স্টাফ রিপোর্টার ॥
ঢাকা: হরতাল…হরতাল.! এক দুই তিন চার! এভাবে টানা চারদিন। হরতাল ফাঁদে কেনাকাটার আগাম প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার অস্বস্তিতে পড়ে রাজধানীবাসী।
অবশেষে শুক্রবার ঘটে মুক্তি। পবিত্র মাহে রমজানে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতা জন-জীবনে বয়ে আনে শৃঙ্খলা। সেই শৃঙ্খলার শেষ সাধ্যটুকু দিয়ে মানুষ ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে আপনজনকে সুখী ও খুশি করার পরোক্ষ ভালবাসার আরাধ্য সাধনে।
আর এই ঈদ ব্যস্ততা নগর জীবনে বয়ে আনে চাঞ্চলতা। সময় আর সুবিধা দুই মিল রেখে করতে হয় কেনাকাটা। কারণ ঈদের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে রাজধানীর বিপণী-বিতানে বাড়তে থাকে ভিড়। এ সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে কেনাকাটা করাটা হয়ে ওঠে অনেকটা কষ্টকর ও অসহনীয়।
একদিকে ব্যস্ত রাজধানীতে বাড়ে যানজট। সঙ্গে ফুটপাতে হাজারো পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে ফুটপাত ব্যবসায়ীরা। সঙ্গে আরও আছে আশঙ্কা; ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও দাম বাড়ানোর প্রবণতা।
এসব ভাবনা থেকে শুক্রবার ছুটির দিনটিকে কেনাকাটা করতে পছন্দ করেছে নগরবাসী। সাধ ও পছন্দ মতো কেনাকাটা করতে আগাম ছুটছে। সেজন্য ভিড় বেড়েছে রাজধানীর অভিজাত বিপণী-বিতান থেকে সাধারণ মার্কেটে।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। দেশের বৃহত্তম ও আন্তর্জাতিক শপিং মল বসুন্ধরা সিটি থেকে নিউমার্কেট, গাউসিয়া, চাদনী চক, পলওয়েল, গুলশান, বনানী, ধানমণ্ডির বিভিন্ন বিপণী-বিতান, মিরপুর, মৌচাক, মালিবাগ, এলিফ্যান্ট রোড, ফার্মগেট, আজিজসুপার মার্কেটসহ অন্যান্য বিপণী-বিতানে ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ার মতো।
তবে হঠাৎ করে কেনাকাটার এই ভিড় বাড়াতে মার্কেট ও বিপণী-বিতানগুলোর সামনে দেখা দিচ্ছে ভয়ঙ্কর যানজট। রাস্তার পাশে যত্রযত্র গাড়ি পার্কিং, রিকশা-সিএনজি চালকদের যাত্রী আকর্ষণে যেখানে-সেখানে অপেক্ষা। সেক্ষেত্রে কিছু কিছু মার্কেটে নিজস্ব আনসার সদস্য নিয়োগ থাকলেও হিমসিম খাচ্ছে তারা।
বসুন্ধরা সিটিতে কেনা-কাটা করতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের ছাত্রী নুসরাত ইমন জানান, একটু আগে থেকে মার্কেটে আসলে দেখে-শুনে বিচার বিশ্লেষণ করে একটু পছন্দের জিনিসটা কেনা যায়।
এছাড়া বোঝেন তো আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সময় সুযোগ ও উৎসবকে কেন্দ্র করে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে। সেজন্য বাজেট অনুসারে একটু চিন্তাভাবনা করে মার্কেট করতে হয় বলেও মিষ্টি হেসে জানান তিনি।
সেক্ষেত্রে বেশি ভিড় দেখা গেছে ছোটদের পোশাক-আশাক, মেয়েদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দোকানে।
নয়া পল্টনের পলওয়েল মার্কেটে দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন বেসরকারি কমকর্তা আহসান উল্লাহ। তিনি জানান, ঈদ আসলে ছোটদের আগ্রহটা থাকে উৎসব মুখর। আর ওদের চাহিদাও থাকে অনেক রকম। বাবা হিসেব সাধ্যমতো চেষ্ঠা করতে হয় দাবি মেটাতে।
আজ কি কি কেনাটকাটা করবেন জানতে চাইলে তার স্ত্রী সুমী আক্তার জানান, মোটামুটি বাবা-মা ও শ্বশুর-শাশুড়ি এবং বাচ্চাদের জন্য কেনাকাটা করা হবে।
কারণ ওনারা তো আরও ‘বাচ্চা’ এ কথা বলে হাসতে হাসতে তিনি বলেন, ‘আসলে ভাই আমরা কেন জানি দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছি। শহর জীবন, নগর জীবনে থাকতে থাকতে ইট পাথরের মতো হৃদয়হীন হয়ে অনেকে বাবা-মায়ের কথা ভুলে যাই।’
বসুন্ধরা সিটির গুলশান শাড়ি বিক্রেতা মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, ছুটির দিনের কথা চিন্তা করে অন্য দিনের তুলনায় আগেই দোকান খোলা হয়েছে। আর দোকান খোলার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতারা এসে ভিড় জমাতে শুরু করেছে।
বেচা-বিক্রি কেমন জানতে চাইলে তিনি জানান, অন্য কয়েকদিনের তুলনায় মোটামুটি অনেক বেশি। আশা করছি আরও বাড়বে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, শাড়ি, পাঞ্জাবি, মেয়েদের পোশাক, জুতা-স্যান্ডেল, এক্সেসরিজ ও কসমেটিকস দোকানে ভিড় তুলনামূলক বেশি।
নিউমার্কেটের জামদানি শাড়িঘরের মালিক ইব্রাহিম খালেদ জানান, বেচা-বিক্রি আজ বাড়বে এটা আগে থেকে আমরা আশা করছিলাম। তবে আশার তুলনায় একটু ভিড় বেশি বলেও জানান তিনি।
তবে কোনোদিকে কম নেই ফুটপাথের ব্যবসায়ীরা। স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষরা ভিড় জমাচ্ছে এসব দোকানে।