শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > জাপায় হ-য-ব-র-ল অবস্থা

জাপায় হ-য-ব-র-ল অবস্থা

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় পার্টিতে (জাপা) হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে । পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ আটক না অসুস্থ, তা নিয়ে বির্তকের মধ্যেই দলের নেতৃত্ব নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম অস্থিরতা।

নেতার আনুগত, নেতার অবাধ্যতা এবং নিজেকে পার্টির মুখপাত্র, চেয়ারম্যানের মুখপাত্র কিংবা কাউকে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা নিয়ে চলছে নানা নাটক। এর মধ্যেই চলছে দল থেকে বহিষ্কার, কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া, নতুন কমিটি ঘোষণা এমনকি পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত করাও হচ্ছে। নির্বাচনে থাকা না থাকা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা কিংবা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হচ্ছেন জাপার কিছু নেতা। আবার কোথাও এরশাদের মুক্তি চেয়ে হরতাল-বিক্ষোভ মিছিল হচ্ছে। কোথাও কর্মসূচি ডেকে নেতারা ঘরে বসে থাকছেন। কেউ কেউ পার্টির অফিসে আসাও বন্ধ করে দিয়েছেন।

দেশজুড়ে নির্বাচন ও রাজনৈতিক আলোচনার মধ্যে থেকেও জাতীয় পার্টির সার্বিক কার্যক্রমে এমনই হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। আবার প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন নাটক। এরশাদ নাটকের শুরু এবং শেষ বলতে কিছুই নেই। তাই জাপা এবং এরশাদ নিয়ে কোন রকম মন্তব্য করতেও নারাজ অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

আনিস-বাবলুসহ ৫ জাপা নেতা বহিস্কার

নির্দেশ অমান্য ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়া উদ্দিন আহমদ বাবলুসহ ৫ জনকে বহিস্কার করেছেন জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ। জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এক কর্মচারিকে দিয়ে বহিস্কারের চিঠি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা এ কথা নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র জানায়, জাপা চেয়ারম্যানের নির্দেশে দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ, মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, এরশাদের ছোট ভাই গোলাম মুহম্মদ কাদের, ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মজিবুল হক চুন্নু, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু গত ২০ অক্টোবর সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেন। এরপর ৫ ডিসেম্বর এরশাদ আবার সবাইকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দিলে আনিস-বাবলু ছাড়া সবাই পদত্যাগ করেন। পাশাপাশি দলের সবাইকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশও দেন তিনি। একই সঙ্গে যারা এ নির্দেশ অমান্য করবে তাদের বহিস্কারেরও ঘোষণা দেন চেয়ারম্যান। অনেক নাটকীয়তার পর ৮ ডিসেম্বর মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার জানান, দলের মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের পদত্যাগপত্র ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে। তারপর থেকে কেউ নিজ মন্ত্রণালয় গিয়ে অফিস করেননি।

এদিকে গত ১২ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৪০ মিনিটে বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্ক থেকে র‌্যাব এরশাদকে আটক করে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তিনি এ হাসপাতালেই আছেন। এরশাদ আটকের পর দলটিতে কার্যত বিভক্তি দেখা যায়। জাপা চেয়ারম্যানের নির্দেশ অমান্য করে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ১৫ ডিসেম্বর সর্বদলীয় সরকারের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে উপস্থিত হন।

এতে নাখোশ হন এরশাদ। তিনি দলে গ্রুপিংয়ের জন্য দায়ী করে ব্যারিস্টার আনিস ও জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলু, মুজিবুল হক চন্নু, ফখরুল ইমাম, দলের দপ্তর সম্পাদক তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে বহিস্কার করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জাপা নেতা বলেন, বহিস্কারের ঘটনা শত ভাগ আমি নিশ্চিত। তবে প্রকাশ না করার সম্ভাবনা বেশি। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্যার ( এরশাদ ) এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে। এ মুহূর্তে প্রকাশ করলে দলে বিভক্তিসহ স্যারের ক্ষতি হতে পারে।

জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, বহিস্কারে কথা আমি শুনছি। কতটুকু সত্য-মিথ্যা জানি না। তবে শুনছি এজন্য রওশন এরশাদ স্যারের (এরশাদের) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

এরশাদ-জিএম কাদের বৈঠক

হাসপাতালে জাতীয় পার্টির মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের। বুধবার দুপুর ১১টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত তাঁরা হাসপাতালে একান্তে কথা বলেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। তবে বৈঠকের বিষয়ে জিএম কাদের কোন কথা বলেননি।

এরশাদকে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে এমন আলোচনার মধ্যেই বুধবার তাঁর ছোটভাই সিএমএইচে দেখা করতে গেলেন। ধারণা করা হচ্ছে, দলের পরবর্তী করণীয় নিয়ে এরশাদ জিএম কাদেরকে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

সূত্র জানিয়েছে, এরশাদ ও ছেলে এরিখসহ চারজনের পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। যদিও এরশাদ দেশের বাইরে যেতে চাইছেন না বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন। সম্প্রতি এরশাদের উদ্বৃতি দিয়ে তার বক্তব্য প্রচার করায় তার বিশেষ উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ববি নিজের ফেসবুক স্ট্যটাসে জানিয়েছেন, তাকে জোর করে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এদিকে দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং জিএম কাদেরের ওপর চাপ রয়েছে। এ কারণে তাঁরা গা বাঁচিয়ে চলছেন। দুজনের কেউ-ই প্রকাশ্যে খুব একটা আসছেন না। মঙ্গলবার এরশাদের মুক্তির দাবিতে জিএম কাদেরের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি বাসা থেকে বের হতে পারেননি। তার আগে তার বাসার সামনে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অবস্থান নেয়। দলের অপর নেতা কাজী ফিরোজ রশিদ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কর্মসূচিতে উপস্থিতি থাকলেও তিনি গণমাধ্যমে স্পষ্ট কোন বক্তব্য রাখেননি।

এদিকে নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে ধূম্রজাল চললেও দলের সরকারপন্থি বলে পরিচিত নেতারা প্রকাশ্যে কোন কথা বলছেন না। তাঁরা দলীয় কোন কর্মসূচিতেও অংশ নিচ্ছেন না। প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদের অবস্থানও রহস্যে ঘেরা। অনেকে বলছেন, চাপে পড়ে তিনি এমন কৌশল নিয়েছেন। আবার কেউ বলছেন, জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে রাখতে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ি কাজ করছেন রওশন।

এরশাদ বিদেশে যাবেন না : ফিরোজ রশিদ

জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বিদেশে যাবেন না। তিনি দেশেই থাকবেন বলে জানিয়েছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ। বুধবার দুপুরে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদের গুলশানের বাসার সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

এরশাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে যেকোনো সময় সিঙ্গাপুর অথবা মালয়েশিয়া নেয়া হতে পারে- এমন খবর গত কয়েকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। খবরটি গণমাধ্যমে আসার পর সাংবাদিকদের কাছে কাজী ফিরোজ রশিদ এমনটা দাবি করলেন।