বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে পুরুষের চেয়ে নারীরা অনেক এগিয়ে। ৯ জন মহিলার বিপরীতে মাত্র ১ জন পুরুষ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেন। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার বাড়লেও এতে পুরুষের অংশগ্রহণ সেভাবে
বাড়েনি। সর্বশেষ সমীক্ষায় বেরিয়ে এসেছে এ চিত্র। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জন্মনিয়ন্ত্রণের যে সব পদ্ধতি মহিলারা গ্রহণ করেন, তার প্রায় প্রতিটিরই কম-বেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। পাশাপাশি কনডম ও স্থায়ী পদ্ধতি ছুরিবিহীন ভ্যাসেকটমি পুরুষদের মধ্যে কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। ১৯৭৫ সালে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ করতেন শতকরা ৮ ভাগ দম্পতি। আর এখন শতকরা ৬১ ভাগ। তবুও বাড়েনি পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের গত বছরের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণকারী পুরুষের হার শতকরা ৩ দশমিক ৭ ভাগ। কনডম ব্যবহারকারীর হার ৮ দশমিক ৩ ভাগ। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুরুষের অংশগ্রহণ কিছুটা বেড়েছে, তবে মহিলাদের পদ্ধতি ব্যবহার এর তুলনায় অনেক বেশি বেড়েছে। সর্বশেষ বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বিডিএইচএস) ২০১১ বলছে, ১৯৭৫ সালে শূন্য দশমিক ৭ ভাগ পুরুষ কনডম ব্যবহার করতেন।
বর্তমানে তা হয়েছে শতকরা ৬ ভাগ। একই সময়ে খাবার বড়ি ব্যবহারকারী মহিলার হার ২ দশমিক ৭ ভাগ থেকে বেড়ে ২৭ ভাগ। বর্তমানে এটি সর্বোচ্চ ব্যবহৃত পদ্ধতি। অনাকাঙিক্ষত পিতৃত্ব ঠেকানো ছাড়াও এইডসসহ বিভিন্ন যৌনবাহিত রোগ থেকেও রক্ষার জন্য পুরুষরা কনডম ব্যবহার করে থাকে। ফলে এ অস্থায়ী পদ্ধতি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কতটুকু ভূমিকা রাখছে সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিডিএইচএসের ২০১১ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে মহিলাদের স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণের হার শতকরা ৫ ভাগ, পুরুষের স্থায়ী পদ্ধতি ব্যবহারের হার শতকরা ১ দশমিক ২ ভাগ। ১৯৭৫ সালে পুরুষের ক্ষেত্রে এটি ছিল শূন্য দশমিক ৫ ভাগ। স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণকারী পুরুষের হারের বিষয়ে বিডিএইচএসের পরিসংখ্যানের সঙ্গে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের হিসাবের বড় ধরনের ব্যবধান প্রসঙ্গে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর বলেছে, সমীক্ষার জন্য জানতে চাইলে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণকারী অনেক পুরুষ সঙ্কোচের কারণে তা স্বীকার করেন না। কিন্তু অধিদপ্তর তাদের কাছে সেবা গ্রহণকারী পুরুষদের বিষয় মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য নিয়ে হিসাব করে থাকে।ড়
মহিলাদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: প্রচলিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বেশির ভাগই মহিলাদের জন্য তৈরী। মোট ৭টি পদ্ধতির মধ্যে মাত্র দু’টি পুরুষের জন্য। মহিলাদের জন্য রয়েছে লাইগেশন, আইইউডি, ইমপ্র্যান্ট, ইনজেকশন ও বড়ি। স্থায়ী পদ্ধতি লাইগেশন (টিউবেকটমি) করতে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের ছোট অস্ত্রোপচার লাগে। আইইউডি ও ইমপ্র্যান্ট দীর্ঘমেয়াদি অস্থায়ী ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি। আইইউডি জরায়ুতে স্থাপন করতে হয়। অন্যদিকে ইমপ্র্যান্ট পদ্ধতিতে একটি বা দু’টি নরম অতি ক্ষুদ্র ক্যাপসুল কনুইয়ের ওপরে চামড়ার নিচে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। ইনজেকশন হচ্ছে আরেকটি ক্লিনিক্যাল ও অস্থায়ী দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি। এটি প্রতি তিন মাস পর পর নিতে হয়। এছাড়া আছে খাওযার বড়ি। আইইউডির ক্ষেত্রে প্রথম কয়েক মাস তলপেটে ব্যথা ও ফোঁটা ফোঁটা রক্তস্রাব হতে পারে। ইমপ্র্যান্ট ও ইনজেকশনের কারণে মাসিকে পরিবর্তন, মাথাব্যথা ও ওজন বেড়ে যেতে পারে। মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি খাওয়ার বড়ি গ্রহণের ফলে মাসিকের পরিমাণ কম হওয়া এবং সন্তান প্রসবের পর বুকের দুধ কম হওয়ার মতো কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার উদাহরণ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের হার বাড়লে মহিলাদের ওপর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার চাপ কমতে পারে। একাধিক মহিলা মানবজমিনকে বলেন, প্রতিদিন বড়ি খাওয়া খুবই ঝামেলার। একদিন খেতে ভুলে গেলে আবার নতুন নিয়ম মানতে হয়। এছাড়া প্রায়ই বমি বমি ভাব হয়। মাথাব্যথা হয়। অনিরাপদ বা অপরিকল্পিত গর্ভধারণের হাত থেকে রক্ষা পেতে তাৎক্ষণিক জরুরি পদ্ধতিও মহিলাদেরকেই ব্যবহার করতে হয়।
পুরুষদের জন্য সহজতর: পুরুদের জন্য প্রচলিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি তুলনামূলক সহজ। একটি স্থায়ী ও অস্থায়ী পদ্ধতি। পুরুষদের জন্য স্থায়ী পদ্ধতি হচ্ছে ছুরিবিহীন ভ্যাসেকটমি (এনএসভি)। ৫ থেকে ৭ মিনিটের ছোট অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সহজেই এ পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে পুরুষরা। এ অস্ত্রোপচারে কাটা বা সেলাই লাগে না। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। পাশাপাশি কনডম পুরুষদের জন্য অস্থায়ী পদ্ধতি। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এর ব্যবহারে যৌন রোগসহ এইচআইভি, এইডস থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু কনডম ব্যবহারে পুরুষের ব্যাপক অনীহা রয়েছে।ড়
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব গণেশ চন্দ্র সরকার বলেন, অনেকেই ভাবেন, পুরুষরা স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করলে পুরুষত্ব হারাবেন। এ কথার কোন ভিত্তি নেই। তিনি বলেন, ৯ জন মহিলার বিপরীতে মাত্র ১ জন পুরুষ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেন। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার বাড়লেও পুরুষের অংশগ্রহণ সেভাবে বাড়েনি। আর এ কারণেও জনসংখ্যা বাড়ছে। (মানবজমিন)