বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ জন্মনিয়ন্ত্রণের অনেক রকমের পদ্ধতি আছে। এক এক জন এক একটা বেছে নেন। কন্ট্রাসেপশন হিসেবে মেয়েদের প্রথমে মনে আসে পিলের কথা। কিন্তু পিল নিয়ে অনেকেই দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন। তাঁরা মূলত পিলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে চিন্তায় পড়ে যান। পিল খেলেই যে সমস্যা হবে না, তা কিন্তু নয়। আবার পিল থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না, এটা ভাবাও অমূলক। কী ধরনের পিল আপনার জন্য উপযুক্ত, তা আপনার ডাক্তারই বলতে পারবেন। অনেকে আবার পিল খেতে ভুলে যান। সেটাও সমস্যা।
মোট কথা, কী ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বেছে নেবেন, তা স্থির করতেই অনেকে সমস্যায় পড়ে যান। কাছের কোনও বন্ধুর পরামর্শই তখন শেষ ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু তা সব সময় ফলপ্রসূ হয় না। অথচ জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্বন্ধে জানার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে অনেকেই চান না। সব মিলিয়ে সদা সর্বদা আতঙ্ক ঘিরে থাকে। কিন্তু কন্ট্রাসেপশনের পদ্ধতিগুলো সম্বন্ধে বিশদে জানা থাকলে, আর সঙ্গে নিজের শরীর সম্বন্ধে ধারণা থাকলে আপনি নিজেই আপনার কন্ট্রাসেপশন পদ্ধতিটি বেছে নিতে পারবেন।
কন্ট্রাসেপশনের জন্য শারীরিক দিক দিয়ে সবচেয়ে নিরাপদ ন্যাচারাল কন্ট্রাসেপশন। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার যেমন কোনও ঝামেলা নেই, তেমনই পরবর্তীতে গর্ভসঞ্চার স্বাভাবিকভাবে হওয়ার হারও বাড়ে। বাড়তি পাওনা হিসেবে এটি নিবিড় ভাবে অনুশীলন করতে করতে দম্পতি নিজের শরীর ও গর্ভসঞ্চার সম্পর্কেও জেনে যান।
ক্যালেন্ডার পদ্ধতি
পরবর্তী পিরিয়ড শুরু হওয়ার ১২ থেকে ১৬ দিন আগে ওভ্যুলেশন হয়। ঠিক এই সময়টা সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে। কবে মাসের ওই নির্দিষ্ট দিন ক’টা আসছে, তা ক্যালেন্ডারের সাহায্যে হিসেব রাখতে হবে। এই পদ্ধতি তাঁরাই অবলম্বন করতে পারেন, যাঁদের পিরিয়ড নিয়মিত হয়। তবে খুব নিঁখুত ভাবে হিসেব রাখতে না পারলে কিন্তু এই পদ্ধতি কাজ করবে না।
টেম্পারেচার মেথড
এতে এক জন মহিলাকে রোজ নিজের তাপমাত্রা মাপতে হবে। তাতে ধরা পড়বে বেজাল বডি টেম্পারেচর। ওভ্যুলেশন হলে এই তাপমাত্রা সামান্য কমে। পরবর্তী পিরিয়ড শুরু হওয়া পর্যন্ত এটি ০.২ থেকে ০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়বে।
এতে দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় শরীরের তাপমাত্রা নিতে হবে। সেটা সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর হলে সবচেয়ে ভাল। তা হলে ব্যাপারটি নিয়মিত হতে থাকে। যাঁরা আইটি সেক্টরের মতো জায়গায় বা অন্য কোথাও নাইট ডিউটি করেন, তাঁরা সন্ধেবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর পরই মাপবেন। তাপমাত্রা মাপার আগে কিছু খাওয়া বা পান করা যাবে না। তাতে তাপমাত্রার হেরফের হবে। এর জন্য বিশেষ ধরনের ওভ্যুলেশন থার্মোমিটার ব্যবহার করতে হয়। কোথায় পাবেন তা আপনার চিকিৎসকই বলে দেবেন। আর ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহার করলে ৪৫ সেকেন্ডের মধ্যে ফল জানা যাবে। মুখে মাপলে ৫ মিনিট সময় লাগে। যোনিদ্বার বা পায়ুদ্বারে মাপলে ৩ মিনিট। পিরিয়ড শুরু হওয়ার দিন থেকে তাপমাত্রার রেকর্ড রাখতে হয়। যে দিন দেখবেন তাপমাত্রা বাড়ছে আর পরবর্তী ৩ দিনও বর্ধিত অবস্থায় রয়ে গেছে, তবে বুঝবেন ভয় কাটল। অর্থাৎ ওভ্যুলেশন পর্ব সে মাসের মতো শেষ। তখন দম্পতি পরবর্তী পিরিয়ড শুরুর আগে পর্যন্ত কোনও সুরক্ষা ছাড়াই যৌনমিলন করতে পারেন।
অসুবিধে
বেজাল বডি টেম্পারেচার কিন্তু অন্য নানা কারণেও বাড়তে পারে। যেমন অসুস্থতা, ঘুমের ব্যাঘাত, স্ট্রেস কোহল সেবন ও অ্যাসপিরিনের মতো ওষুধ খেলে।
আর এই পদ্ধতিতে দীর্ঘ সময় সহবাস থেকে বিরত থাকতে হয়। কারণ এই পদ্ধতি কেবল ওভ্যুলেশন পরবর্তী সময়কেই নির্দেশ করে। সে সময়ই কোনও রকম সুরক্ষা না নিয়ে নিশ্চিন্তে সহবাস করতে পারবেন।
সুবিধে
যে সব মহিলার পিরিয়ড অনিয়মিত, তাঁদের ওভ্যুলেশনের সময় নির্ণয় করা যায়। এটা সম্পূর্ণ এক জন মহিলার নিয়ন্ত্রণাধীন, এই পদ্ধতি এক দিকে যেমন কন্ট্রাসেপশনে সাহায্য করে তেমনই এর সাহায্যে গর্ভসঞ্চারেও সুবিধে হয়।
সার্ভাইকাল মিউকাস পদ্ধতি
সার্ভাইকাল মিউকাস মেথড যাঁরা অনুসরণ করেন তাঁদের প্রতি দিন নিজের জরায়ুমুখের মিউকাস বা আঠালো পদার্থ নিরীক্ষণ করতে হয়। চটচটে এই তরল পিরিয়ডের নানা পর্বে চরিত্র বদলায়।
পিরিয়ডের ঠিক পরেই এর মাত্রা থাকে অল্প। একে বলে ড্রাই। প্রোজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কম থাকায় এমন হয়। এ বার ডিম্বাণু যত পরিপক্ক হতে থাকে, হরমোনের মাত্রা বাড়ায়, মিউকাসের পরিমাণও বাড়ে। তা থেকেই বোঝা যায় ফার্টাইল বা গর্ভসঞ্চারের সময়। সে সময় দুই আঙুলে অনুভব করলে দেখবেন মিউকাস এতটাই আঠালো যে ছিন্ন হচ্ছে না। অনেকটা কাঁচা ডিমের সাদা অংশের মতো। এমন মিউকাস পাওয়ার শেষ দিনকে বলে পিক মিউকাস ডে। এর ৪ দিন পর থেকে মিউকাসের চরিত্র বদলায়। তখন তা প্রচণ্ড চটচটে, ঘন ও অস্বচ্ছ হয়ে ওঠে। এটা ইনফার্টাইল মিউকাস। ডিম্বাণু নিঃসরণের সঙ্গে সঙ্গে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে বলেই এমন হয়।
কী ভাবে মাপবেন?
দিনের বিভিন্ন সময়ে টয়লেট পেপারে এটি সংগ্রহ করতে হবে। নয়তো যোনিপথে আঙুল ঢুকিয়ে এর চরিত্র বুঝতে হবে। এই পদ্ধতির অসুবিধে হল এটি শিখতেই অনেক সময় লেগে যায়। যোনিপথে সংক্রমণও হতে পারে। শরীরের অভ্যন্তর ছুঁতেও কারও কারও অস্বস্তি হয়।