করছে প্রসাশন। সেশনজটের কথা বিবেচনায় নিয়ে গ্রীষ্মকালীন অবকাশ ও রমজানসহ ঈদুল ফিতরের ছুটি কমিয়ে আনা উচিত ছিল।

কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, প্রশাসন এ বন্ধের মাধ্যমে অনেকটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে। ক্যাম্পাসের বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান না করে তারা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজছেন। স্বাভাবিকভাবে যাদের চার মাসের সেশনজট ছিল দুই মাস বন্ধের কারণে তারা আরও চার মাসের সেশনজটে পড়বেন।

দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, দীর্ঘ হরতাল-অবরোধের পর কেবলমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এ সময় দীর্ঘ ছুটি দেওয়ার কোনো মানে হয় না। গ্রীষ্মকালীন ছুটি কমিয়ে এনে দুই ছুটির মাঝে ‘গ্যাপ’ বাড়ানো যেত। প্রশাসন যে যুক্তি দিয়ে দুই মাস ক্যাম্পাস বন্ধ করেছে সেটা দুর্বল যুক্তি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার বলেন, দীর্ঘ বন্ধে শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা একটি অনানুষ্ঠানিক সভায় উপাচার্যকে বলেছিলাম রমজানের এক সপ্তাহ ক্লাস নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করতে। কিন্তু পরে সিন্ডিকেট সভায় প্রায় দুই মাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে বছরের শুরুর দিকে দীর্ঘদিন ক্লাস-পরীক্ষা স্বাভাবিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়নি। এছাড়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরাও এসেছে দেরিতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন বলেন, গ্রীষ্মকালীন ও ঈদের ছুটি আলাদাভাবে দেওয়া হলে অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে শিক্ষার্থীদের দুই দফায় ক্যাম্পাসে আসতে হতো। আবার গ্রীষ্মকালীন ছুটি কমিয়ে আনা হলে কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিত। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম