রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > জাতিসংঘে মালালার জয়জয়কার

জাতিসংঘে মালালার জয়জয়কার

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ পাকিস্তানে সন্ত্রাসীদের হামলায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে যাওয়া মালালা ইউসুফ জাইয়ের সঙ্গে সুর মেলালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জড়িয়ে ধরলেন তাকে। চুমু খেলেন কপালে। বাদ রইলেন না বিশ্ব নেতারাও। তাই আবারও জয়জয়কার হলো মালালার। করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠলো বিশ্ব নেতাদের মিলনমেলা জাতিসংঘের অধিবেশন ক। তালিবানদের গুলির তচিহ্ন নিয়ে জাতিসংঘে আসা মালালা ইউসুফজাই দৃঢ় আত্ববিশ্বাস কন্ঠে বলেন, শিার কোনো বিকল্প নেই। একটি মেয়ের জন্মের পর পরিবারের অধীনে থাকে। বিয়ে হলে স্বামীর অধীনে চলে যায়। আর সন্তান বড় হলে সন্তানের কথামতো চলতে হয়। এটাই আমাদের সমাজে একটি নারীর জীবন। এই জীবন থেকে আমরা মুক্তি চাই। আমি চাই বিশ্বের প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি নারী শিতি হিসেবে গড়ে উঠুক। আর এই গড়ে ওঠাটা আমাদের জন্য কোনো স্বপ্ন না। এটা সাধারণভাবেই সম্ভব। নারী অধিকার ও শিা নিয়ে মালালার বক্তব্যে সেমিনারে উপস্থিত বিশ্বনেতারা সহমত পোষন করেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনও শেখ হাসিনা ও মালালার বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, আমি বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানাবো তারা শিার বিস্তৃতির জন্য প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। এদিকে গতকাল অস্ত্রের বিস্তৃতি নয়, শিার বিস্তৃতি বাড়ানোর স্লোগান উঠল জাতিসংঘে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঙ্গে বিশ্বনেতাদের আরো অনেকেই এ বক্তব্যে সুর মেলালেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং অস্ত্রের পরিবর্তে শিা খাতে অর্থ বরাদ্দই বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রকৃত পন্থা। আর কোনো অস্ত্রের খেলা নয়, এবার আসুন শিার খেলা খেলি। মানসম্মত শিা সবার জন্য নিশ্চিত করি। গতকাল বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘গ্লোবাল এডুকেশন ফার্স্ট ইনিসিয়েটিভ’ বা ‘প্রথম পদপে হোক বৈশ্বিক শিা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তার বক্তব্যের আগে বক্তব্য দেন মালালা ইউসুফ জাই। নারী অধিকার ও শিা নিয়ে মালালার বক্তব্যে সেমিনারে উপস্থিত বিশ্বনেতারা সহমত পোষন করেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে মালালার বক্তব্যের সূত্র ধরে ব্যক্তব্য শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালালাই আমাদের কণ্ঠস্বর। তার বক্তব্যই আমার বক্তব্য। শিাহীন নারীর ভোগান্তি আমি জানি। আসুন আমরা শিার প্রতি জোর দেই। সারা বিশ্বে সমরাস্ত্র খাতে করা ব্যয়ের অর্থ শিা খাতে বরাদ্দের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সমরাস্ত্র খাতে প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। এই টাকা শিার জন্য কি বরাদ্দ করা যায় না। রাজনৈতিক নেতাদের উচিত শিার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া। জাতীয় বাজেটে শিা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো ও সকল শিশুর জন্য শিা নিশ্চিত করাই হোক আজকের অঙ্গীকার। এ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন। এ সময় দণি আফ্রিকার আর্চবিশপ ডেজমন্ড টুটু, দণি আফ্রিকার ধনকুবের আলিকো দাগোটেসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশের সরকার প্রধান উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের পে প্রধানমন্ত্রীর সাথে জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগ দেয়া পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের আমলে সহশ্রাব্দ উন্নয়ন লমাত্রা পুরনে নেয়া বিভিন্ন পদপে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নারীদের জন্য উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বিনামূল্যে শিার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত তিন বছরে ৯২ কোটি পর্যন্ত বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এর আগে সহশ্রাব্দ ল্যমাত্রা অর্জন নিয়ে পৃথক দুটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এর একটিতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব সেমিনারে আয়ারল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী ইয়ামন গিলমোর, ৬৮তম জাতিসংঘ অধিবেশন আয়োজনের সভাপতি জন উইলিয়াম অ্যাসে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে যাওয়া কয়েকজন প্রতিনিধি এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পৃথক দুটি সেমিনারে প্রধানমন্ত্রী উন্নত দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশে এমডিজি অর্জনে সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলো যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশ এমডিজি অর্জন করা অনেকটাই সহজ হবে। লমাত্রার সব কিছু পূরণ করা কঠিন হলেও অনেকটাই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য পটভ’মি তৈরিতেও বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখতে বাংলাদেশ অগ্রভাগে থাকবে। আমরা আমাদের জনগণের মতায়নের মাধ্যমে কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য আমাদের অঙ্গীকার পূরণ করব। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ এমডিজি-১ থেকে এমডিজি-৬ পূরণ করার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, শিার হার বৃদ্ধি, শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার হ্রাস, জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন, নিরাপদ পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা নিশ্চিতসহ প্রভৃতি েেত্র ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করেছে। অথচ একটি দুর্যোগকবলিত দেশ হিসেবে এমডিজি অর্জন করা খুবই কঠিন। আমরা আশা করব উন্নত দেশগুলো এমডিজি-৭ বাস্তবায়নে ইতিবাচক ভ’মিকা রাখবে। তাদের সহযোগিতা পেলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে রূপান্তরিত হবে। এদিকে এসব কর্মসূচি শেষে প্রধানমন্ত্রী সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও এর অংগসংগঠনের নেতৃবৃন্দর সাথে বৈঠক করেন। এ সময় এসব সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে ২৮ সেপ্টেম্বর সংবর্ধনা দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়।